বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে সুযোগ চাই: ফারজানা রাব্বী
প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সংসদীয় আসনে হাল ধরতে চান তারই কনিষ্ঠ কন্যা ফারজানা রাব্বী বুবলী। ঢাকাপ্রকাশ-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তার বাবার সঙ্গে শেষ সময়ের স্মৃতি এবং সাঘাটা-ফুলছড়িবাসীর জন্য তার পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন। ফারজানা রাব্বী বুবলী ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। স্থানীয় রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় তিনি।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার বাবা প্রয়াত হওয়ার পর সাঘাটা-ফুলছড়ি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
ফারজানা রাব্বী বুবলী: আমার স্বপ্ন হলো যে পুরোটাই বাবার স্থানে থাকতে চাচ্ছি। বাবার সাঘাটা-ফুলছড়ির অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে চাই। সাঘাটা ফুলছড়ি গরিব এলাকা। ফুলছড়ি এলাকাটা বন্যা কবলিত। আমাদের ওখানে বাঁধ খুব প্রয়োজন ফুলছড়ি টিকিয়ে রাখতে হলে।
ঢাকাপ্রকাশ: গাইবান্ধা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে আরও প্রার্থী মনোনয়ন চেয়েছেন, সেখানে আপনি নিজেকে কতটা যোগ্য মনে করেন?
ফারজানা রাব্বী বুবলী: দেখেন সবকিছু দেওয়ার মালিক আল্লাহ। এরপর প্রধানমন্ত্রী। এ পর্যন্ত যতটুকু দেখেছি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যারা কাজ করেছেন তার সহকর্মীদের সব সময় মূল্যায়ন করেছেন। মনোনয়ন সবাই চাইতে পারে। তবে যখন থেকে মানুষ বুঝতে পেরেছে আমার বাবা সংকটাপন্ন, তখন থেকেই দেখেছি আমার প্রতি এলাকার সাধারণ মানুষের ভালোবাসা, আমার প্রতি তাদের আগ্রহ। তারা মনে করেন, মেয়ে হিসেবে আমিই হয়তো সুন্দরভাবে সেবাটা দিতে পারব। সাধারণ মানুষের কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নটা দেবেন বলে প্রত্যাশা রাখি।
ঢাকাপ্রকাশ: সাঘাটা-ফুলছড়িতে আপনার বাবার অভাবটা কি আপনি পূরণ করতে পারবেন?
ফারজানা রাব্বী বুবলী: আমাদের সংসদীয় আসনটি দুটো থানা নিয়ে। ফুলছড়ি এবং সাঘাটা। আমি ফুলছড়ির পুত্রবধু আর সাঘাটার মেয়ে। আমি যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে কোনো ঈদ ঢাকায় করি নাই পারত পক্ষে। এমনকি কোনো উৎসব আমরা ঢাকাতে করিনি। আমি গ্রামেই বেশিরভাগ থাকি। এমন কোনো জায়গা নাই যেখানে আমি যাইনি। সেটা বাবার সঙ্গে হোক আর একা হোক। আশাকরি, বাবার অসমাপ্ত কাজ করতে পারব এবং সেই চেষ্টাটা সব সময় করব।
ঢাকাপ্রকাশ: দল যদি মনোনয়ন না দেয়, তাহলে বিকল্প পরিকল্পনা আছে কি না?
ফারজানা রাব্বী বুবলী: না, আমার কোনো বিকল্প চিন্তা নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি যোগ্য মনে করে বাবার স্থানে আমাকে দেন আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু যদি না দেন, যদি আমি মনোনয়ন না পাই, তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব না। নৌকার জন্যই কাজ করব।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার বাবার এমন কোনো স্বপ্ন ছিল যা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি?
ফারজানা রাব্বী বুবলী: বাবার স্বপ্ন সাঘাটা-ফুলুছড়িতে পৌরসভার মতো একটা কিছু করা। সেভাবে উন্নয়ন করার স্বপ্ন দেখতেন। তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা ভেবে তাদের মাঝে থাকব।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার বাবার সঙ্গে শেষ স্মৃতি...
