সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে জনসচেতনতা সভা হলো
ইফতেখার আহমেদ ফাগুন ওয়াল্র্ড ফিশের ইকোফিশ দলের গবেষকদের ভোলার চরফ্যাশনের সামরাজ ঘাটে জেলে, মাঝি, আড়ৎদারদের সঙ্গে সাগরের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে সবার করণীয় শোনাচ্ছেন ও ছবি দিয়েছেন
আজ বৃহস্পতিবার ১৭ ফেব্রুয়ারি-বাংলাদেশের মাছের অন্যতম প্রজননক্ষেত্র ও আধার এবং প্রাকৃতিক আহরণক্ষেত্র ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মৎস্য ঘাটে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ইউএসএইডের আয়োজনে ‘ওয়াল্ড ফিশ বাংলাদেশ’র ‘ইকোফিশ-২’ প্রকল্পের আওতায় একটি জনসচেতনতা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
শিরোনাম ছিল-‘সামুদ্রিক জীবপ্রজাতি রক্ষায় সমুদ্রগামী জেলেদের মধ্যে সচেতনতা সভা’। ওয়াল্ড ফিশ বাংলাদেশের ইকোফিশ প্রকল্পকে এখানে কাজ করতে সহযোগিতা করছে মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য অধিদপ্তরের ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলা শাখা অফিস। তারা এই সভাটি যৌথভাবে আয়োজন করেছেন-এনহান্সড কোস্টার ফিশারিজ ইন বাংলাদেশ (ইকোফিশ) অ্যাকটিভিতে। যার মানে হলো-বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোর মৎস সম্পদ বাড়িয়ে তোলা।
বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ ও জাতীয় মাছ ইলিশের প্রাকৃতিক যে কটি আহরণ ক্ষেত্র আছে, তার অন্যতম হলো ভোলার এই চরফ্যাশন। ভোলা এই দেশের অন্যতম দ্বীপ জেলা। প্রতি বছর চরফ্যাশন থেকে বিপুল পরিমাণ ইলিশ ধরেন এই দেশের জেলে সম্প্রদায়। এছাড়াও আশপাশের নদীগুলো থেকে এখানে অনেক মাছ পাওয়া যায়। এখানে প্রধান নদী মেঘনা।
সামরাজ ঘাটে অন্তত দুই হাজার জেলে নৌকা কাজ করে। প্রতিটি নৌকাতে অন্তত জনা দশেক জেলের জীবনধারন হয়। আড়তদারই আছেন শখানেকের বেশি।
ইউএসএইড হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারীভাবে সাহায্য করা দাতা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশে তারা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন।
ওয়াল্ড ফিশ সারা বিশ্বজুড়ে মাছ ও জলজসম্পদরাজির উন্নয়ন, জলের প্রাণী ও উদ্ভিদকূলকে উন্নত করার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রতাকে কমাতে কাজ করে চলেছে।
ওয়াল্ড ফিশ বাংলাদেশের অন্যতম প্রকল্প হলো ইকোফিশ। প্রথম প্রকল্প শেষ হবার পর এখন ইকোফিশের দ্বিতীয় ধাপ চলছে।
বাংলাদেশে ‘ইকোফিশ-২’ প্রকল্পে গবেষক হিসেবে কাজ করা সহকারী গবেষক মোনাইম হোসাইন চরফ্যাশনে বঙ্গোসাগরের এই অংশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে জনগণের ভূমিকা ও করণীয় সম্পকে জনসচেতনতা সভাটি উপস্থাপনা করেছেন।
ওয়াল্ড ফিশের গবেষকরা জেলে, মাঝি ও আড়তদারদের কাছ থেকে বঙ্গোপসাগরের এই অংশের মাছ, জলের জীবন এবং প্রাণীকূলের বিচিত্র বসবাস সম্পর্কে জেনেছেন। তারা জেলেদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতা, সাগরের সঙ্গে বসবাসের মূল্যবান বক্তব্যগুলো শুনেছেন। আশপাশের নানা সমাজের মানুষের ভূমিকা পালন ও করণীয় বক্তব্যগুলো জেনেছেন। নিজেরা বৈজ্ঞানিকভাবে সাগরের মৎস্য ও জীবকুলের জীবনের অভিজ্ঞতা তাদের প্রদান করেছেন।
তারা এরপর সাগরে ভেসে থাকা শাপলা পাতাও যে সাগরের জীববৈচিত্র্য ও সম্পদরাজির বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়, সেটি বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের সবার অভিজ্ঞতাকে হালনাগাদ করেছেন।
বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের হাঙর, আশপাশের নদীগুলো থেকে ভেসে আসা ডলফিন বা শুশুক, বড়-ছোট আকারের কচ্ছপ, নানা জাতের মাছগুলোকে বাঁচালে তারা কীভাবে সাগরের প্রকৃতিকে রক্ষা করে ও বিনিময় প্রদান করে সেসব ভালোভাবে সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলেন ওয়াল্ড ফিশের গবেষকরা। তারা এই নিয়ে জেলেদের বক্তব্য শোনেন। নোট নেন।
অত্যন্ত বাস্তব, আগ্রহী ও হৃদয়গ্রাহী এই আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন সাগরের মানুষরা। চরফ্যাসনে ইকোফিশের আলোচনানুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে ছিলেন-সামরাজ মৎস্যঘাট ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতি সভাপতি হারুন আহমেদ, সামরাজ মৎস্যঘাট ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক কামাল মাঝি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন মাঝি।
জেলে, নৌকা, ট্রলারের মাঝি ও আড়ৎদার এবং দাদন ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে আলোচনা অনুষ্ঠানটির সভাপতি ছিলেন চরফ্যাশন সমরাজ মৎস্যঘাট সমবায় সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন পাটোয়ারী। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এই সাগরের হাঙর, শুশুক ও শাপলা পাতাও যে পরিবেশের জন্য, আমাদের বাঁচাতে খুব প্রয়োজনীয় সেটি আমারও তো জানা ছিল না। আজ সেগুলো আমরা জানতে পেরেছি।’ জেলেদের প্রতিনিধি হয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের এখন থেকে এই প্রাণীদের রক্ষা করতে ও সাগরকে বাঁচাতে আরো সহযোগিতা করতে হবে। সেজন্য কাজ করতে হবে।’
সভা শেষে তারা জেলেদের পোস্টার প্রদান করেন।
ওএস।