স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিতে যারা রয়েছেন !
ছবি:সংগৃহীত
বিশ্বে প্রতি আটজনের মধ্যে একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে নারীরা যেসব ক্যানসারে আক্রান্ত হন এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে স্তন ক্যানসার। নারী ক্যানসার রোগীদের ১৯ শতাংশ স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসির হিসাবে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন।
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদের বেশি এ-সম্পর্কে সচেতনতা খুব জরুরি। ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত নারীদের ৮০ ভাগেরই বয়স ৫০-এর ওপরে। সেই সঙ্গে যাঁদের পরিবারে কারও স্তন ক্যানসার রয়েছে, তাঁদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এ ছাড়া স্থূলতা, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ, অ্যালকোহল পান, হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি, ৩৫ বছরের পর প্রথম গর্ভ ধারণ—এগুলোও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
স্তন ক্যানসারের উপসর্গ
- স্তনের আকার পরিবর্তন হওয়া।
- স্তনে বা বগলের নিচে শক্ত ও ব্যথাবিহীন টিউমার হওয়া।
- চামড়ার পরিবর্তন, যেমন চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া, গর্ত হওয়া, লাল হওয়া, গরম হওয়া অথবা কমলার খোসার প্রকৃতি ধারণ করা।
- স্তনের বোঁটায় কোনো পরিবর্তন, যেমন বোঁটা ভেতর দিকে
চলে যাওয়া, বোঁটা দিয়ে অস্বাভাবিক রক্ত বা পুঁজজাতীয় পদার্থ বের হওয়া।
স্তন ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা যায় তাহলে পুরোপুরি এটি নিরাময় করা সম্ভব। আর সে জন্য বাড়িতে বসেই নিজের স্তন পরীক্ষা করা খুবই জরুরি।
স্থূলতা, অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ, অ্যালকোহল পান, হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি, ৩৫ বছরের পর প্রথম গর্ভধারণ—এগুলোও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করতে হবে।
যেভাবে পরীক্ষা করবেন
- স্তন পরীক্ষার জন্য প্রথমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পর্যাপ্ত আলোয় নিজের শরীরের দিকে লক্ষ করতে হবে কোনো অসামঞ্জস্য আছে কি না।
- এরপর দুই হাত কোমরে চাপ দিয়ে দাঁড়াতে হবে, যাতে বুকের মাংসপেশি টান টান হয়। স্তনবৃন্তে হালকা করে একটু চাপ দিয়ে দেখতে হবে কোনো রস বের হয় কি না।
- লক্ষ করতে হবে স্তনের আকার, আকৃতি ও রঙের কোনো পরিবর্তন আছে কি না। দুই স্তনের কোনো তারতম্য, স্তনের ত্বকের কোনো পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত ভেতরে দেবে গেছে কি না, বৃন্তসংলগ্ন এলাকায় ত্বকের অস্বাভাবিকতা আছে কি না।
- এরপর হাত দিয়ে স্তন পরীক্ষা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডান হাত দিয়ে বাঁ স্তন এবং বাঁ হাত দিয়ে ডান স্তন পরীক্ষা করতে হবে। তিন আঙুল দিয়ে প্রথমে একটু হালকা, পরে ভারী এবং এরপর আরও চাপ দিয়ে স্তন সীমানার পুরো এলাকা অনুভব করতে হবে। বিছানায় শুয়ে অথবা দাঁড়িয়ে এই পরীক্ষা করতে হবে। কোনো অসামঞ্জস্য অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চিকিৎসা
স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের পর্যায় ও বিস্তৃতির ওপর। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোনাল থেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।
ডা. উম্মে নুসরাত আরা, শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা