মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

‘শিক্ষা উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার’

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. শরীফা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর (শিক্ষা ও গবেষণা ইনিস্টিটিউট)'র অধ্যাপক। আইইআরের পরিচালক ছিলেন। ইডেন কলেজের ছাত্রী হিসেবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগদানের জন্য ২০১৭ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করেছে। প্রখ্যাত এই ভাষা সংগ্রামী ও বরেণ্য শিক্ষাবিদের শিক্ষাক্ষেত্রে অনন্য অবদান আছে। মুখোমুখি হয়েছেন সাবেক ছাত্র ওমর শাহেদ

তোমার দেশ কোথায়?
নোয়াখালী, কোম্পানিগঞ্জ।

১৯৩৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ফেনীর সরিষাদি ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামে জন্মেছেন। বিপুলেএই সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশেরও ৫০ বছর দেখেছেন। এই দেশের নারী উন্নয়ন কেমন হয়েছে?
আমার তো মনে হয় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেয়ের সংখ্যা প্রচুর, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়ের সংখ্যা অনেক। কলেজেও অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক বিভাগে মেয়েদের প্রাধান্য বেশি। তাই না? শুধু শিক্ষা নয়, নানা কাজেও তারা এগিয়ে আছে। সমাজসেবা, সরকারি, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে তারা খুব ভালোভাবে অংশগ্রহণ করছে। উত্তরোত্তর এগিয়ে যাচ্ছে তারা। আমাদের সরকারগুলোও নারীদের প্রতি দরদী ও সহনশীল।

আপনার জীবন অভিজ্ঞতায় এই ক্ষেত্রে সার্বজনীন সমস্যা ও সেগুলোর সমাধান কীভাবে করা যেতে পারে?
আমি মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে বাবা, মায়ের সহযোগিতা দেখি। নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে এখন বাবা, মা অনেক উদার। তারা মেয়েদের পেছনে অনেক খরচও করেন। তবে কোনো, কোনো পরিবারে ছেলে, মেয়েদেরকে পার্থক্য করেন। সেটি আমি দেখিনি। অনেক সময় ছেলেদের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করেন, প্রাইভেট টিউটর নিয়োগ করেন। ভালো স্কুলে পড়ান। মেয়েদেরকে সাধারণ স্কুলে ভর্তি করেন। এটি কোনো, কোনো পরিবারে দেখা যায়। তা স্বত্বেও মেয়েরা এখন পড়াশোনা করে নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে। এটি এই স্বাধীন দেশের একটি বিরাট অবদান।

আপনার কোনো সাজেশন আছে নারী উন্নয়নের জন্য বা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে?
নারীরা তো এগিয়ে যাচ্ছে। এখন সামাজিক পরিবেশও তো নারীদের অনূকূল। রাজনৈতিক পরিবেশও। অথনৈতিক পরিবেশও তাই। হয়েছে কী-মেয়েদের যখন বিয়ে হয়, সেই সংসারে গেলে তাদের একরকম চিত্র তৈরি হয়, বুঝলে? তারা নিজে স্বাধীনভাবে থাকলে আরেক রকমের চিত্র হয়। বাবার বাড়িতে থাকলে অন্যরকম হয়। স্বামীর বাড়িতে থাকলে একরকম। সেখানে যদি তারা সহযোগিতা করেন, তাহলে সেসব শিক্ষিত নারী অনেক এগিয়ে যেতে পারে। স্বামীর সহযোগিতা, স্বামীর বাড়ির আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় অনেক সামনে চলে যেতে পারে। এখন নারীদের ব্যাপারে অনেক পরিবার খুব সহনশীল। সেজন্য নারীরা এগিয়ে গিয়ে শিক্ষাগ্রহণ করছে। সরকার, পুলিশে চাকরি গ্রহণ করছে। সমাজসেবামূলক কাজ করছে। ফলে মেয়েরা এই দেশে আর পিছিয়ে নেই। সরকার অনুকূল পদ্ধতি গ্রহণ করছেন, যাতে ওরা নানাভাবে এগিয়ে আসতে পারে ও সমাজের কাজে জড়িত হতে পারে।