ফারজানা রাব্বী বুবলী: আমরা জানতাম না তার এত বড় রোগ হয়েছে। আব্বুর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি আছে। যখন তিনি আমেরিকা চলে যান আমি তার সঙ্গে গিয়েছিলাম, আমর স্বামী বিচারপতি সাহেবও গিয়েছিলেন। আমার আব্বু একা কোনো সময় একটা ঘরে থাকতে পারতেন না। তিনি সব সময় কাউকে না কাউকে নিয়ে থাকতেন। আমার মা মারা যাবার পর ২/৩ জনকে নিয়ে থাকতেন। যখন তাকে হাসপাতালে রেখে আসছিলাম তখন তিনি বার বার আমার হাত ধরে বলছিলেন, মা আমি একটা ঘরে একা একা থাকব কেমন করে। ওই কথাটা মাঝে মাঝে মনে হয়। ওই কথাটাই বার বার মনে হয় যে, আমার আব্বু আমাকে বলছে মা আমি একা থাকব কি করে। আমার বাবা আজকে আমার দুই ভাইয়ের মাঝখানে শুয়ে আছেন। ওই কথাটা প্রত্যেক মুহূর্তেই মনে হচ্ছে আসলে একা কীভাবে আছেন। তিনি ভয় পেতেন খুব। রুমের ভেতর লাইট বন্ধ করে ঘুমাতে দেখিনি কখনো ।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার বাবার কোনো ইচ্ছের কথা কী বলে গিয়েছেন?
ফারজানা রাব্বী বুবলী: আমি ছোট থেকেই রাজনীতি দেখে বড় হয়েছি। আমি দেখেছি আমার বাবা যেভাবে ফুলছড়ি-সাঘাটার মানুষের জন্য সময়টা দিতেন। তিনি কখনো তার পরিবারকেও ওইভাবে সময় দিতেন না। সাঘাটা-ফুলছড়ি নিয়েই তার সব জল্পনা-কল্পনা ছিল। তার ইচ্ছা একটাই তার পরিবার এবং সাঘাটা ফুলছড়ির মানুষ যেন ভালো থাকে। বাবা সব সময় বলতেন তোমরা তিনটা বোন, তার মধ্যে তুমি একজন যে সবাইকে নিয়ে থাকতে পছন্দ কর। আমার মতো। বাবা সব সময় তার পরিবার তার ‘ভাগি গোষ্ঠী’ তাদের নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন। আমিও বাবার মতো হয়েছি। আমরা বাবা যেমন সবাইকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন আমিও সেরকম সবাইকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করি। সবাইকে নিয়ে থাকার অভ্যাসটা বাবার কাছ থেকে পেয়েছি। বাবা চেয়েছেন তিনি যেভাবে সাঘাটা-ফুলছড়ি মানুষের সেবা দিয়ে গেছেন, আমরাও যেন তার হয়ে সেই সেবাটা দিতে পারি। বাবার ইচ্ছে ছিল আমি যেন তার মতো একজন রাজনীতিবিদ হই। তিনি মনেই করেননি তার এতো বড় একটা রোগ আছে যে, তিনি আমাকে ওই সময়টুকু দিতে পারবেন না। ২০১৮ সালে যখন নির্বাচন হয় তখনই আমার নামটি তিনি ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন। তখন আমি এবং আমার স্বামী বলেছিলাম আপনি আরও দুই টার্ম পাবেন। আপনার মতো করে চলেন। আমরা আপনার পেছনে আছি।
আব্বুর ইচ্ছা ছিল আমাকে তিনি রাজনীতিতে ঢুকাবে। রাজনীতিতে তিনি আমাকে নেবে কিন্তু ওই টুকু সময় এই দেড় বছরে আমাকে দিতে পারেননি। সময় পেলে হয়তো আমাকে গড়ে দিতেন। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম যে ক্যান্সার হয়েছে, এটা ঠিক হওয়ার না। আমার ছোট দুটো বাচ্চা। আমি ওদের দিকে তাকাতাম না, বাবার কাছে সময় দিয়েছি। যখন বুঝতে পেরেছেন আর দেশে ফিরতে পারবেন না তখন তিনি বলতেন, মা তুমি অনেক উথাল পাতাল দেখবা অনেক কিছু তোমাকে সহ্য করতে হবে কিন্তু ধর্য্য ধরে নৌকার বৈঠা ধরে থাকতে হবে। এমনো হতে পারে বৈঠা তোমার হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে। সেই বৈঠা আবার তোমার কাছে নিতে হবে।
ঢাকাপ্রকাশ: দীর্ঘ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ফারজানা রাব্বী বুবলী: আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রসঙ্গত, গত ২২ জুলাই দিনগত রাত (বাংলাদেশ সময়) ২ টায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই ওয়েস্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি দীর্ঘদিন ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর পর ২৫ জুলাই তার মরদেহ দেশে আনা হয় এবং নিজ গ্রামে দুই পুত্রের কবরের মাঝে তাকে দাফন করা হয়।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মারা যাওয়ার পর গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়েছে গত ২৩ জুলাই। এদিন থেকে পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে উপ-নির্বাচনটি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধতা রয়েছে। গত ২৪ জুলাই সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম আসন শূন্য ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করেন।
এনএইচবি/এমএমএ/