দেশমাতৃকার টানে যুদ্ধ করে আজও স্বীকৃতি পেলেন না তারা
মুক্তিযুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনো স্বীকৃতি পাননি সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের দেবীগঞ্জ বাজারের মৃত তুফান বর্মণের ছেলে লক্ষ্মীন্দর বর্মণ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম তালিকাভুক্ত না হওয়ায় জীবনের শেষ বয়সে এসে অযত্নে-অবহেলায়, অভাব-অনটনে ভিক্ষাবৃত্তির মধ্য দিয়ে দিন কাটছে তার। কাধে-কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সহযোদ্ধারাও তার এই দুর্দশায় হতাশা ও অসহায়ত্বের কথা প্রকাশ করছেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর কাজী নূরুজ্জামানের নির্দেশে দেশমাতৃকার টানে যুদ্ধ করেন লক্ষ্মীন্দর বর্মণ। তার সহযোদ্ধা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিচরন দাস (লাল বার্তা নং-০৩১০০১০২৭), মো. আমিনুর ইসলাম ( লাল বার্তা নং ০৩১০০১০২০২), আশারু সরকার (লাল বার্তা নং-০৩১০০০১১১) ও চৈতন্য বর্মণ (লাল বার্তা নং-০৩১০১০২৪)।
তাদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিলেও দুঃখজনকভাবে আজও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লক্ষ্মীন্দরের নাম তালিকায় উঠেনি। জীবনের শেষ বয়সে এসে তিনি ভিক্ষা করে ৩ সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন লক্ষ্মীন্দরের সহ-যোদ্ধারা। পাশাপাশি লক্ষ্মীন্দরের নাম গেজেটভুক্ত করার দাবি জানান তারা।
অন্যদিকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও নাম তালিকাভুক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা। জীবনের শেষ মুহূর্তে একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজের নামটুকু মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দেখে যেতে চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রুহিয়া পূর্ব কুচি-শহর এলাকার মৃত ধন মোহাম্মদের ছেলে মৃত আজিজুল হক। কিন্তু তিনি সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে ও পরীক্ষা দিয়েও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নামটুকু যোগ করতে পারেননি। অবশেষে অসুস্থ হয়ে তিন বছর আগে মারা যান তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের ৬ নম্বর সেক্টর উইং কমান্ডার মোহাম্মদ খাদেমুল বাশারের নির্দেশে দেশ মাতৃকার টানে যুদ্ধ করেন আজিজুল হক। তার সহযোদ্ধা ছিলেন পজির উদ্দীন (মুক্তি বার্তা নম্বর- ০৩১০০১০১৩৯) মো: ইব্রাহীম (মুক্তি বার্তা নম্বর- ০৩১০০১০১৬৮) আব্দুল কাদের (মুক্তি বার্তা নম্বর- ০৩১০০১০৮৬)।
ভারতের থুকরা বাড়িতে যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন তিনি। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর্যন্ত সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন তিনি।
আজিজুল হককে মুক্তিযোদ্ধার তালিকাভুক্ত করতে এবং অসহায় পরিবারের দায়িত্ব নিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানান তার সহযোদ্ধারা। আজিজুল হকের স্ত্রী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমার স্বামী জীবন বাজী রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তিনি অনেকের কাছে ঘুরেছেন। অনেকবার ইউএনও স্যারের কাছে পরীক্ষাও দিয়েছে। তিনি তিন বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। আমি স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে গৌরবের সঙ্গে বাঁচতে চাই।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার (সাবেক) চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান বলেন, মৃত আজিজুল হক একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। আমিসহ আরো কয়েক জন আজিজুল হকের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেই। কিন্তু স্বাধীনতার এত বছরেও তার নামটি তালিকাভুক্ত হয়নি।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো. মান্নান বলেন, আমার কাছে কেউ কোনও আবেদন করেনি। যেহেতু সহযোদ্ধারা বলছেন-তারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা সেই হিসাবে যাচাই-বাছাই করে লক্ষ্মীন্দর ও আজিজুল হককে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান বলেন, আজিজুল হক ও লক্ষ্মীন্দরের পরিবার যদি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নামের জন্য আবেদন করে আমরা সহযোগিতা করব।
এসআইএইচ