মাগুরার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক শেখ শামসুর রহমান
নাম তার শেখ শামসুর রহমান। জন্মেছিলেন ১৯৩৩ সালে। মাগুরার শালিখা উপজেলার ঘোষগাতি গ্রামে, একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। তার বাবা হাবিবুর রহমান ছিলেন একজন কবি। তবে তার ছেলেটির লেখাপড়ার প্রতি খুব আগ্রহ ছিল। উচ্চতর লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরির খেঁজে ছোটেননি। ফিরে এসেছেন নিজের জন্মস্থানে।
মাগুরার শালিখার পুলুম গোলাম ছারোয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতার মহান পেশায় যোগ দিলেন শেখ শামসুর রহমান। ১৯৫৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পযন্ত টানা প্রধান শিক্ষকের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। গড়েছেন বিদ্যালয়, হাজার, হাজার শিক্ষাথী। অজপাড়াগায়ের একটি সাধারণ বিদ্যালয়কে মাগুরার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন বহু কষ্ট, অনেক শ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে।
শেখ শামসুর রহমান ছিলেন প্রখর ব্যক্তিত্বের অধিকারী একজন আলোকবতিকা। অত্যন্ত সৎ ও ন্যায়পরায়ন হিসেবে সারা দেশেই তার সুনাম ছড়িয়ে গিয়েছিল। ছোট, বড় নিবিশেষে সবার জন্য আদশ ছিলেন তিনি। এই মহান মানুষটিকে অনুসরণ করে তার ছাত্র, ছাত্রীরা দেশ, বিদেশে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণ করতে গিয়েছেন। ভালোভাবে লেখাপড়া শিখে তাদের অনেকেই সরকারী ও বেসরকারী ভালো, ভালো প্রতিষ্ঠানে ভালো পদে সুনামের সঙ্গে চাকরি করছেন।
শেখ শামসুর রহমানকে সবাই মনে রাখেন সবসময়-একটি প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যে বিদ্যাশিক্ষার আলো ছড়ানোর মহৎ কাজটি একা হাতে বছরের পর বছর করে দিয়েছেন তিনি। পরে তার অনেক অনুসারী তৈরি হয়েছেন। তারা কাজ করছেন নানা জায়গাতেও। কয়েকবার বিদ্যালয়ের অসাধারণ কীতির জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ‘মাগুরা জেলার সেরা প্রধান শিক্ষক’র সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেছেন। সেই স্বীকৃতি লাভ করেছে তার প্রাণের চেয়ে প্রিয় ‘পুলুম গোলাম ছারোয়ার মাধ্যমিক বিদ্যালয়’।
তবে প্রিয় শিক্ষকেরও অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিল, শরীরে নানা রোগ বাঁধা বেসেছে। ফলে উন্নত চিকিৎসার জন্য না চাইলেও ঢাকায় আসতে হয়েছে তাকে। ভতি হয়েছিলেন ঢাকার বাংলাদেশ স্পেশালাইজ হাসপাতালে। তবে চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। সবাইকে কাঁদিয়ে, বিদ্যালয়টিকে একা ফেলে রেখে, ছাত্র, ছাত্রী, সহকমী শিক্ষকদের ফেলে রেখে চলে গিয়েছেন শেখ শামসুর রহমান। চলে গিয়েছেন তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির মহান ভাষা আন্দোলনের দিনে ভোরে, তখন সাতটা বাজে। বাংলাকে ভাষার জন্য জীবন দান করা ভাষা শহীদদের দিনে। অনেক ছাত্র, ছাত্রীর অক্ষরজ্ঞান, ভাষা ও বিদ্যা শিক্ষার অনুরাগ গড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তাদের জীবনকে বদলে দিয়েছেন।
২১ ফেব্রুয়ারিই সকাল ১০ টায় ঢাকার মোহাম্মদপুরে পরিবার ও অনুরাগীরা প্রিয় শিক্ষকের প্রথম জানাজার নামাজ পড়েছেন। এরপর তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মাগুরার প্রিয় উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে শত, শত মানুষ শেষবারের মতো স্যারের সঙ্গে দেখা করেছেন। জীবনের শেষবার তার মুখটি দেখেছেন। কান্নায় ভারী হয়েছে আকাশ, বাতাস। তারা তার জানাজা পড়েছেন দ্বিতীয়বার। এরপর ঘোষগাতির গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে মাগুরার আদশ শিক্ষক শেখ শামসুর রহমানকে।
মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী রুবি রহমান ও চারটি সুপ্রতিষ্ঠিত সন্তান রেখে গিয়েছেন।
তার অন্যতম ছাত্র ইবাদত হোসেন দীপ্ত বলেছেন এই মহান শিক্ষকের কথা, ‘তিনি আমার জীবনের অন্যতম আদশ, আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সারা জীবন আমি তার আদশ অনুসারে চলি।’
ওএস।