বাংলাদেশের কৃষি বিপ্লবের নায়ক
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এই দেশের কৃষিখাতের মেরুদন্ড। বারবার এই ক্যাম্পাসের কথা আলোচনায় আসে। তাদের আবিষ্কার ও সাফল্য লেখা হয়। দেশের কৃষিতে উচ্চশিক্ষিত জনশক্তি তৈরি এবং বিকাশের কাজটি প্রধানত করে চলেন তারা। বাংলাদেশের কৃষি ও মৎস্যখাতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লিখেছেন হাবিবুর রনি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। কৃষিভিত্তিক উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫৯ সালে জাতীয় শিক্ষা কমিশন এবং খাদ্য ও কৃষি কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে, উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ও গবেষণা প্রসারের লক্ষ্যে। ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট। ময়মনসিংহ জেলা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দক্ষিণে পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকায় সবুজে ঘেরা ও ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে। শুরুতে ছিল মাত্র মাত্র দুটি অনুষদ। বর্তমানে ছয়টি অনুষদে মোট ৪৩টি বিভাগে তাদের কার্যক্রম আছে। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ১০৩ জন। ১ হাজার ২শ ৫০ একরের সুবিশাল এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো একে, একে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশ করেছেন মোট ৪৭ হাজার ২শ ৬৮ জন গ্র্যাজুয়েট।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
কৃষি বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আহরণের সুযোগ রয়েছে বিশ্বের সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। মানসম্পন্ন উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশে কৃষি উন্নয়নে তাত্তি¡ক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ তৈরি করাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি খাতকে দিয়েছে পূর্ণতা ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঘটিয়েছে ক্ষুধা-মন্দার অবসান। শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবদানের জন্য র্যাংকিংয়ে পর, পর দুইবার দেশসেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
আছে আমাদের সব
ভৌত অবকাঠামোর দিক থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরিপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। কি নেই এখানে? রয়েছে ছয়টি অনুষদীয় ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ছাত্রদের জন্য নয়টি ও ছাত্রীদের জন্য চারটি আবাসিক হল, ক্রীড়া শিক্ষা ভবন, কৃষি সস্প্রসারণ ভবন, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ভবন, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, প্রকৌশল ভবন, দুই হাজার আসনবিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ৬শ ৫৭টি আবাসিক ইউনিট, ১২টি ফার্ম, ফিল্ড ল্যাবরেটরি, ক্লিনিক ও ওয়ার্কশপ সেন্টার। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ক্রীড়া প্রশিক্ষণ বিভাগ, বৃহৎ স্টেডিয়াম, চারতলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউজ, অতিথি ভবন ও ক্লাবভবন। দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট (বিনা) এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউট (বিএফআরআই)-এর প্রধান কার্যালয় এ ক্যাম্পাসেই অবস্থিত।
ভালোবাসায় ঘেরা ভুবন
প্রকৃতিকন্যাখ্যাত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সৌন্দর্যের দিক থেকে অনন্য ও অসাধারণ। একদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুক চিরে চলে যাওয়া রেলপথ অপরদিকে কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস আরও সৌন্দর্যমন্ডিত হয়ে ওঠে। এ সময় দেখা যায় রং-বেরংয়ের গাঁদা, ডালিয়া, জিনিয়া, সূর্যমুখী, গোলাপসহ আরও বিভিন্ন ফুলের সমাহার। মনে হয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থান যেন এক, একটি নার্সারি। সৌন্দর্যের মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি স্থানে। ১ হাজার ২শ ৫০ একরের মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ বেষ্টিত ক্যাম্পাসটিতে আরও রয়েছে সুবিশাল নারিকেল বাগান, কলা বাগান, আম বাগান, লিচু বাগান, পাম্প ফলের বাগান। সবগুলো ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকদের বহু যত্নে গড়া। সৌন্দর্যমন্ডিত বাঁধানো ব্রক্ষ্মপুত্র নদের পাড়, ঈশা খাঁ লেক, বৈশাখী চত্বর সহ অনেক কিছুই আছে।
আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে দেশের একমাত্র জার্মপ্লাজম সেন্টার। ফলদ বৃক্ষের একটি অনন্য সংগ্রহশালা। গবেষণায় বিশ্বের মধ্যে প্রথম যেমন, তেমনি আয়তনেও দ্বিতীয়। প্রায় ৩২ একর জায়গা জুড়ে এবং সাড়ে এগারো হাজার ফল ও মসলার প্রজাতি নিয়ে গড়ে ওঠা জার্মপ্লাজম সেন্টারটি গত ২২ বছরে ৬৭টি ফলের নতুন জাত আবিষ্কার করেছে। ২০১৩ সালে ‘বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় জার্মপ্লাজম সেন্টার’ বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক লাভ করেছে। আরো লাভ করেছে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক, ‘মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক’। শুধু ফল আবিষ্কারই নয়, উদ্ভিদ সংরক্ষণেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাক্ষর রেখেছে। উদ্ভিদ সংরক্ষণের জন্য তৈরী করা হয়েছে ‘বোটানিক্যাল গার্ডেন’। বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষণের দিক থেকে বাংলাদেশে এক নম্বর। দুষ্প্রাপ্য দেশি-বিদেশি উদ্ভিদসহ প্রায় ছয় শতাধিক গাছ-গাছালির সংগ্রহ নিয়ে ২৫ একর জায়গা জুড়ে ব্রহ্মপুত্র নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে সমৃদ্ধ গার্ডেনটি। অর্কিড ও বিভিন্ন বিলুপ্ত প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণের পাশাপাশি উপকূলীয়, ঔষুধি, জলজ, মরুজ, ফলদ উদ্ভিদসহ বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির উদ্ভিদও সংরক্ষণ করা রয়েছে। রয়েছে ‘কৃষি জাদুঘর’। কৃষির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত, কৃষি ও কৃষকের সঙ্গে সম্পৃক্ত রূপসী গ্রাম-বাংলার হারিয়ে যাওয়া ও বিলুপ্তপ্রায় বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের নিমিত্তে জাদুঘরটি ২০০৭ সালে গড়ে তোলা হয়েছে। ছয়টি প্রদর্শনীকক্ষে বড়, বড় কাঁচের কাঠামোতে সাজানো রয়েছে পাঁচ শতাধিক উপকরণ। প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত জাদুঘরটি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র কৃষি জাদুঘর। পাশাপাশি রয়েছে ‘মৎস্য জাদুঘর’। ‘বায়ো-ডাইভারসিটি সেন্টার’-বিচিত্র প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ারই সবচেয়ে বড় মৎস্য জাদুঘর। শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অন্বেষণের জন্য আরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বৃহৎ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী। কৃষি বিষয়ক বই সংগ্রহের বিচারে এশিয়ার বৃহত্তম। প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার বই। রয়েছে ১৬ হাজার ২০৫টি গবেষণামূলক থিসিস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে রয়েছে ‘গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জিটিআই)’। তাতে ক্লাস পরিচালনার আধুনিক কলাকৌশল ও যুগোপযোগী তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং গবেষণাকৌশলের নিত্য, নতুন আধুনিক পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারেন অধ্যাপকরা। দক্ষ কৃষিবিদ তৈরীতে ও কৃষিবাজার ব্যবস্থাপনার জন্য অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ‘ইনস্টিটিউট অব এগ্রি-বিজনেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’, খাদ্যনিরাপত্তায় চালু হয়েছে ‘ইন্টার-ডিসিপ্লিনারি ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি (আইআইএফএস)’, হাওড়াঞ্চলের কৃষি উন্নয়নের জন্য ‘হাওড় ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’, পশু-পাখিদের চিকিৎসা ও সেবার জন্য ‘ভেটেরিনারি ক্লিনিক’ ও ‘অ্যানিমেল ব্লাড ব্যাংক’ আছে। রয়েছে গাছের ‘প্ল্যান্ট ডিজিজ ক্লিনিক’।
বাংলাদেশের কৃষিতে বিপ্লবী গবেষণা
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতেও অনন্য নজির স্থাপনে সক্ষম হয়েছে। কৃষি ও কৃষি উন্নয়নে দেশে যত গবেষণা পরিচালিত হয়, সিংহভাগই এই বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক। নতুন ও সহজতর কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তাদের কৃষি শিক্ষক-বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার অন্ত নেই। তাদের গবেষণায় উদ্ভাবিত নতুন, নতুন প্রযুক্তিগুলোর মাধ্যমে ক্রমাগত মাছ, মাংস, শাকসবজি, দুধ, ডিম উৎপাদন বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণে এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছে। নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাউধান-৬৩’, ‘বাউধান-২’, ‘ব্লাস্ট’ রোগ প্রতিরোধী ‘বাউধান-৩’ নামে উকসীধানের জাত, ‘বাউকুল’, উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন ফসলের জাত যেমন-‘সম্পদ’, ‘সম্বল’, ‘বাউ এম/৩৯৫’, ‘বাউ এম/৩৯৬’ নামের ৪টি উকশী সরিষা জাত, সয়াবিন, আলু, মুখীকচুসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, ‘বিদ্যুৎবিহীন হিমাগার’, ‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’, ‘কিটনাশক’, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ, ‘বাউ-এসটিআর’ নামের ধান শুকানোর যন্ত্র প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য। ‘সার’ ও ‘বীজ’ ছিটানো যন্ত্র’, ‘পাম অয়েল মেশিন’, ‘আগাছা দমন যন্ত্র’-ও উদ্ভাবন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি