রিকশার প্যাডেলে জীবনযুদ্ধ ৮০ বছরের মুনছুরের
বয়স ৮০ ছুঁইছুঁই মুনছুর আলীর। শারীরিক শক্তি কমেছে বয়সের ভারে। নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। প্রায় তিন যুগ ধরে রিকশার প্যাডেল চালিয়ে পেটে ভাত ও ওষুধের খরচ যোগাতে হয় তাকে। কিছুক্ষণ প্যাডেল ঘুরালে যেন দম আটকে যায় তার। তবুও থেমে নেই জীবনযুদ্ধ। এই রিকশা দিয়ে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়েই চলে মুনছুরের সংসার।
মুনছুর আলী গাইবান্ধার সাদুলাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের শালাইপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই গ্রামের মৃত টাঙ্গারু শেখের ছেলে। সম্প্রতি তার সঙ্গে দেখা হয় সাদুল্লাপুর শহরে। রিকশার প্যাডেল চালিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। গন্তব্যে না পৌঁছাতে শরীর হাঁপিয়ে উঠে তার। মাঝেমধ্যে হেঁটে টেনে নিয়ে চলেন রিকশা।
জানা যায়, ছিন্নমূল পরিবারের মুনছুর আলী। স্ত্রী-ছেলে ও তিন মেয়েসহ ৬ জনের সংসার। অন্ন-বস্ত্র যোগাতে সহায় সম্বল বলতে তার তিন চাকার রিকশা। দীর্ঘ ৩৬ বছর ধরে হাতে হ্যান্ডেল আর পায়ে প্যাডেল মেরে রিকশা চালিয়ে চলছে জীবিকা নির্বাহ। কয়েক বছর আগে রিকশা রেখে নামাজে গেলে রিকশাটি চুরি হয়ে যায়। ফলে থমকে যায় জীবনযুদ্ধ। পরে গাইবান্ধার এক চিকিৎসক তাকে একটি রিকশা কিনে দেয়। তবে সেটি ব্যাটারিচালিত নয়। তবুও থেমে নেই জীবনযুদ্ধ। জীবিকার তাগিদে পায়ে প্যাডেল মেরে যাত্রী বহন করে যাচ্ছেন তিনি।
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এই উপার্জনের টাকা দিয়ে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন মুনছুর আলী। একমাত্র ছেলেটিও বিয়ে করে হয়েছে আলাদা। জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই তার। এখন স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের জমিতে বসবাস তার। বৃদ্ধ বয়সেও নেই কোনো অবসর। সকাল হলেই রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়তে হয় তাকে। এর পাশাপাশি ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে ভুলেনি কখনো। তাকে রিকশা নিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে। তবে যাত্রী উঠে কম। বার্ধক্য বয়স আর প্যাডেল চালিত রিকশার কারণে যাত্রীরা উঠতে চায় না। খুব মিনতি করে যাত্রী তুলে নেন বৃদ্ধ মনুছুর আলী। এভাবে দিন শেষে যেটুকু উপার্জন হয় তা দিয়ে কোনোমতে চলছে সংসার। যেন নুন আন্তে পান্তা ফুরায় অবস্থা তার। শেষ বয়সেও মুনছুর আলী তপ্ত রোদ আর শীত-বৃষ্টি উপেক্ষা করে আয়রুজির আশায় রিকশা নিয়ে ছুটে চলা তার।
বৃদ্ধ রিকশাচালক মনছুর আলী জানান, ভূমিহীন তিনি। বয়সও এখন বার্ধক্য। ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস। সীমিত আয়-রোজগারে স্ত্রীকে নিয়ে কোনোভাবে বেঁচে আছেন।
তিনি আরও বলেন, বুড়া হওয়ার কারণে আমার রিকশায় কেউ উঠতে চায় না। তারপরও রিকশাটি যদি ব্যাটারি-চার্জার চালিত হতো তাহলে হয়তো কিছু যাত্রী পাওয়া যেতে। কিন্তু টাকার অভাবে গাড়িতে ব্যাটারি লাগাতে পারছি না।
সাদুল্লাপুর উপজেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ স ম সাজ্জাদ হোসেন পল্টন বলেন, বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটে মুনছুর আলীর সঙ্গে প্রায়ই দেখা হয়। জীবিকার সন্ধানে বার্ধক্য বয়সেও তাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে। রিকশাটি ব্যাটারিচালিত হলে ভালো হতো। তাকে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করা দরকার।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মানিক চন্দ্র রায় বলেন, দাপ্তরিক কোনো সুযোগ আসলে মুনছুর আলীর ব্যাপারে বিবেচনা করা হবে।
এসজি