ব্রিটিশ আমলে নারীদের অবস্থা কেমন ছিল? তাদের সমস্যাগুলো কী ছিল? সমাধানের উদ্যোগ কেমন দেখেছেন?
ব্রিটিশ আমলে যা দেখেছি-আমি প্রথম কুমিল্লায় পড়তাম। আমার বাবা রেলওয়েতে চাকরি করতেন। আসামে থাকতেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করেছেন। আমাকে কুমিল্লায় খালুর বাড়িতে রেখে যান। সেখানে পড়েছি। সেটি শিশু স্কুল, যেখানে মেয়েরা পড়ত। ক্লাস থ্রি’র সময় যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলো, তখন গ্রামে চলে এলাম। অনুকূল পরিবেশই পেয়েছি। আমার অসুবিধা হয়নি। বাড়ি থেকে ভাত খেয়ে হেঁটে স্কুলে রওনা হতাম। স্কুলটি প্রায় দুই মাইল দূরে, ওটুকু হেঁটেই যেতাম আবার ফিরে আসতাম (হাসি)। সেখানে কোনো রক্ষণশীল পরিবেশ দেখিনি। আমাদের গ্রামের কথা বলছি। সবাই সহযোগী ছিল, টিচাররাও সহযোগী ছিলেন। স্কুলের মাঠে মেয়েদের সাথে খেলাধুলা করতাম। আমাদের কারো অসুবিধা হতো না। বাড়ির পরিবেশ মোটামুটি সহনশীল ছিল, সেজন্য এই অসুবিধাগুলো হয়নি। ওই এলাকায় আমাদের মেয়েরা পড়ালেখা করেছে, আরো অনেক পরিবারের মেয়েরা পড়ালেখা করেছে। তারা আমার মতো এগিয়ে যেতে পারেননি।

কেন পারেনি?
তা তো জানি না (হাসি)। তাদের কার কোথায় বিয়ে হয়েছে তাও জানি না।

পাকিস্তান আমল বাংলাদেশের নারীদের জন্য কতটা সংকটময় ছিল?
পাকিস্তান আমলে তারা তো আমাদেরকে অন্যদৃষ্টিতে দেখতেন। তারা মনে করতেন, আমরা তাদের একটি কলোনি। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা অর্থ, কর্ম বন্টন করতেন। তাতে আমরা পিছিয়ে ছিলাম কিন্তু এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শিক্ষিত গ্রাজুয়েটরা বেরিয়ে চাকরি, বাকরি করা শুরু করলেন। তারপর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্ম হল। তাদের উত্তরোত্তর প্রসার হতে থাকল। এই শ্রেণী শিক্ষার কাজে, চাকরির ক্ষেত্রে এগিয়ে এলো। সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রেও তারা অনেক এগিয়ে গেল। তবে প্রধানত চাকরির ক্ষেত্রে বিষ্ফোরণ ঘটেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। এখনো প্রধানত তাদের দ্বারা বৃত্তিটি পরিচালিত হচ্ছে। এই শ্রেণীর চেতনার ফলেই এদেশের নারীরা পুরুষের পাশাপাশি শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছে। তারপর তারাও চাকরি গ্রহণ করেছে। পাকিস্তান আমলে এই সংখ্যাটি কম। তাদের মধ্যে সেই সময় যে নতুন এই উদ্দীপনাটি সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশ হওয়ার পর সেটি প্রস্ফুটিত হয়েছে, আরো প্রসারিত ও পরে জয়যুক্ত হয়েছে।

