পাহাড়ে উলুফুলে জীবিকা নির্বাহ
উলু ফুল বা ঝাড়ু ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
পাহাড় থেকে ঝাড়ু ফুল কেটে বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে আসে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন। এরপর বাজার থেকে স্থানীয় গ্রামবাসী ব্যবহারের জন্য সেগুলো কিনে নেয়। অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীরাও স্থানীয় বাজারগুলো থেকে ঝাড়ু ফুল কিনে মজুদ করেন।
শীত মৌসুমে ঝাড়ু ফুল উৎপাদিত হয়। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়। চাষাবাদ করতে শুধু ঝোপঝাড় পরিষ্কার ও ফাঁকা স্থানগুলোতে এর চারা লাগিয়ে দিলেই হয়। বাড়তি কোনো যত্ন, সার, কীটনাশক কোনো কিছুরই প্রয়োজন হয় না।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার ওয়াচু, চৌমুহনী, গোমতী ও গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি, হাফছড়ি, বড়পিলাক, তৈর্কমাসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি ঝাড়ু ফুল শুকাতে দেখা যায়। এ ছাড়াও সাপ্তাহিক হাটে আঁটি বেধে এগুলো বিক্রি করতে দেখা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য মজুদ রাখেন।
সিন্দুকছড়ি পাহাড়ে বসবাসকারী সতেন্দ্র ত্রিপুরা জানান, পাহাড় থেকে ফুলগুলো সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে খুচরা দামে বিক্রি করেন। ১৫-২০টি ফুল দিয়ে একটি আঁটি বাধা হয়। আঁটি হিসেবে এসব ঝাড়ু ফুল বিক্রি করা হয়। তবে এগুলো কাটা এখন আর আগের মতো সহজ নয়। আগে রাস্তার ধারে ফুল পাওয়া যেত। এখন অনেক ঝুঁকি নিয়ে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে ঝাড়ু ফুল কাটতে হয়।
ফুল সংগ্রহকারী মনিরাম ত্রিপুরা জানান,গহীন পাহাড়ের টিলায় টিলায় কাশফুলের মতো এসব ফুল গাছ দেখা যায়। পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে এ গাছে ফুল আসে। পাহাড়ে গিয়ে এ ফুলসহ গাছগুলো সংগ্রহ করেন তারা। এগুলো বাজারে বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করেন ও পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারেন।
ঝাড়ু ফুলের স্থানীয় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, পাহাড়ের প্রান্তিক মানুষের কাছ থেকে খুচরা দরে ঝাড়ু ফুলের আঁটি কিনে ট্রাকে করে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন। এতে যা লাভ হয় তা দিয়ে পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারেন। এ ছাড়াও তার অধীনে ঝাড়ু ফুল রোদে শুকানো এবং ঝাড়ুর আঁটি বানানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের দৈনিক বেতন দিচ্ছেন ৩০০-৪০০ টাকা।
অন্য ব্যবসায়ী আবু সাইদ বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে একটি কাঁচা ঝাড়ুর আটি ২২ থেকে ২৫ টাকায় কিনে নিই। তারপর রোদে শুকিয়ে শ্রমিক দিয়ে নতুনভাবে ঝাড়ুর মোচা বানিয়ে পাইকারি দামে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে পাহাড়ের মানুষের আর্থিক সংকট নিরসনে ঝাড়ু ফুল শিল্প সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে।
মাটিরাঙ্গা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, প্রতি গাড়ি থেকে সরকার রাজস্ব পায় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। স্থানীয়ভাবে চাষ করতে পারলে কৃষকরা যেমন লাভবান হবেন তেমনি রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া উলুফুল সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। প্রতি আঁটি থেকে রাজস্ব আদায় হয় আড়াই টাকা। বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
এসএন