চোখে না দেখলেও পিছিয়ে নেই আবুল বাশার
নাম আবুল বাশার। বয়স ৪৬ বছর। বাড়ি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া ইউনিয়নের বালিদিয়া গ্রামে। আবুল বাশারের বয়স যখন আড়াই বছর তখন থেকেই তার দুটি চোখ অন্ধ। ছোটবেলা খেলা করতে করতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে পড়ে যায় বাশার। সেই সময় তার দুটি চোখ অন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসরা জানিয়েছেন, তার চোখ আর ভালো হবে না। এভাবেই শৈশব, কৈশর যৌবন পেরিয়ে বাশার ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। অন্ধ অবস্থায় আবুল বাশার নানা দক্ষতায় অনন্য। তিনি অন্ধ অবস্থায় নারকেল গাছে উঠে ডাব সংগ্রহ করা, ডাব কাটা, তাল গাছ কেটে রস বের করা, পুকুরে মাছ ধরা, করাত দিয়ে গাছ কাটা,বাশেঁর চটা তৈরি,মাঠে বিভিন্ন ফসলের পাতো দেওয়া ও নষ্ট টিউবওয়েল মেরামতের কাজ নির্বিঘ্নে করতে পারেন । বাড়ির দৈনন্দিন কাজকর্মও তিনি অন্ধ অবস্থায় করতে পারেন । তার এ অনন্য কাজগুলো দেখে বিশ্ময় প্রকাশ করেছে বালিদিয়া গ্রামবাসীসহ সাধারণ মানুষ । একজন সাধারণ মানুষ সমাজে যা করতে পারে না আবুল বাশার অন্ধ হয়ে এ কাজগুলো করে মানুষের মনে বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
আবুল বাশারের বাবা আবু তালেব বিশ্বাস (৭০) জানান, আবুল বাশারের বয়স যখন আড়াই বছর তখন সে একটি পুকুরের পানিতে পড়ে যায় । তারপর থেকেই সে চোখে কম দেখে । তাকে বড় চক্ষু চিকিৎসক দেখিয়েছি কিন্তু তারা বলেছে তার চোখ আর ভালো হবে না । পানিতে পড়ে গিয়ে তার চোখের মনিসহ অনেক অংশ নষ্ঠ হয়ে গেছে । ফলে তার চোখ আর ভালো হবে না । সে নিজের দক্ষতায় অনেক কাজ শিখেছে । সে বিবাহিত । তার ১ মেয়ে ২ ছেলে । তার নিজের কোনো জমি নেই । গ্রামের বিভিন্ন নারকেল গাছ, তাল গাছ পরিস্কার করে রস বানিয়ে গুড় তৈরি করে তার সংসার চলে । ২ ছেলে লেখাপড়া করছে আর,১ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে সে।
মহম্মদপুর বালিদিয়া গ্রামের গোলজার আহমেদ জানান,আবুল বাশার ছোট বেলা থেকেই অন্ধ । সে অন্ধ অবস্থায় নানা ধরনের কাজ করে গ্রামবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে । অনেক অলৌখিক ক্ষমতা আছে তার । তা না থাকলে সে অন্ধ অবস্থায় নারকেল গাছে উঠা,তাল গাছে উঠে রস বের করে গুড় তৈরিসহ নানা কাজ করতে পারে কিভাবে। পাশাপাশি আমরা দেখেছি সে কৃষি কাজও করতে পারে । তার পরিবারের সহযোগিতা ছাড়াই সে অনেক কাজ করতে পারে, এটা আসলেই খুবই কঠিন কাজ। আজ আবুল বাশার আমাদের গ্রামের গর্ব । আমরা গ্রামবাসী তার আপদে-বিপদে সব সময় তার পাশে আছি ।
অন্ধ আবুল বাশার জানান, আমি জন্মের আড়াই বছর থেকেই অন্ধ । চোখের চিকিৎসার জন্য খুলনা, ঢাকা অনেক স্থানে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়েছি কিন্তু তারা বলেছে আমার চোখ কোনোদিন ভালো হবে না ।
তিনি বলেন, দৃঢ় মনোবলের কারণে আমি ১০ বছর বয়স থেকে নারকেল গাছে উঠা,তাল গাছে উঠে রস বের করা ,ঝুড়ি বোনা,ডাব কাটা,নষ্ট টিউবওয়েল মেরামতের কাজ রপ্ত করতে সক্ষম হই । মনের জোরে বাড়িতে ও বিভিন্ন স্থানে চলাফেরা করি। বাইরে হাট-বাজারে যাওয়ার সময় ছোট ছেলের সহযোগিতায় চলাফেরা করি। আমার কাজগুলো ২০১৪ সালে ইত্যাদিতে প্রচার করা হয়। ইত্যাদিতে আমার কাজগুলো প্রচারের সাথে সাথে আমার খ্যাতি বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থানের অনেক মানুষ ও মিডিয়া আমার কাজ দেখতে আমার গ্রামে আসে । আমি তাদের আমার এই কাজগুলো দেখালে তারা খুশি হয়। আমি অতি দরিদ্র একজন মানুষ। আমার নিজের ভিটেমাটি ছাড়া আর কোনো জমি-জমা নেই। সামান্য অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষ করে যা পাই তাতে সংসার চলে না। ইত্যাদির মাধ্যমে আমি ১ লক্ষ টাকার একটি চেক পাই । সেই টাকা দিয়ে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেই । বর্তমানে গ্রামের বিভিন্ন গাছ পরিস্কার করি ,ঝুড়ি বানাই এসব কাজ করে কোনোমতে সংসার টিকে আছে ।
এ ব্যাপারে মহম্মদপুর বালিদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান বলেন,আবুল বাশার জন্মের আড়াই বছর থেকেই অন্ধ । সে অন্ধ অবস্থায় নানা কাজ করতে পারে । সে আমার ইউনিয়ন থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তার পরিবারের সার্বিক সহযোগিতার জন্য আমরা তার পাশে আছি । আগামীতে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা এলে বাশারকে আমরা তা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করব।
এসআইএইচ