গাজায় আগ্রাসন: বিচ্ছিন্ন হচ্ছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রও পিছু হটছে!
ছবি: সংগৃহীত
১৯৫৫ সালে মিসরের কাছ থেকে গাজা উপত্যকা দখল করার পরিকল্পনা করেন ইসরায়েলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড বেন-গুরিয়ন। দখলদারিত্ব চালালে জাতিসংঘে বিষয়টি তীব্রভাবে সমালোচিত হবে বলেও সে সময় তাঁকে সতর্ক করে বলা হয়। তখন তিনি খোদ জাতিসংঘকে চরমভাবে উপহাস করে ‘উম-শুম’ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। এর অর্থ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে গোনায় ধরে না ইসরায়েল। পরে এই শব্দটিই হয়ে ওঠে দেশটির ইচ্ছার প্রতীক।
এরপর প্রায় সাত দশক পর সেই ইসরায়েলই এখন গাজায় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কারণে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) এবং অধিকাংশ দেশের নিন্দার মুখোমুখি হয়েছে। বৈশ্বিক চাপের কারণে দখলদার ইসরায়েল ও সরকারের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখন চরমভাবে বিচ্ছিন্ন। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের।
গত চার মাসের বর্বর হামলায় ৩০ হাজারের মতো ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। যদিও এই গণহত্যা ও গোটা গাজাকে ধ্বংসের নগরীতে পরিণত করার অস্ত্র, গোলা, রসদের বেশির ভাগই দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ৭ অক্টোবর হামলার পর থেকেই টানা সমর্থন ও ইসরায়েলকে রক্ষায় সব কিছুই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিবাদ, নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ হত্যায় মানবাধিকার লঙ্ঘনে চরম সমালোচনার জেরে মুখ রক্ষায় ইসরায়েলকে সমর্থনে এখন কিছুটা হলেও থমকে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর ফলে কয়েক যুগ পর এবারই প্রথম ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কে বিরল টানাপোড়েনের মুখোমুখি হচ্ছে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, বাইডেন প্রশাসন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি খসড়া প্রস্তাবও তুলতে যাচ্ছে। যেখানে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি আহ্বানের পাশাপাশি রাফায় স্থল আক্রমণ না চালানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসরায়েলে মার্কিন সাবেক রাষ্ট্রদূত মার্টিন এস ইন্ডিক বলেছেন, ‘এটি ইসরায়েলি সরকারের জন্য বড় সমস্যা। কারণ, এত দিন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষায় বেঁচে গেছে। কিন্তু এখন বাইডেন ইঙ্গিত দিচ্ছেন, নেতানিয়াহুকে আর আগের মতো সুরক্ষা দেবেন না।’
বাইডেনের এমন পরিবর্তনের কারণ হিসেবে ইন্ডিক বলেন, ‘আন্তর্জাতিক নজিরবিহীন বিক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ। যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে।’
ইসরায়েলের কট্টর মিত্র যুক্তরাষ্ট্র, যুগ যুগ ধরে এটা প্রমাণিত। কারণ, ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলকে রক্ষায় ৪০ বারের বেশি ভেটো ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে গাজায় বর্বরতা শুরুর পর থেকেই তিনবার ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যাতে করে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি না হয়।
যুক্তরাষ্ট্র সরে দাঁড়ালে হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইসরায়েল চাপে পড়বে বলে মনে করেন খোদ ইসরায়েলিরাই। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত মাইকেল বি ওরেন বলেন, ‘ইসরায়েলিরা উদ্বিগ্ন এ কারণে, জাতিসংঘসহ সব সংস্থা আমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে।’ ওরেন স্বীকার করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরে গেলে গাজায় অস্ত্রের সংকটে পড়বে ইসরায়েল।’
এদিকে, ব্রিটিশ কার্গো জাহাজে আবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। এতে জাহাজটিতে আগুন ধরে গেলে অন্তত একজন আহত হন। মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, এডেন উপসাগরে পালাউয়ের পতাকাবাহী এমভি আইল্যান্ডারে গত বৃহস্পতিবার সকালে এ হামলা হয়। জাহাজটি মিসরের উদ্দেশে যাচ্ছিল।
আরেকদিকে, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখলদারিত্বের আইনি পরিণতি সম্পর্কে বাধ্যতামূলক মতামত জারি করতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুরোধের পর অর্ধশতাধিক দেশের যুক্তিতর্ক শুনছে আইসিজে; সেখানে অনেক দেশ দখলদারিত্ব অবৈধ বলে যুক্তি দিয়েছে।