পলাশের সংগ্রহে আছে ৩৪৫ প্রজাতির গাছ
শখের বসে অনেকে অনেক কিছুই সংগ্রহ করে রাখেন। ডাক টিকিট, ধাতব মুদ্রা কিংবা পুরনো আমলের কোনো নিদর্শন। কিন্তু দুর্লভ বৃক্ষ সংগ্রহ করে রাখার কথা সচোরাচর শোনা যায় না। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার এক যুবক মাহবুব পলাশ। তিনি গড়ে তুলেছেন বিলুপ্ত প্রায় ও দুর্লভ গাছের বাগান। তার নিজের গড়ে তোলা বাগানে রয়েছে প্রায় ৩৪৫ প্রজাতির ৫ হাজার গাছ।
হৈমন্তি, ঝুমকোবাদি, নীল পারুল, কন্যারী, গোলপাতা ও নোনা পানীর সুন্দরী গাছ রয়েছে তার বাগানে। সাধারণত উপকুলের নোনা পানিতে জন্মায় সুন্দরী গাছ। সেই গাছও তিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন উত্তরাঞ্চলের দোঁআশ মাটিতে। এমনকি পাহাড়ি অঞ্চলের একাধিক গাছও তিনি টিকিয়ে রেখেছেন সমতল মাটিতে। বৃষ্টির মধ্যে গাছ সংগ্রহ করতে গিয়ে বজ্রপাতে বাকরুদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। এমনকি সুন্দরবনে গাছের সন্ধানে গিয়ে হাতির আক্রমনের শিকারও হয়েছিলেন। তবুও গাছের নেশা ছাড়েনি তার। শুধ গাছ সংগ্রহই করেন না এলাকায় কারো মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে পলাশ সেই বাড়িতে তার নামে গাছের চারা রোপন করেন।
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট শেখের পাড়া গ্রামের যুবক মাহবুব পলাশ। পেশায় একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। বসবাস করেন রাজশাহী নগরীতে। তিনি কামারখন্দে ৬ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন শখের বাগান। এতে ৩৪৫ প্রজাতির ৫ হাজারের বেশি ফল, ফুল, ঔষুধি, কাঠ জাতীয় এবং বনের বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪৫ টি প্রজাতি মহাবিপন্ন।
মাহবুব পলাশ বলেন, ২০০৩ সালে এলাকায় ইউক্যালিপটাস গাছের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেলে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এই বিদেশি গাছ আমাদের দেশের পরিবেশের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। চারদিকে সবাই ইউক্যালিপটাস গাছ লাগালেও আমি আমার বাড়ির আশপাশে দেশীয় জাতের ফলের গাছ লাগাই। প্রথম দিকে আমাকে গাছের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেন রাজশাহী বন কর্মকর্তা আবুল কাশেম। তিনি আমাকে সরকারি দামে ৭০০ সেগুন গাছ দিয়েছিলেন এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন বন কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে গাছের চারা সংগ্রহে সহযোগীতা করেন। এরপর থেকে তিনি গাছের চারা সংগ্রহে ছুটে বেড়ান বিভিন্ন জেলায়। গড়ে তোলেন তার শখের বাগান। এখন তার বাগানে সুন্দর বনের নোনা পানির সুন্দরী গাছ সহ আরও ১০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। এছাড়াও বিরল ও মহাবিপন্ন ৭৫ ধরনের ফুল গাছ রয়েছে। বিভিন্ন প্রজাতির ২৬ ধরনের ফুল গাছ রয়েছে তার বাগানে। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে তিনি রাজশাহী থেকে ছুটে যান সিরাজগঞ্জে। তিনি নিজে বাগানের পরিচর্যা করেন। তার অবর্তমানে তার এবং একজন শ্রমিক রেখেছেন সার্বক্ষনিক পরিচর্যা করার জন্য।
তার বাগানে রয়েছে সিঁদুর গাছ। এই গাছ থেকে সিঁথিতে দেওয়া সিঁদুর তৈরি করা হয়। রয়েছে চমৎকার স্বাদের পান মশলা গাছ। বুদ্ধ নারকেল গাছের নামের এক ধরনের ফলদ গাছ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে তেলি গর্জন, ধলিগর্জন ও শেতগর্জন গাছ। এদের মধ্যে শেতগর্জন উপকূলীয় এলাকা ছাড়া হয় না। রয়েছে গলায় দেওয়া যজ্ঞপ্রবীত তৈরির রুদ্রলক্ষ লাছ।
পলাশের সংগ্রহে থাকা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রজাতির ফুল গাছ হলো- ঝুমকোবাদী, নীল পারুল, কন্যারী, নীল মণিলতা। কাঠ ও অন্যান্য গাছের মধ্যে আছে গুটগুটিয়া, মাল্লাম, বান্দরহোলা, কুসুম, মণিরাজ, কুঠিশর, কাটাবাজনা, ডোলসমুদ্র, চাপালিশ, লোহা ও তেলসুর। সুন্দর বনের নোনা পানির গাছের মধ্যে রয়েছে সুন্দরী, গোলপাতা, কৃপা, খোলসা, কাকড়া. ঈশুর, উড়া, গড়ন, পাইন কেওড়া।