তাজা সবজির যোগান নিশ্চিতে নীতিমালা শক্তিশালী করা জরুরি
হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার এবং ডায়বেটিসের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শরীরচর্চা এবং তাজা-সবজির যোগান নিশ্চিতে আইন ও নীতিমালা শক্তিশালী করা জরুরি। অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং অপর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম বর্তমান বিশ্বে স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। অসংক্রামক রোগ দেশের মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ এবং যার ২২ শতাংশ অকাল মৃত্যু। এ সকল রোগ প্রতিরোধ না করা হলে, দেশের সার্বিক অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য সেক্টরের বাইরে যারা আছেন তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) লেকশোর হোটেল সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-সিএলপিএ, আইডিএলও এবং সিটিজেন নেটওয়ার্ক আয়োজিত অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে শরীরচর্চা, কায়িক পরিশ্রম এবং নগরে তাজা শাক-সবজি যোগান নিশ্চিতে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর অধ্যাপক আ ফ ম সারোয়ার, রিসার্চ কনসালট্যান্স এবং সৈয়দ মাহবুবুল আলম, সেক্রেটারী, সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্স-সিএলপিএ।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রবন্ধে বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান আইন সম্পর্কিত গবেষণার আলোকে বলেন, শরীরচর্চার খেলার মাঠ এবং উম্মুক্ত স্থান নিশ্চিতে দেশে প্রায় ১৬টির মত আইন রয়েছে। এছাড়া অস্বাস্থ্য খাদ্য নিয়ন্ত্রণে ৬ টি এবং স্বাস্থ্যকর তাজা খাদ্য নিশ্চিতে ১১ টি মন্ত্রণালয়ের ৩০টির বেশি আইন জড়িত। তবে এ সকল আইনগুলো প্রয়োগে স্বাস্থ্যের দিকগুলো গুরুত্ব পায় না। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলো এগিয়ে আসলেই এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন স্থানীয় পর্যায়ে কায়িক পরিশ্রমের পরিবেশ সৃষ্টিতে স্থানীয় সরকার কর্তৃক পৃথক নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরী এবং স্থানীয় সরকার আইনে কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চার পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়টি নিশ্চিতে আইন সুনির্দিষ্ট বিধান যুক্ত করা প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। নগর পরিকল্পনায় হাঁটার জন্য ওয়ার্কওয়ে, পথচারীর নিরাপত্তা ও অগ্রাধিকার প্রদান, সাইকেলের জন্য লেন তৈরি, পার্ক, উম্মুক্ত স্থান তৈরি এবং সকলের অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা। শিক্ষা কার্যক্রমে শরীরচর্চা বাধ্যতামূলক করা, শরীরচর্চার জন্য শিক্ষক এবং উপকরণ নিশ্চিত করার মাধ্যমে শরীরচর্চা বৃদ্ধি করা যায়। মাঠ, পার্ক ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষন আইন ২০০০ এবং স্থানীয় সরকারের আইনসমূহের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতায়নের মাধ্যমে নগরে কায়িক পরিশ্রমের সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব।
বক্তারা বলেন, মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও আমাদের পুষ্টি ঘাটতির অন্যতম কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্যসম্মত ও বৈচিত্রপূর্ণ খাবার গ্রহণে উৎসাহী করতে পারিনি। গ্রামের নাগরিকদের বসত বাড়ীতে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহী করা জরুরি। নগর কৃষির লক্ষ্যে নীতিনির্ধারকদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নগরে সবজির চাহিদ পূরণে ছাদ কৃষি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, এদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রতিবছর খেলাধূলার জন্য বাজেট বরাদ্ধ, পুকুর গুলো সংরক্ষণ এবং সাঁতার শিখানোর সুযোগ সৃষ্টি, মার্শাল আর্ট শিখানোর জন্য বিনামূল্যে স্থান বরাদ্ধ, হাঁটার জন্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের উপযোগী ফুটপাত এবং সাইকেল লেন প্রদান, নদী, দীঘীর পাড়ে পার্ক, উম্মুক্ত স্থান তৈরি করে বিনোদনের স্থান তৈরি, শহরের ছাদে সবজি এবং ঔষধী গাছ লাগানোতে কর মওকুফসহ উৎসাহী দেয়া, জনস্বাস্থ্য বিষয়ক একটি পূর্ণাঙ্গ আইন প্রণয়ন স্বাস্থ্য উন্নয়ন হেলথ ডেভলাপমেন্ট সারচার্জের অর্থ দিয়ে হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন করা, শরীরচর্চার অবকাঠামো বিষয়ে বিষয়ে একটি জাতীয় গাইনলাইন প্রণয়ন এবং বাজেট বরাদ্ধ প্রদানের সুপারিশ করা হয়।
সভায় স্থপতি ইকবাল হাবিব, যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, পরিকল্পনাবিদ এস এম মেহেদী আহছান, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসমি, চীফ টাউন প্ল্যানার, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, মীর আলমগীর হোসেইন, উপ-সচিব, রেলপথ মন্ত্রণালয়, ড. এ কে এম শামীম আলম, প্রকল্প পরিচালক, ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষক সেবা কেন্দ্র স্থাপন, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, ড. রোমান হক, নির্বাহী পরিচালক, আর্ক ফাউন্ডেশন, গাজী কামরুল হুদা সেলিম, সাবেক মেয়র, মানিকগঞ্জ, সাবেক আহবায়ক মেয়র এল্যায়েন্স ফর হেলদি সিটি, জনাব ফারুক হোসন, মেয়র, হরিনাকুন্ড পৌরসভা, জনাব নজরুল ইসলাম মন্ডল, মেয়র, গোয়ালন্দ পৌরসভা, মো. গোলাম কবির, মেয়র, ধামরাই পৌরসভা, সভায় সভাপতিত্ব করেন আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন, আমিনুল ইসলাম, কর্মসূচী প্রধান, সিএলপিএ।
এসএম/এএস