চায়না কমলা চাষে কলেজ শিক্ষকের বাজিমাত
দেখতে অনেকটা দেশি কমলার মতো। আসলে এটি চায়না কমলা। লাল ও সবুজ রঙের আকৃতিতে দেখতে খুবই সুন্দর। খেতে মিষ্টি ও রসালো। এই কমলা সাধারণত আমাদের দেশে বেশি হয় না । কমলা চাষের জন্য ভালো মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী হওয়া প্রয়োজন। তবে মাগুরায় প্রথমবারের মতো চায়না কমলা চাষ করে বাজিমাত করেছেন আশুতোষ বিশ্বাস। তার কমলা বাগান দেখতে আসছেন এখন দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা। ভিড় করছে তার বাগানে।
শ্রীপুর উপজেলার চরপাড়া মধুপুর গ্রামের বাসিন্দা আশুতোষ। পেশায় তিনি একজন কলেজ শিক্ষক । ইউটিউব দেখে অনেকটা শখ করে নিজের ৩৩ শতাংশ জমিতে চায়না কমলার চাষ গড়ে তুলেন আশুতোষ। অত্যন্ত নিবিড় পরিচর্যা ও যত্নের সঙ্গে গাছগুলোকে বড় করেন তিনি।
সরেজমিনে মধুপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় শিক্ষক আশুতোষ বিশ্বাসের সঙ্গে। আশুতোষ বলেন, কমলা চাষের ইউটিউব দেখে ২০১৯ সালে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থেকে একটি নার্সারি থেকে চায়না জাতের ৬৫টি চারা গাছ সংগ্রহ করেন। এরপর তাদের পরামর্শে নিজের ৩৩ শতাংশ জমি চাষের উপযোগী করে রোপন করেন কমলার চারা। চারা রোপনের পর গাছের পরিচর্যা বাড়ান তিনি। নিয়মিত জৈব সার এবং তার পাশাপাশি সকাল-বিকাল দেখভাল করেন চারা গাছগুলোকে। ১ বছর পর তার ৬২টি চারা গাছ বেঁচে যায়। এ সময় তিনি আরো নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করতে থাকেন । ২ বছর পর চারা গাছগুলো একটু বড় হলে তিনি আগাছা পরিস্কার করে গাছের প্রতি আরো যত্নশীল হন । ২ বছর ৬ মাস পর গাছে ফুল আসলে তিনি স্প্রে দেন। এবার ১ মাস পর গাছে ফুল থেকে ফল আসতে শুরু করলে তিনি প্রতিটি গাছে নিয়মিত পানি দেওয়া শুরু করেন। ধীরে ধীরে ফল বড় হতে থাকে। এভাবে ৩ বছর পূর্ণ হলে তার ৫০টি কমলা গাছে পরিপূর্ণ কমলায় রুপান্তরিত হয়। প্রথমে কমলা সবুজ আকার ধারণ করে। তারপর সপ্তাহ খানেক পর হলুদ বর্ণ হয়। বর্তমানে প্রতিটি কমলার গাছে হলুদ- সবুজ কমলা ঝুলছে। যা দেখতে নিজের গ্রামবাসীসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছে বলেও জানান তিনি।
আশুতোষ বিশ্বাস আরও বলেন, আমার কমলা বাগানে এখন ৫০টি গাছে পরিপূর্ণ কমলা এসেছে । আমি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এগুলো বিক্রি করতে চাই। কমলার প্রতিটি গাছে ১২-১৫ করে কমলা ধরেছে। হলুদ-সবুজ বর্ণের এই কমলাগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুন সম্পন্ন । এ কমলা গাছগুলো বড় করতে আমার ৩ বছর পরিচর্যা করতে হয়েছে। নিয়মিত জৈব সারের পাশাপাশি অন্যান্য খরচ বাবদ ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমি একজন কলেজ শিক্ষক। নিজে সময় দিতে পারি না। তাই বাগান দেখাশুনা ও পরিচর্যার জন্য আরো ৩ জন শ্রমিক কাজ করে এখানে। এই বাগান থেকে আমি এবার ৩-৪ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করব বলে আশা রাখি। ইতিমধ্যে মাগুরাসহ পাশ্ববতী অনেক জেলার ব্যাপারী আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
তিনি বলেন, আমি নিজে প্রায় ২ হাজার চারা তৈরি করেছি। যার প্রতিটি চারা গাছ এখন বিক্রি করছি ১৫০ টাকায়। আমার এ চারা কিনতে দূর-দূরান্তের মানুষ ভিড় করছে বাগানে। আগামীতে কমলার পাশাপাশি অন্যান্য মিশ্র ফলের বাগান করার ইচ্ছা আছে আমার।
মাগুরা কৃষি বিভাগ বলছে, কমলা চাষের জন্য মাগুরার মাটি তেমন ভালো নয়। সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চলে এ চাষ ভালো হয়। তবে জেলার কিছু কিছু জায়গার মাটি খুবই ভালো। আমরা শুনেছি আশুতোষের একটি কমলার বাগান রয়েছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে কমলার চাষে সাফল্য
আসে। আমরা এ চাষে তাকে উদ্ধুদ্ধ করছি। আশুতোষের মতো মাগুরায় অনেকে এখন এ কমলা চাষের জন্য আমাদের কাছে আসছে। আমরা তাদের উপযুক্ত পরামর্শ দিচ্ছি এবং মাটি পরীক্ষার করে যদি উপযোগী হয় তাহলে চাষ করার পরামর্শ প্রদান করছি।
এসআইএইচ