সিরাজগঞ্জের শাড়ি-লুঙ্গির কদর দেশের বাইরেও
সিরাজগঞ্জ জেলার তাঁতিদের তৈরি রকমারি ডিজাইনের শাড়ি ও লুঙ্গি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের প্রিয় পোশাক। দেশে ব্যাপক চাহিদার কারণে দেশ ছাড়িয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি হচ্ছে এসব শাড়ি লুঙ্গি।
বিগত ১০-১৫ বছর ধরে পাওয়ারলুমে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, তামাই, সোহাগপুর, এনায়েতপুর, বেতিল, শাহজাদপুর, পাচলিয়া, উল্লাপাড়া, পাইকোশা, এনায়েতপুরে তাঁতের শাড়ি, লুঙ্গি গামছা ব্যাপকভাবে তৈরি হচ্ছে। এসব এলাকাকে সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লী বলা হয়। তাঁত পল্লীগুলেতে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা পাওয়ারলুম-পিটলুম ও হস্তচালিত তাঁতে নিখুঁতভাবে তৈরি করছেন সুতি কাতান, সুতি জামদানি, সিল্ক, রেশম গ্যাস শাড়ি নানান ডিজাইনের লুঙ্গি ও গামছা।
একজন শ্রমিক সাধারণত হস্তচালিত তাঁতে একদিনে একটি শাড়ি বুনতে পারেন। আর পাওয়ারলুমে দিনে দুইটি শাড়ি বুনতে পারে। তবে বেশি মাত্রার কারু কাজ করা শাড়ি বুনতে সময় লাগে বেশি। শাড়ি বুননের পর ফুল তোলা বা নকশা কাটার বাড়তি সুতা কাঁচি দিয়ে কেটে চূড়ান্ত ভাবে নকশা ফুটিয়ে তোলেন নারীরা। অপরদিকে তাঁত শ্রমিকরা বিভিন্ন ডিজাইনের লুঙ্গিও প্রস্তুত করছেন। যা সারাদেশে বিভিন্ন হাট বাজারের কাপড়রের দোকান গুলোতে স্থান করে নিয়েছে।
বিভিন্ন আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করে দেড়শ টাকার লুঙ্গি থেকে তিন হাজার টাকার লুঙ্গি আবার সাড়ে তিনশ টাকার শাড়ি থেকে শুরু করে ১৫ হাজার টাকা মুল্যের শাড়ি কাপড় উৎপাদন করা হয়। এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও সুতার কাজ রংয়ের কাজ চরকার কাজসহ কাপড় বুননের কাজে দিবা-রাত্রী শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।
এ কারণেই সারাদেশে সিরাজগঞ্জের শাড়ি লুঙ্গির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ঢাকা, চট্রগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর জেলায় সিরাজগঞ্জের শাড়ি লুঙ্গির বেশি কদর রয়েছে। নামি দামী ব্যান্ডের শো-রুমে বিক্রি হচ্ছে এসব কাপড়। এছাড়াও ভারতের মুর্শিদাবাদ, সমুদ্রগড়, শান্তিপুর, গঙ্গারাম, ভালুকা, রায়গঞ্জ ও ত্রিপুরার কিছু কিছু এলাকাতেও রফতানি হচ্ছে বলে সিরাজগঞ্জের উল্লেখযোগ্য শাহজাদপুরের কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান।
সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল আড়তের ভেতর ছোট বড় অসংখ্য দোকান। অগুনতি পাইকার-খদ্দেরের আনাগোনা, দরদামের হাঁকাহাকি, চারদিকে কাপড়ের বান্ডিল আর গাঁটের ছড়াছড়ি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা ক্রয় করছে তাদের চাহিদা মতো কাপড়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সীমান্তের ওপার থেকেও আসেন ক্রেতারা।
গৌড় বসাক নামক একজন ভারতীয় পাইকার জানান, এখানকার কাপড়ের মান অনেকটাই ভালো তাই ক্রেতাদের চাহিদা বেশি। ভারতের তুলনায় এখানে কাপড় দামে সাশ্রয়ী। তাই তিনি প্রতি মাসেই পাইকারি দরে শাড়ি কিনতে শাহজাদপুর হাটে আসেন। পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানে 'গৌড় অ্যান্ড সন্স' নামে তার একটি শাড়ির দোকান আছে।
দেশের অন্যতম বৃহৎ কাপড়ের হাট শাহজাদপুরের পাইকারি কাপড় বিক্রেতারা জানান, সিরাজগঞ্জের শাড়ি লুঙ্গির কদর সারাদেশে রয়েছে। দেশের বাইরেও রয়েছে এখানকার কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা। প্রতি রবিবার ও বুধবার আমাদের শাহজাদপুর কাপড়ের হাট বসে। এ হাটে দেশের ক্রেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারতীয় পাইকাররাও কাপড় ক্রয় করে। এ হাটের শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কাপড় ভারতে রফতানি হয়।