তখন নারীর অবস্থা কেমন ছিল?
তখন আমাদের আয়ারা বাসা থেকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। আবার বাসায় পৌঁছে দিতেন। স্কুলে আমি হেঁটে আসা-যাওয়া করতাম। আমাদের যত কর্মকাণ্ড শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরেই সবসময় আবর্তিত হয়েছে। বাইরে বেশি যেতে পারতাম না। ইডেন কলেজে যখন ভর্তি হলাম; বাজারে যেতে হলেও আমাদেরকে দারোয়ানরা ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে নিয়ে যেতেন। কোনো কালচারাল প্রগ্রাম হলে-যেমন হলিক্রস কলেজ বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছেলেদের আয়োজন কোনো বিশেষ ফাংশনে, কার্জন হলে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে, ঘোড়ার গাড়িতে নিয়ে যেতেন। অতএব আমাদের কিছুটা রক্ষণশীল পরিবেশেই তখন চলাফেরা করতে হতো। ইডেন কলেজের পাশেই আমাদের হোস্টেল ছিল। বকশিবাজারে হোস্টেলে থাকতাম। কলেজে যেতে পাঁচ বা ১০ মিনিট লাগত। তাতে কোনো অসুবিধা হতো না। বাড়ির মেয়েরা ঘোড়াগাড়িতে কলেজে আসতো তখন। ওখানে আমাদের সঙ্গে ঢাকার সেরা, সেরা স্কুল, কলেজের ছাত্রীরা এসে ভর্তি হয়েছে। ওখানেও আমি নতুন একটি পরিবেশ পেলাম। যে স্কুলে পড়ালেখা করেছি, সেখানে পাইনি। ঢাকায় এসে এই নতুন পরিবেশটি পেলাম। এটি জাগ্রত। আমাদের মহিলা কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি উন্নত ছিল। অনেক সময় ব্যয় করতাম। পড়ালেখা করতাম। কলেজের মাঠে খেলতাম। কলেজের ভেতরে একটি মাঠ ছিল। মাঠে একটি বড় একটি লিচু গাছ ছিল। সেটির নীচে আমরা বসে থাকতাম, আলাপ-আলোচনা করতাম নানা বিষয়ে। আমাদের জ্ঞান বাড়ত। ওখানেই ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রীরা আসতেন। আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন যাতে ভাষা আন্দোলনে আমি ও আমরা যোগ দেই।

স্বাধীন বাংলাদেশে নারীর অগ্রগতির চিত্র কেমন? শিক্ষা নারীকে কতটা এগিয়ে দিয়েছে?
আজকালকার পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই। শিক্ষিত নারীরা অনেক এগিয়ে গিয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমে তারা অনেক অংশগ্রহণ করছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিচ্ছে। সেসব ক্ষেত্রে তারা জয়যুক্ত হচ্ছে ও ভালো, ভালো পদে নিয়োগ লাভ করছে। আমি জানি, মেয়েরা বর্তমানে অনেক এগিয়ে আছে। আশা করি, ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যাবে। তারা দেশের সেবা করতে পারবে, দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম কুড়াতে পারবে। পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক পথ দেখাতে পারবে। মেয়েদের নিয়ে আমি আশাবাদী।

শিক্ষা কী নারীর উন্নয়নে প্রধান হাতিয়ার?
হ্যাঁ, প্রধান হাতিয়ার।

কেন?
শিক্ষা থেকে তাদের মনের দরজা খুলে যায়, তারা খুলেও দিতে পারে। মনের ভেতরে নানা চিন্তা প্রবেশ করে। তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করে। নিজেদের উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশ হলে যে নতুন ধরণের জ্ঞান ও দক্ষতাগুলো তারা অর্জন করেছে, সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারে; নিজেরাও চেষ্টা করে যেতে পারে সেগুলোকে হাতিয়ার বানিয়ে।

বাংলাদেশের ৫০ বছরে নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতি কী রকম হয়েছে বলে মনে হয়?
আমার মনে হয়, ভালো হয়েছে। আমি তো এখনকার পরিসংখ্যান বলতে পারব না। তবে মনে হয়, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের নারীদের অগ্রগ্রতি খুব আশাব্যাঞ্জক। জানি ও নিশ্চিত, ভবিষ্যত কালগুলোতেও এই অগ্রযাত্রা প্রবাহমান, বহমান থাকবে। উত্তরোত্তর দেশের বিভিন্ন পদে, যেগুলোতে এখনো মেয়েদের রেসট্রিকশন আছে, সেগুলোতে যোগ দিয়ে কাজ করবে। দেশের উন্নয়নে তারা আরো বেশি ভূমিকা পালন করতে পারবে।

এই যে ঘরে নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ-বাবা, স্বামী ও ছেলে; তাদের অভিজ্ঞতা আপনার কী রকম? যেহেতু তিনকাল দেখেছেন।
আমি ত্রিকালদর্শী। শ্বশুড়বাড়িতে দেখেছি (হাসি), আমাদের বাড়িতে দেখেছি, নিজের বাড়িতেও দেখেছি। আমার শ্বশুড়বাড়িতে মেয়েদের প্রতি আচরণ সবসময় পজেটিভ বা ইতিবাচক ছিল। মেয়েদের সম্মান করা হতো। তখনকার দিনে আমার মতো অত শিক্ষিত মহিলা তাদের বাড়িতে ছিলেন না। পরবর্তীতে তারা অনেকে শিক্ষিত হয়েছেন। সেখানে মেয়েদের প্রতি সহনশীল পরিবেশ ছিল। এমনটি ছিল আমার বাবার বাড়িতে-সব বাড়িতেই।

