‘চেরি টমেটো’ চাষে সফল মাসুদ রানা
ভিনদেশি ‘চেরি টমেটো’ এর চাষ শুরু হয়েছে নওগাঁয়। আরম্ভকালীন এই উন্নত জাতের টমেটো চাষ করে সফলতা পেয়েছে নওগাঁর রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের বেতগাড়ী গ্রামের উদ্যোক্তা মাসুদ রানা তুফান।
তিনি তার ৫ শতাংশ জমিতে আরম্ভকালীন বিদেশি জাতের এই টমেটোর চাষ করেন। স্যোসাল মিডিয়ায় ভিডিও দেখে এই চেরি টমেটো চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। পরে লাল তীর কোম্পানি থেকে চেরি টমেটোর এই জাতের বীজ সংগ্রহ করেন। প্রথমবারের মতো এই উন্নত জাতের টমেটো চাষ করে জেলায় সাফল্য পেয়েছেন তিনি। ফলন হয়েছে ভালো। এই টমেটোতে উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। খেতে সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও অনেক। এদিকে তার এই সাফল্য দেখে স্থানীয় কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন ভিনদেশি এই টমেটো চাষে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাছ ভর্তি থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে ‘চেরি টমেটো’। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড় নতুন জাতের এই টমেটো। কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে তা গাঢ় লাল ও কমলা রং ধারণ করে থাকে। দেখতে খুবই সুন্দর, আকর্ষনীয়। এই জাতের টমেটো গাছ আকারে অনেক বড় ও মজবুত। প্রতিটি গাছ থেকে ৭-৮ কেজি টমেটো সংগ্রহ করা যায়। এই টমেটোর বীজ সংগ্রহ করে তা থেকে চারা উৎপন্ন সম্ভব।
এ বিষয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা তরুন মাসুদ রানা তুফানের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'স্যোসাল মিডিয়ায় এই ‘চেরি টমেটো’ চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হই। পরবর্তীতে লাল তীর একটি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে গত বছরের অক্টোবর মাসে বীজ সংগ্রহ করে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বীজ বপন করি। পরবর্তীতে বীজ বপনের ২০ দিন পর চারা তুলে জমিতে রোপর করি। রোপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে পাকা শুরু হয়। এটি লম্বাটে আঙুরের মতো দেখতে। গাছটিও প্রচুর লম্বা হয়। থোকায় থোকায় টমেটো ধরে। এটির পুষ্টিও দিগুন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রথমবার হিসাবে আমার ফলনও ভালো হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সম্পূর্ণভাবে অরগানিক পদ্ধতিতে চাষ করেছি। যা বিষমুক্ত ‘চেরি টমেটো’। ৫ শতাংশ জমিতে বীজ, পলি হাউস, মালচিং পেপার, সেচ, ওষুধ, শ্রমিক খরচসহ সব মিলে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মত। সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মত লাভ হতে পারে।'
মাসুদ রানা বলেন, 'এই ‘চেরি টমেটো’ আর ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যেই বাজারজাত করবো। তবে স্থানীয় বাজারে এর তেমন কোন চাহিদা নেই। বর্তমানে ঢাকার সুপারশপগুলোতে ‘চেরি টমেটো’ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা কেজিতে।'
মাসুদ রানা বলেন, 'ভিনদেশি এই টমেটো উৎপাদনে সফল হয়েছি। যদি ভালোভাবে বাজারজাত করতে পারি তাহলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে এর চাষাবাদ করবো। এছাড়া আমার এই চাষ দেখে অনেকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। সবাই এই টমেটো চাষাবাদ শুরু করলে বাজারজাত করাও সহজ হবে। শতভাগ চেষ্টা থাকলে কৃষকদের ভাগ্য বদলে যেতে সময় লাগবে না।'
রানীনগর উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি অফিসার আহসান হাবিব বলেন, বেলে মাটিতে শীতকালে ‘চেরি টমেটো’র চাষ করা হলে চাষিরা লাভবান হতে পারবেন। মাসুদ রানা তুফান বিশ্বের সবচেয়ে দামি এই ‘চেরি টমেটো’ চাষ করেছেন। তিনি এখানে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উপরে পলি নেট হাউস ও নিচে মালচিং পেপার বিছিয়ে এই টমেটো চাষ শুরু করেন। এই টমেটো চাষের ক্ষেত্রে বলা যায় সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতি। এখানে কোন প্রকার পোকামাকড় ঢুকার সম্ভাবনা নেই সে কারণে এখানে কোন রকম কিটনাশক দেওয়ার দরকার হয় না। সম্পূর্ণ কীটনাশকমুক্ত চাষ হচ্ছে এই ‘চেরি টমেটো’।'
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের টমেটোর মত এ টমেটো না। টমেটো আকারে ছোট এবং দেখতে অনেক সুন্দর, আকর্ষনীয় এবং খেত অনেক সুস্বাদু ও বেশি পুষ্টি গুণ সম্পন্ন। এই ‘চেরি টমেটো’ যৌবন ধরে রাখার ক্ষেত্রেও সহায়তা করে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এই উচ্চ মূল্যের ফসল চাষের ক্ষেত্রে মাসুদ রানা তুফানকে সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। এবং আমাদের সার্বিক পরামর্শ উচ্চ মূল্যেও এই চেরি টমেটো চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন তিনি। এছাড়াও আশেপাশের কৃষকরা এই চাষাবাদ দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এবং আমরা তাদেরকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিচ্ছি।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে ‘চেরি টমেটো’ ঢাকার বিভিন্ন সবগুলোতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করার মার্কেট গড়ে ওঠে নাই। আশা করি আগামীতে ‘চেরি টমেটো’ এই উপজেলায় আরও সম্প্রসারিত হবে এবং বেশি পরিমাণ উৎপাদিত হলে কৃষকদের বাজারজাত করার ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা ও লাভবান হবেন।'