আজীবনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি : রাজিবুল ইসলাম
নিশ্চিতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রভাত ফেরির ছবিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম সেরা। দিয়েছেন রাজিবুল ইসলাম, আমাদের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। খুব ভালো ফটোগ্রাফার তারা। অনেকগুলো পুরস্কার আছে তারও দেশ, বিদেশে। দারুণ এই ছবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)’র নামকরা উপাচার্য, অনেক কাজের কাজী ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদার আছেন সবার সামনের সারিতে। ছোটখাট মানুষটিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলেই চেনেন। দারুণ একটি পাঞ্জাবি পরা, তার ক্যাম্পাসের মতোই। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু করে একেবারে পেছনে, গাছগাছালিতে ঘেরা, বাংলাদেশে কৃষি গবেষণার অন্যতম পীঠস্থানের অনেকটা দূরে শত, শত ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, কমর্কর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি এখনই একুশের প্রভাত ফেরি শুরু করবেন। তাদের সামনে একটি কালো বিরাট ব্যানার। তার ভেতরে সাদা রঙে বড় করে লেখা-‘মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২’। তার নীচে মাঝে লেখা, ‘সকল ভাষা শহিদ স্মরণে...’। এরপর লেখা লালে ‘প্রভাত ফেরি।’ সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউটের দুই সদস্য শ্রদ্ধাঞ্জলির লাল, সাদা ও সবুজ স্তবটি দুপাশ থেকে ধরে আছেন-‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ লাল হরফে লেখা।
সকাল আটটার মধ্যে কালো-সাদা শাড়ি, সাদা-কালো পাঞ্জাবি-কোট, সাদা পাঞ্জাবি, কালো শোকচিহ্ন আঁটা ব্যাজ, কালো পাড়ের শাড়ি পরে শোকের সাগরে ভাসতে ভাসতে বাংলাদেশের, বাংলা ভাষার ও বিশ্বে ভাষার দাবীতে আত্মদান করা একমাত্র রাষ্ট্রের নেপথ্যের নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে চলে এলেন তারা সবাই। পুরো ক্যাম্পাস একে, একে ধীর পায়ে ঘুরলেন সবাই বিরাট মিছিল নিয়ে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম সুন্দর ও আকর্ষণীয় সূর্যালোকে বর্ণমালাতে গিয়ে শহীদ বেদির ওপর পুস্পাঘ্র্য অর্পণ করলেন ভিসি স্যার। তার পেছনে ছিলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় দিবস উদযাপন পরিষদ।
একে, একে বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের পুস্পমাল্য দিয়ে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ডিন কাউন্সিল, প্রভোস্ট কাউন্সিল, প্রক্টরিয়াল বডি, শিক্ষক সমিতি, অফিসার পরিষদ, কর্মচারী পরিষদ, গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদ, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, সাংবাদিক সমিতি, ছাত্র কল্যাণ ও জেলা সমিতিগুলো, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠন।
একুশের ভাষা শহিদ দিবস উপলক্ষে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম টিএসসিতে আয়োজন করেছে বিশেষ ও অত্যন্ত গুরুত্বপূণ আলোচনা সভা। তাতে উপস্থাপক ছিলেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.এম এম মাহবুব আলম। প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার বলেছেন, ‘একুশের মহান ভাষা আন্দোলন। এই বীরদের আত্মদানের সূত্র ধরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধটি হয়েছিল। এরপর থেকেও সবকিছুর অন্যতম ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এই একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনন্য ও অবিস্মরণীয় স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছে কানাডার দুজন প্রবাসী বাংলাদেশীর অবিশ্বাস্য চেষ্টায়। মাতৃভাষা বাংলার জন্য আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছেন সেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের প্রতি আমাদের আজীবনের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ও প্রতিটি ছাত্র-শিক্ষকের কাজের মাধ্যমে তাদের প্রতি যেন ভালোবাসা দেখাতে পারি সে আশা করছি।’
ওএস।