আপনার বাবা মোহাম্মদ আসলাম। আসামে কোন রেলওয়েতে কী পদে চাকরি করতেন?
তিনি পিডব্লডিতে রেলওয়ে ইন্সপেক্টর ছিলেন। কাঞ্চননগরে স্লিপার ট্রেডিং প্ল্যান্টের সুপারেনটেন্ট পদে অবসর নিয়েছেন।

এটি কী খুব বড় পদ?
খুব বড় পদ নয়।

তার মেয়ে হয়ে এতদূর কীভাবে এলেন?
বাবাই তো আমাদের লেখাপড়া করিয়েছেন। বাবা আমাকে কুমিল্লা রেখে গেলেন খালুর কাছে, নোয়াখালীতে তার আইনজীবি বন্ধুর বাসায় রেখে গেলেন। মাধ্যমিক স্কুলে, ইডেন মহিলা কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি করে দিয়ে গেলেন। আমার বাবা মেট্রিক পাশ, প্রথম বিভাগে। তবে আর পড়তে পারেননি, কারণ দাদা মারা গিয়েছেন অল্প বয়সে। তিনি তার বড় ছেলে ছিলেন। ভাইবোনদের দেখতে হয়েছে।

যখন ইডেন কলেজে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে অংশ নিলেন-আপনার বাবা কীভাবে দেখলেন? তিনি তো সরকারী চাকরি করতেন?
তিনি কোনোভাবে দেখেননি। তিনি তো আমার বাংলা ভাষার, ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন দেখেননি। এরপর হঠাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিল, আমাদেরকে কলেজ থেকে নিয়ে ট্রেনে তুলে দিলো, আমি বাবার বাসায় গিয়ে পৌঁছালাম। তখন তার সিলেটে না কোথায় পোস্টিং ছিল। তিনি আমাকে ভাষা আন্দোলনের জন্য কিছু বলেননি। তার মানে খারাপ কিছু ভাবেননি।

তখন কোথায় থাকতেন আপনারা?
আমরা তখন আসাম রেলওয়ে স্টেশনের কোয়ার্টারে থাকতাম। স্টেশনের পাশে ছিল বাসা। এগুলো আসামের বিভিন্ন শহর যেমন-ডিপো, লঙ্কা, শিবসাগর, লামডিং। শিবসাগরের কথা সর্বশেষ বলে মনে পড়ে। ওখান থেকে ফেরার পর বাবা দেশে চলে এলেন, পাকিস্তান ভাগ হয়ে গেল বলে।

আপনারা ভাইবোন কতজন?
আমাদের চারভাই, তিনভাই মৃত। বোন চারজন, একবোন মৃত।

ভাইবোনরা কে, কী করতেন?
আমার এক ভাই আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। মারা গিয়েছে। নাম অধ্যাপক ড. রফিক আহমেদ। উইসকনসিন স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ছিল। ভূগোল বিভাগে পড়াত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ছাত্র। আরেক ভাই চানপুর (চাঁদপুর) কলেজে পড়াত, কবির আহমেদ। ছোটজন আমেরিকায় থাকে, এরপরের ভাইও আছে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার; সে ওখানে সেটেলড-তাহের আহমেদ। আমার পরের বোন মরিয়ম বেগম; বিএ, বিএড। চট্টগ্রামের গোলাপ সিং রোডের বিখ্যাত নন্দন কানন গ্রামার শিক্ষক ছিল। বাচ্চা হওয়ার সময় তাকে আমাদের গ্রামে দিয়ে গিয়েছে তবে সে সময় গ্রামে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না বলে আমার বোনটি মারা গিয়েছে। পরের বোন ফেনীর একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিল। রিটায়ার করেছে। নাম মোমেনা বেগম। সবচেয়ে ছোট বোনটি মৌলভীবাজার ইলারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে অবসর গ্রহণ করেছে। সেও মার্কিন যুক্তরাাষ্ট্রে সেটেলড। আমি প্রথম, সবার বড়-বোন।

