লতা মঙ্গেশকরের সম্পত্তি
কিংবদন্তী গায়িকা লতা মঙ্গেশকর তাকে মনে রাখার বা মনে পড়ার জন্য কেবল স্মরণীয় গানগুলোকেই রেখে যাননি, ফেলে গিয়েছেন বিলাসবহুল কারের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা ও একগুচ্ছ সম্পদ। ৬ ফেব্রুয়ারি সব পরিজনকেও রেখে চলে গেলেন। তবে এই সম্পদশালী মানুষটির জীবন একেবারে দারিদ্রতায় শুরু হয়েছিল। ভালো করে খেতে পারেন না, ভাইবোন অনেক; রোজগারের জন্য পথে নামতে হলো ছোট্ট বয়সে বাবা চলে যাওয়ায়। ১৯৪২ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে উপার্জন শুরু করলেন লতা মঙ্গেশকর। তখন তার আয় ছিল মোটে ২৫ রূপী। এখন রেখে গিয়েছেন কয়েক মিলিয়ন রূপীর বিপুল সম্পত্তি। উপাজন করেছেন ৯২টি বছরে। তিনি মাসে আয় করতেন প্রায় চার লাখ রূপী। লতার বেশিরভাগ আয় ও সম্পদ ছিল তার গানগুলোর রয়ালিটির টাকা। তার সম্পত্তিগুলোও টাকা এনে দিত। অনেককিছুর মালিক ছিলেন। যে অত্যন্ত ব্যয়বহুল কারগুলোর জন্য লতা শখের ভিন্নতর গল্পে নাম করেছিলেন, তার শুরুতে শ্যাভরিলে নামের একটি গাড়ি কিনেছিলেন, তার মুম্বাইতে সিনেমায় গান শুরু করার পেশাজীবনে সাফল্য পেয়ে। কারটি দেখতে ও স্টাইলের জন্য ভারতে একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল। তার কেনা যেমন আছে, তেমনি তাকে যশ চোপড়া উপহার দিয়েছিলেন ই-ক্লাস মাসিডিজ কারটি, ভীর জারা ছবিতে বিস্ময়কর সুন্দর গানটি গাওয়ায়। তার একটি ক্লাইজলার কার আছে। বিলাসবহুল কারটি খুব জনপ্রিয় ছিল, ভারতের বাজারে প্রচুর দেখা গিয়েছে। আরেকটি কার তার সংগ্রহশালার বিউয়েক। এটিও বিলাসবহুল। অনেকগুলো বহুমূল্যের অংশ আছে ভেতরে, ফলে খুবই পছন্দ করতেন গাড়িপ্রেমীরা। গাড়ি কেনা বাদে, তিনি ছবি তুলতে পছন্দ করতেন। উপভোগ করতেন খুব। ফলে অনেকগুলো দামী পেশাদার ক্যামেরা কিনেছিলেন লতা। কিংবদন্তী এই শিল্পী একটি অত্যন্ত দামী বাড়ি কিনেছিলেন দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ধনীদের একটি এলাকাতে। সেই বাড়ি থেকে বিশেষ আকর্ষণ বারান্দাটিতে দাঁড়িয়ে পেডার রোডের অসম্ভব সৌন্দয দেখতেন। পেডার রোডের বাড়িটির নাম রেখেছিলেন তিনি ‘প্রভু ক্ঞ্জু’। তিনি তার বাড়িতে নানা উপলক্ষে মানুষকে দাওয়াত করতে পছন্দ করতেন। গানে তার পেশাজীবনটি আটটি দশক ধরে চলেছে। তখন লতা মঙ্গেশকর হিন্দি, তামিল, তেলেগু ও মারাঠি ভাষায় অনেক গান গেয়েছেন। তবে তিনি অনন্য সাধারণ অবদান রেখেছেন ভারতীয় হিন্দি ছবির গানগুলোতে। এই ছবিগুলোতেই যে ক্লাসিক গানগুলো গেয়েছেন, সেগুলো তখন যেমন মনমোহন করেছে; আজও করে যাচ্ছে, ভবিষ্যতেও তাই ঘটবে। এই কন্ঠটি সিনেমাগুলোতে যেমন, তেমনি দেশে ও সারা বিশ্বে ভিন্ন একটি পরিচয় ও প্রতিভা হিসেবে নিজেকে বিকশিত করেছে। তবে মানুষটি খুব সাদামাটা ও সাধারণ জীবন যাপন করে গিয়েছেন। সিনেমাতে তাকে পরের দিকে শাহরুখ খান, প্রীতি জিনতা ও রাণী মুখাজি সবসময় গাইয়েছেন। হিন্দি ছবির জন্য তিনি হাজারেরও বেশি সিনেমায় গান করেছেন। ভারতের ৩৬টির বেশি আঞ্চলিক ভাষায় গান রেকড করেছেন, অনেকগুলো বিদেশী ভাষায়ও তার গান আছে। কেউ, কেউ বলেছেন মোট প্রায় ৩শ ৬০ কোটি টাকার মালিক ছিলেন তিনি। তবে বেশিরভাগের মতে, তিনি ১শ ৮ থেকে ১শ ১৫ কোটি রূপীর সম্পদের মালিক ছিলেন। তার এই সম্পদের পুরোটা অসাধারণ সুন্দর কন্ঠটির জন্য, গান গেয়ে রোজগার করা। তাকে অনেকে ‘ভয়েজ অব মিলেনিয়াম’ বলতেন। তবে কখনো বিয়ে না করায়, ছেলেমেয়ে নেই বলে তিনি তার আত্মীয়স্বজনের জন্য সম্পদের পুরোটাই রেখে গিয়েছেন। লতা মঙ্গেশকরের শেষকৃত্য করেছেন তার ভাই গীতিকার হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর। তিনিই মরে যাওয়া বিশ্বখ্যাত এই গায়িকার সম্পদরাজির প্রধান উত্তরাধিকারী হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবারটি নিশ্চিত করেনি। এই ভাইটির সঙ্গে খুব বেশি ঘনিষ্ট ছিলেন তিনি। যখন ছোট ছিল, তাকে নিয়েই সবখানে যেতেন লতা মঙ্গেশকর। বোনকেও গভীর শ্রদ্ধা করতেন হৃদয়নাথ। ফিল্মফেয়ারের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে এমনও বলেছেন, আমাকে মানুষকে ও নিজেকে সম্মান করা এবং ইগোগুলোকে দমন করাও শিখিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গীতের গুরুও লতা মঙ্গেশকর। জানিয়েছেন, গান তিনি আমাকে শিখিয়েছেন, তারচেয়েও মূল্যবান এই কাজগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। তার চেয়েও অনন্য ছিলেন এইসব দিকে লতা মঙ্গেশকর। তিনি অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী ছিলেন। কেউই তার এই গুণগুলোকে কোনোদিন ভুলতে পারবেন না। আর কী ব্যতিক্রমী গায়িকা ছিলেন সেটি বলা বাহুল্য।