‘নল্লির বিল’ যেন সরিষা চারার সবুজ গালিচা
সবুজ বর্ণের কচি সরিষা গাছে ছেয়ে গেছে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ‘নল্লির বিল’ নামের বিস্তীর্ণ একটি জলাভূমির শত শত বিঘা জমি। ক’দিন পরেই রং বদলে হলুদ ফুলে প্রায় ৪ হাজার বিঘা জমির রূপ বদলে দেওয়ার প্রস্তুতিতে প্রতিদিনই বাড়ছে সরিষার চাষ।
ইরি ধান নামের একটি মাত্র ফসল চাষের উপযোগী জমি হিসেবে চিহ্নিত নল্লির বিলে নির্ধারিত ফসল রোপনের আগেই বাড়তি ফসল হিসেবে ঘরে উঠবে সরিষা নামের তেলবীজটি। ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি চোখে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে এই ফসলের আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা।
প্রতিদিনই নল্লীর বিলের বিঘার পর বিঘা জমিতে সরিষা বীজ উঁকি দিচ্ছে চারা হয়ে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সরিষার চারা যেন সবুজ গালিচা হয়ে ঢেকে দিচ্ছে নল্লির বিল নামের জলাভূমিটির দিগন্ত প্রান্তরকে।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কোল ঘেঁষে অবস্থান নেওয়া সেই জলাভূমিটি এবার সাজতে শুরু করেছে নতুন সাজে। বিলের জমিতে কাজ করতে আসা চাষিরা জানান, প্রায় প্রতি বছরই বর্ষার শুরু থেকেই পানি জমতো দিগন্তবিস্তৃত নিচু এই জলাভূমিটিতে। তারপর বন্যা এলে তো আর কথাই নেই। তখন একুল-ওকুল ছাপিয়ে ভাসিয়ে দিত শতশত একর জমিসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। বর্ষা কাটিয়ে বন্যার পানি নেমে গেলেও কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কাদায় ডুবে থাকা জমিতে বোরো মৌসুমের ইরি ধান ছাড়া আর কোনো আবাদ হতো না এখানে। বিলের উপরের দিকে কিছু জমিতে সরিষা চাষ করা হতো। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় একমাত্র ফসল ইরি ধান আবাদের মধ্যবর্তী সময়ের রবি মৌসুমে তেলবীজ সরিষা চাষের বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরিষা চাষের সম্ভাবনাকে ঘিরে এ বছর নতুন রূপে প্রস্তুত হচ্ছে জলাভূমি ‘নল্লির বিল’।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বর্ষা মৌসুমে বন্যা না আসার কারণে এখানকার মাটির রস কমে গিয়ে অনেক আগেই সরিষা চাষের উপযুক্ত হয়ে গেছে। গত দুই সপ্তাহের মধ্যেই এখানে সাড়ে ৪শ’ বিঘা জমিতে বপণ করা হয়েছে সরিষা বীজ। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য মধ্যবর্তী ফসল হিসেবে রবি মৌসুমে চাষযোগ্য আবাদ বৃদ্ধির জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি রবি মৌসুমে নল্লির বিলের চাষিরা সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আশাতীত পরিমাণ জমিতে সরিষার চাষ হবে এবার। সরিষাচাষিদের সার, বীজ ও পরামর্শসহ সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও নল্লির বিলের চাষি জিয়াউল হক জানান, বিলের উপরের অংশের জমিতে আগে থেকেই সরিষার চাষ করা হয়। এখানে তেমন কোনো রাসায়নিক সার না দিয়েই সরিষা চাষ করা হয়ে থাকে। বরং সরিষার শুকনো পাতা আর ফুল ঝড়ে পড়ে বাড়তি জৈব সারের জোগান দেয় ইরি ধান চাষের জন্য। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার এ বিলের অনেকটা নিচু জমিতেও সরিষার চাষ করা হচ্ছে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ রেজা-ই-মাহমুদ জানালেন, উত্তরাঞ্চলে সরিষা চাষে এবার বিপ্লব বয়ে আনবে এই নল্লির বিল। চলতি মৌসুমে এখানে প্রায় সাড়ে ৪শ’ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে। চাষিরা বিপুল উৎসাহে সরিষা চাষে এগিয়ে আসায় একফসলী জমির এই নল্লির বিলে এবার ৭শ’ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অধিকাংশ জমিতেই এবার উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪ ও বারি-১৭ জাতের সরিষার বীজ বপণ করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এখানকার উৎপাদিত সরিষা দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি পূরণে এবার উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে।
আরএ/