খুশি খুব খুশি
ভালোভাবে চলতে ফিরতে পারে না বলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসনের ছাত্রী ফাহিমা আক্তার খুশিকে সাইকেল কিনে দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। লিখেছেন ও ছবি তুলেছেন প্রতিনিধি তানভীর তুষার
মেয়েটির নাম ফাহিমা আক্তার খুশি। অত্যন্ত মেধাবী। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ও প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি রাজশাহীতে পড়েন। খুব ভালো বিষয়ে-লোকপ্রশাসন। করোনাভাইরাসের আক্রমণে কভিড-১৯ মহামারি রোগে তাদের ক্যাম্পাস অনেক দিন বন্ধ ছিল। আসতে পারেননি, প্রিয় ভুবন ও মনের মানুষদের সঙ্গে মিশতে পারেননি। লেখাপড়া হয়নি তার। তিনি ভালোভাবে হাঁটতে পারেন না। বাম পায়ে সমস্যা আছে। তাই লেখাপড়া ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই। আর রাজশাহীর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে কে আর পিছিয়ে থাকতে চান? উচ্চশিক্ষিত হলে তার জীবনটি পুরোপুরি বদলে যাবে। এই সত্য মেয়ে হিসেবে, একজন প্রতিবন্ধীতায় আক্রান্ত নারী হিসেবে তার চেয়ে বেশি কে জানেন? তবে ব্যথা, বেদনার দিন তিনি গিয়েছেন ভুলে। তাকে সত্যিকারের খুশি করে দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। এই দিনটি এসেছিল ভিসি স্যার, তার প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার জীবনের আনন্দ নিয়ে। এমন কজনই বা করেন? তবে খুশির অনেক বুদ্ধি আছে। খেটেখুটে ও সাহস করে তিনি উপাচার্য স্যারের বরাবরে একটি আবেদন করেছিলেন। তাতে লেখা ছিল, আমার চলতে, ফিরতে; বিরাট ক্যাম্পাসে বেড়াতে ও ক্লাসে যেতে খুব কষ্ট হয়। একটি সাইকেল দিলে খুব উপকার হয়। মাননীয় ভিসি স্যারের কাছে আমি এই আবেদন জানাই। সেটি পড়ে মানবিক উপাচায এতই খুশি হয়েছেন যে, তিনি আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে অনেক দামী একটি সাইকেল কিনে দিয়েছেন ফাহিমাকে। তার এই ছাত্রীটি তেমন বড় নয় আকারে। ফলে তার উপযোগী সাইকেল কিনতে প্রশাসনের অনেককেই উপস্থিত থাকতে হয়েছে। আর খুশিকে খুশি করে দিয়ে সাইকেল উপহার দিয়েছেন তারা ২৮ ফেব্রুয়ারি রোববার। ক্যাম্পাসের বয়স তখন মোটে সাতদিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ শহীদ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবন (জাতীয় চার নেতার অন্যতম, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) প্রশাসন ভবনের সামনে তিনি সাইকেলটি উপহার দিলেন খুব ভালোভাবে। এসময় বলেছেন অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার, ‘খুশির আবেদনের প্রেক্ষিতে সাইকেলটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কিনে দেওয়া হলো।’ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার তখন আরো বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো ছাত্র বা ছাত্রীর এমন কোনো অসুবিধা থাকলে ব্যক্তিগত বা প্রশাসন যেকোনোভাবে হোক আমি সাহায্য করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’ তখন তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ব্যক্তিরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই উপ-উপাচায অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-আলম, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক, জনসংযোগ বিভাগের প্রশাসক এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম তারেক নূর, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ( তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. বাবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। আরো ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরপর উপাচার্য স্যার বলেছেন, ‘আমার উদ্যোগে ও টাকায় খুশিকে সাইকেল কিনে দেওয়া হয়েছে।' তার কাছ থেকে সাইকেল পেয়ে খুব খুশি খুশি, ‘এখন আমার খুব ভালো লাগছে। আজ থেকে জীবনটি বদলে গেল, গতিময় হলো। আর চলাফেরাতে তেমন কোনো কষ্ট হবে না। এর কারণ হলো এটি ইলেকট্রিক সাইকেল। বিভাগে ক্লাস করতে ও অন্যান্য কাজে সহজে যেতে পারবো আমি।’ তার কথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক খুব খুশি হয়েছেন।
ওএস।