জীবনে আপনার এত সাফল্যের রহস্য কী? ভাই, বোন; বাবা, মা? কে?
বাবা, মায়ের অনুপ্রেরণা আছেই। ভাই, বোনরাও সহযোগী ছিল। হাজব্যান্ডও সহযোগী ছিল। যখন আমেরিকা পড়তে যাই দুই বাচ্চাকে ফেলে-শ্বশুরবাড়িতে একজন, আমার মেয়ে আর আমার বাবা, মায়ের কাছে ওরা আরেকজন ছিল। তারা এভাবে আমার দুই সন্তানকে দুই পরিবারে রেখে দেখাশোনা করেছেন।
 

মা তো জেবুন্নেসা চৌধুরাণী? এই নামগুলোর সঙ্গে আমরা এভাবে পরিচিত যে মনে করেছি, তারা বড় পরিবারের মেয়ে।
আমার মায়ের বাড়ি কুমিল্লা। নানার বাড়ি কুমিল্লার লালবাগ। আমার মা ও বাবা খালাতো ভাই, বোন। তারা সাধারণ পরিবারের। মা গৃহিনী ছিলেন।

জীবনে মায়ের ভূমিকা?
আমার মা সামান্য একটু পড়ালেখা জানতেন। খুব ছোটবেলা থেকে তিনি আমাকে পড়াতেন। খুব সহনশীল মানুষ ছিলেন। মা তো বাচ্চাদের দেখাশোনা করেছেন আজীবন, সংসারের দেখাশোনা করেছেন সবসময়। আমাদের বাসায় তিনি মাঝেমধ্যে বেড়াতে আসতেন, আমরা নিয়ে আসতাম।

ছোটবেলার আসামে কী কোনো বিদ্যালয় ছিল?
আমরা আসামে যখন থাকতাম, বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য বাংলা কোনো স্কুল ছিল না (খুব জোরে)। অসমিয়া ভাষাভাষীদের জন্য স্কুল ছিল। তবে শিবসাগরে বোধহয় আমাদের জন্য বিদ্যালয় ছিল। বাবা সেখানে থাকতে আমাদের বিদ্যালয় ছিল। তবে আমি ভর্তি হইনি। তখন তো অলরেডি কুমিল্লায় পড়ছি।

আপনাকে বাংলা পড়াতে চেয়েছিলেন তারা। এই ভাষাপ্রীতি কেন? চাইলে ইংরেজি স্কুলে পড়াতে পারতেন?
না, তখন ইংরেজি স্কুল আমাদের ধারণার ভেতরেই ছিল না। ইংরেজি যে পড়ব, সেই ধারণা বাঙালিদের ছিল না। সাধারণ যে স্কুল অ্যাভেইলেভল ছিল, সেটিতেই পড়েছি।

মাদ্রাসা তো ছিল প্রচুর?
না, মাদ্রাসায় (হাসি) আমরা কেউ পড়িনি। তখন আমাদের দিঘীর পাড়ে একটি মক্তব ছিল। সকাল বেলা কোরআন শরীফ পড়তে যেতাম। আরবি পড়তে যেতাম গ্রামে থাকলে। শহরে মক্তব হয়তো ছিল, আমি পড়িনি।

আসামে আপনারা কোথায় থাকতেন?
ডিপো, এরপর লঙ্কা, লামডিং, শিবসাগর-এই চারটি শহরের কথা মনে পড়ে।

আসামের কোন স্মৃতিটি খুব মনে পড়ে?
শিবসাগর। ওখানে বিরাট, বিরাট দীঘি আছে। একটি দীঘির ওপর একটি শিবমন্দির আছে। ওপরে একটি সোনার গম্বুজ আছে। ৩২ মণ সোনা দিয়ে গড়েছিলেন তারা। খুব আকর্ষণীয়। দর্শণীয় ও ঐতিহাসিক স্থান।

বছর পাঁচেকের মেয়ে বাবা, মা ছাড়া থাকা কতটা কষ্টের ছিল? আপনি তো প্রায় সারাজীবনই বাবা, মা ছাড়া থেকেছেন?
কুমিল্লা, নোয়াখালী, ঢাকা, বিদেশে গিয়েও পড়েছি। তবে বাবা, মায়ের সঙ্গে আমার সবসময় ঘনিষ্ট সম্পর্ক ছিল। তারা আমাকে সবজায়গায় রেখে গিয়েছিলেন পড়ালেখা করার জন্য, ফলে কষ্ট করে হলেও থেকেছি। তাদেরও খুব আগ্রহ ছিল, আমাকে পড়াবেন।

