সরকারি হাসপাতালের মেশিন কেন নষ্ট থাকবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের ৪৯৬টি উপজেলায় ৪৯৬টি সরকারি উপজেলা হাসপাতাল আছে, ৬৪টি জেলায় বড় বড় হাসপাতাল আছে, ইউনিয়ন পর্যায়েও হাসপাতাল আছে, তবুও মানুষকে ছোট ছোট প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। সরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন রোগের টেস্টের জন্য মেশিন দেওয়া হয়েছে, অথচ বেশিরভাগ মেশিন নষ্ট হয়ে বছরের পর বছর পড়ে আছে। সরকারি টাকায় কেনা কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে, আর বাইরের ছোট ছোট ক্লিনিকে ঠিকই সব টেস্ট হচ্ছে। কই বাইরের প্রাইভেট ক্লিনিল-হাসপাতালের যন্ত্রপাতি তো নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে না। তাহলে সরকারি হাসপাতালের মেশিন কেন নষ্ট থাকবে? এগুলো আর চলবে না।
শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে দিনাজপুরে এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কদের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি বিষয়ক বিভাগীয় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
জাহিদ মালেক বলেন, মানুষের কষ্টের আয়ের অনেক টাকা অপচয় হচ্ছে। অথচ সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে হাজারটা হাসপাতাল নির্মাণ করছে, অবকাঠামো বৃদ্ধি করছে, হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স নিয়োগ দিচ্ছে। এই অনিয়ম বন্ধ করতেই আমরা মাঠে নেমেছি। গতকাল রংপুর হাসপাতালে দেখেছি, সাড়ে ৫০০ যন্ত্রপাতির সাড়ে ৪০০-ই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অধিকাংশ হাসপাতালেরই প্রায় একই চিত্র। তাহলে ওই সব হাসপাতালে মানুষ কী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে? এভাবে আর চলতে পারবে না। কোথাও অনিয়ম ধরা পড়লে ওই প্রতিষ্ঠান যারা চালায় তারা তার জন্য সমস্যায় পড়বে। কী সমস্যায় পড়বে সেটা তারা পরে বুঝতে পারবে।
তিনি বলেন, আমরা মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে, মানুষকে সুস্থ করতে আপনাদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছি। আগামীতে সারা দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালকে ৫০০ বেডের এবং উপজেলা হাসপাতালকে ১০০ বেডে উত্তীর্ণ করা হবে। কিন্তু মানুষকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেবার কাজটা আপনাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্ব পালনে দেশপ্রেম থাকতে হবে আপনাদের।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনায় কত ভালো কাজ করেছেন আপনারা, এখনো চেষ্টা করলেই পারবেন। প্রাইভেট ক্লিনিক, ছোট ছোট প্রাইভেট হাসপাতাল মানুষের কাছ থেকে বেশি টাকা নেবার বিনিময়ে যদি সেবা দিতে পারে, নিয়মিত টেস্ট করতে পারে, আপনারা কয়েকগুণ বেশি সুবিধাসম্পন্ন ও বড় হাসপাতালের সুবিধা নিয়েও সাধারণ মানুষকে সরকারি টাকায় ভালো সেবা দেবেন না তা আর হবে না। এখন থেকে যাকে যেখানে অনিয়ম করতে দেখা হবে তার বিরুদ্ধেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সভায় উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। কার হাসপাতালে কয়টি যন্ত্রপাতি আছে, কয়টি ভালো, কয়টি নষ্ট, লোকবল কত আছে, কতজন মানুষকে দৈনিক সেবা দিচ্ছে, আশপাশে কয়টি করে প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতাল আছে এগুলো জিজ্ঞেস করেন।
উপস্থিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের পদোন্নতি বৃদ্ধির দাবি জানালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমার সময়ে আপনারা যত প্রমোশন পেয়েছেন, গত ১৫ বছরে সেই প্রমোশন হয়নি। আগামী কয়েক মাসে যত প্রমোশন দেওয়া হবে তা গত কয়েক বছরের সমান হবে। কিন্তু মাঠে আমরা কাজ দেখতে চাই। আমরা চাই আপনারা জনগণের চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি করবেন, হাসপাতাল ঝকঝকে পরিষ্কার রাখবেন, রোগীদের সঙ্গে সম্মান দিয়ে কথা বলবেন, রোগীরা যেন হাসিমুখে হাসপাতাল থেকে সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় সেটা আপনিই নিশ্চিত করবেন।
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১৫-২০ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সরাসরি মাঠে নেমে পড়েছেন। গত তিন দিনে বগুড়া, রংপুর ও আজ দিনাজপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে নিজে গিয়ে রোগীদের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলছেন।
তিনি বলেন, এগুলো লোক দেখানোর কাজ নয়। এগুলো পরিবর্তনের অঙ্গীকার থেকে করা কাজ। আপনারা যদি এখন জেগে না উঠেন তাহলে আর কবে উঠবেন। একটু সজাগ হলেই আপনারা দেশ সেবায় বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবেন। এই মহৎ কাজ থেকে আর কেউ বিরত থাকবেন না। আজ থেকেই মানুষের সেবায় চিকিৎসার মান বৃদ্ধিতে পরিকল্পনা করুন, কাজ শুরু করুন।
এর আগে সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিনাজপুরের মা ও শিশু হাসপাতাল, এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন ও সেখানে কর্মরত স্বাস্থ্য খাতের কর্মকর্তা এবং চিকিৎসারত নানা ওয়ার্ডের রোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন।
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক শামিউল ইসলাম সাদি, স্বাস্থ্য অর্থনৈতিক বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বশির আহমেদ, রংপুর বিভাগীয় হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক হানিফ, দিনাজপুর এম রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, হাসপাতালের অধ্যক্ষ, রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, চিকিৎসকরা।
এনএইচবি/এসজি