কুমিল্লার সেই বাসায় আদর কেমন পেতেন?
ভালো। আমার খালুজির কোনো সন্তান নেই। তারা খুব আদর করতেন। বাসা ছিল শহরের কাছে গোবিন্দপুর গ্রামে। গ্রাম ছিল তখন-এখন উন্নত হয়েছে।

কত বছর বয়স পর্যন্ত ছিলেন?
ক্লাস থ্রি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কুমিল্লা শহরে বোমাবর্ষণ হয়েছিল। ফলে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমাকে গ্রামে নিয়ে গিয়ে গ্রামের পাশের বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হলো। শিশু স্কুল, কিন্ডারগার্টেন সেই অর্থে নয়। একটি মাইনর স্কুল। নাম লক্ষ্মীহারা মাইনর স্কুল। থ্রি থেকে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত পড়েছি।

এখন আপনি বাংলাদেশের প্রধান শিক্ষাবিদের একজন। গ্রামের স্কুলে পড়েছেন, শহরে মেয়েদের কলেজে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পিএইচডি। এই গ্রামের স্কুলগুলোর মান কেমন? কিন্ডারগার্টেনগুলো টেকে না কেন? ওদের সমস্যা কী?
কিন্ডারগার্টেনের কথা আমি তো জানি না। স্কুল ভালোভাবে পড়াত, মোটামুটি ভালোভাবে চলত। তবে হাইস্কুলে যখন পড়ি, তখন দেশভাগ হলো; অনেক হিন্দু শিক্ষক ওপারে চলে গিয়েছিলেন। শিক্ষকের ক্রাইসিস হলো। তবে একেকজন টিচার দিনে কয়েকটি ক্লাস বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। আমি যে স্কুলে পড়েছি, সেটির নাম ‘উমা গার্লস হাই স্কুল’, নোয়াখালীতে। হেডমিসট্রেস ছিলেন প্রীতি বোস। বিখ্যাত লোক। অনেক হিন্দু তো চলে গিয়েছে, তিনি যাননি বিদ্যালয়ের মায়ায়। আজীবন ডেডিকেটেড ওয়েতে কাজ করেছেন। স্কুলটিকে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। তার প্রচেষ্টায় সরকারী স্কুলে উন্নীত হয়েছে।

যেকোনো স্কুল ভালো করার উপায় কী? আপনার কী মনে হয়?
উপায় হলো, শিক্ষকরা নিবেদিত হয়ে পড়াবেন, ছেলেমেয়েদেরকে দেখবেন। প্রতিটি শিক্ষক তার নির্ধারিত পাঠ ভালোভাবে দেবেন। শুধু পাঠ নয়-ছাত্র, ছাত্রীদের চরিত্র, মনন ও জীবন গঠনে সাহায্য করবেন।

আমাদের আইইআরে ছাত্র সংখ্যা কম কিন্তু আগে পড়েছি ঢাকা সিটি কলেজে। ওখানে ছাত্র প্রচুর। একটি শ্রেণীকক্ষে অনেক ছাত্র। শিক্ষক-ছাত্রের যে রেশিও সেটি আমাদের প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো মেনটেইন করতে পারে না; বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় পারে না।
ক্ষতি হলো, বেশি ছাত্র হলে শিক্ষকরা অনেক কিছু পড়াতে পারেন না, মনে রাখতে পারেন না ছাত্রছাত্রীদের। ছাত্র, ছাত্রীরা অনেক কিছু জানতে পারে না। প্রশ্ন করে উত্তর আদায় করার সময় শিক্ষকের হয় না। অতএব অত বড় ক্লাসে এটি করতে হলে একটি উপায়, মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে হয়, নানা রকমের ব্যবস্থাপনাও করতে হয়। বড় ক্লাস নিতে হলে এভাবে কাজ করতে হয়। সেটি সব কলেজে আছে কী না আমি ঠিক জানি না।

(প্রথম কিস্তি সমাপ্ত)

Header Ad
Header Ad

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

ছবি: সংগৃহীত

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সোমবার গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এতে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের অভ্যন্তরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত নকশায় না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ (রেস্টুরেন্ট) পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, যা জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনৈতিক উপায়ে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে।

ডিএসসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্পদ ও জানমালের ঝুঁকি এড়াতে নকশাবহির্ভূত সব রেস্তোরাঁ এবং ভবনের ছাদে স্থাপিত রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হলো। বাতিল করা লাইসেন্স দিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যেসব রেস্তোরাঁ সঠিক তথ্য না দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের অনুমোদন কিন্তু বাতিল করা হয়নি। ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সশরীর উপস্থিত হয়ে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত দিলে সেগুলো সচল করা হবে।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রেস্তোরাঁকে আলাদা করে চিঠি পাঠাব।’

ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ডিএসসিসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম চলছে। ব্যবসাগুলো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। রাজউকের পাস করা ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। বিগত সরকারের সময় এই জটিলতা নিরসনে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। সেই টাস্কফোর্সের দুটি বৈঠক হয়েছিল। তারপর তো সরকার বদল হয়ে গেল।

ইমরান হাসান বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে এখন যদি ডিএসসিসি অভিযানে নামে, তাহলে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রেস্তোরাঁর অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। ওই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, তবে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদন ছিল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চার বছর আগে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি। বাকি সব ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। রেস্তোরাঁর জন্য প্রথমে নিবন্ধন ও পরে লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি রেস্তোরাঁ।

Header Ad
Header Ad

মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বান। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ ও জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে এনে মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী শাসনের অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য জনরোষের মুখে পড়েছেন।” পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ সদস্যদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো

নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ছবি: সংগৃহীত

বারবার নিলাম ডেকেও এস আলম গ্রুপের বন্ধকী সম্পত্তির কোনো ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছে না দেশের ব্যাংকগুলো। ফলে ঋণ আদায়ে এখন বাধ্য হয়ে অর্থ ঋণ আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে তারা। এতে পুরো প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত ও জটিল হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রামভিত্তিক এই শিল্পগোষ্ঠী ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জনতা ব্যাংক ১০,৭০০ কোটি টাকার বিপরীতে ছয়বার নিলাম ডেকেও কোনো সাড়া পায়নি। একইভাবে ইসলামী ব্যাংকও সাত দফা নিলাম আয়োজন করেও ব্যর্থ হয়েছে, যার মধ্যে আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলসের ১,১০০ কোটি টাকার ঋণ সংক্রান্ত নিলামও অন্তর্ভুক্ত।

সাম্প্রতিক সময়ে এস আলম গ্রুপের একাধিক স্টিল মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জমি নিলামে তোলা হলেও দরপত্র জমা পড়েনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া পূরণের জন্যই তারা এসব নিলাম ডাকছেন, যদিও আগ্রহী ক্রেতার দেখা মিলছে না। অনেকেই এই বিষয়টিকে ভয় পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণ জব্দ করে।

বর্তমানে এস আলম গ্রুপের ওপর কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে ১৪ সদস্যের বিশেষ লিগ্যাল টিম। একই সঙ্গে তাদের জব্দকৃত শেয়ার বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো
সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই চার বছর পর সাদমানের সেঞ্চুরি
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টার, মাসিক খরচের বিষয়ে যা জানা গেল!
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট করুন: জামায়াত আমির
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেড, সহকারী শিক্ষক ১২তম
এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই: উমামা ফাতেমা
আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল: প্রধান উপদেষ্টা
আত্মসমর্পণ করলেন তারেক রহমানের খালাতো ভাই
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ল বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট
রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল: ফখরুল
দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শাটডাউন কর্মসূচি
ভারতের সামরিক আক্রমণ আসন্ন,পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি পাকিস্তানের
কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত মার্ক কার্নি
নওগাঁয় ডাকাত দলের ৩ সদস্যসহ ৮ জন গ্রেপ্তার, উদ্ধার লুণ্ঠিত মালামাল
নিজের মূত্র পান করেছিলেন বলিউড অভিনেতা পরেশ রাওয়াল
নাহিদ ইসলামকে বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কিছু লোডশেডিং না হলে ভর্তুকি বেড়ে যাবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
গণপিটুনির পর কারাগারে ইমামের মৃত্যু, গাজীপুরের পূবাইলে চাঞ্চল্য