মৎস্যখাতের প্রযুক্তিকেও বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে এগিয়ে নিয়েছেন তারা বহুদূর। এই গবেষণার মধ্যে ‘খাঁচায় দেশি কই মাছ চাষ’, ‘সুপার মেল তেলাপিয়া’, ‘তারাবাইম’, ‘গুচিবাইম’, ‘বড় বাইম’ ও ‘গাঙ মাগুর’র কৃত্রিম প্রজনন, ‘পানিতে একই সঙ্গে সবজি ও মাছ চাষ (অ্যাকোয়াফনিক্স ও অ্যাকোয়াজিওফনিক্স)’, ‘ইলিশ’ ও ‘সিলভার কার্প’ মাছের স্যুপ ও নুডলস তৈরী প্রযুক্তি, ‘ভাগনা’ মাছের জাত উন্নয়ন, ‘মাছের ক্ষত রোগের প্রতিকার’ এবং ‘ইলিশ মাছের জিনোম সিকোয়েন্স’ আবিষ্কার যা বিশ্বে প্রথমবার। পশুসম্পদ বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির মধ্যে ‘ব্ল্যাক বেঙ্গলের জিনোম সিকুয়েন্স’, ‘বাউ ব্রো-হোয়াইট’ নামে ব্রয়লার মুরগির জাত উদ্ভাবন, ‘মোরগ-মুরগির রাণীক্ষেত রোগ’ ও ‘ফাউল পক্সের প্রতিষেধক টিকা’ উৎপাদন, ‘ব্রুসেলোসিস রোগের জীবাণু’ শনাক্তকরণ ও জিনোম সিকুয়েন্স সম্পন্নকরণ, মাংস উৎপাদনকারী ‘ব্রাহমা ক্রস গরু’ উৎপাদন, ‘হাঁসের প্লেগ রোগের ভ্যাকসিন’ ও ‘হাঁস-মুরগির কলেরার ভ্যাকসিন’ তৈরী, ‘হাঁস-মুরগির সুষম খাদ্য তৈরী’, ‘হিমায়িত ভ্রুণ থেকে ভেড়ার কৃত্রিম প্রজনন’, তাদের ‘ডেঙ্গু ভাইরাসের সিরোটাইপ নির্ণয় প্রযুক্তি’, ‘কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিতে ব্ল্যাক বেঙ্গলের সিমেন সংরক্ষণ’, ‘ছাগলের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল’ ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য। বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল ইউনিভাসিটি রিসার্চ সিস্টেমে (বাউরেস) এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ৩শ ৪৯টি দেশি-বিদেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান
শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামও এই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষকের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী। একজন শিক্ষকসহ ১৮ জন শহীদের নামগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ‘মরণ সাগরে’ লিপিবদ্ধ করা রয়েছে। শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে। ‘শহীদ জামাল হোসেন হল’, ‘শহীদ নাজমুল আহসান হল’ ও ‘শহীদ শামসুল হক হল’। ১৯৫২’র ভাষা শহীদ ও একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য রয়েছে ‘শহীদ মিনার’, ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ’, গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘বিজয়-৭১’, বধ্যভূমিতে ‘স্মৃতিস্তম্ভ’।
‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিচত্বর’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদার স্মৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতিচত্বর’। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রয়ারি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতায় এসে এদেশের কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর পদমর্যাদা দিয়েছিলেন। তবে সেটি বাস্তবায়ন করেছেন তার মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের দেওয়া পদমর্যাদা ও সম্মান অক্ষুন্ন রেখে চলেছেন দেশের সেরা কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি গ্রাজুয়েটরা। তারা কর্মক্ষেত্রে তাদের মেধা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত সফলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের সেবা করে চলেছেন।
এআইপি উপাচার্য
দেশের একমাত্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান ‘এগ্রিকালচারালি ইম্পরটেন্ট পার্সন’ বা ‘এআইপি’ নির্বাচিত হয়েছেন। ‘এআইপি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান’ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সামগ্রিক কার্যক্রম সম্পর্কে বলেছেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ও পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকে নিরলসভাবে উচ্চমানের কাজ করে যাচ্ছে। নিরাপদ খাদ্যের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ফুড সেইফটি ম্যানেজমেন্ট অনার্স এবং মাস্টাস ডিগ্রিও চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে পাঁচ শতাধিক প্রকল্প চলমান রয়েছে। জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, নেদারল্যান্ডস, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বরাবরের মতো এখন ১শ ২৬টি যৌথ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কৃষিযন্ত্র উদ্ভাবনে কাজ শুরু হয়ে গেছে। শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিকীকরণ এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।’
এক নজরে-
প্রতিষ্ঠাকাল- ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট
গ্রাজুয়েট সংখ্যা- ৪৭,২৬৮ জন
অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী- ৭,১০৩ জন
শিক্ষক- ৫৮১ জন
অনুষদ- ০৬ টি
বিভাগ- ৪৩ টি
হলসংখ্যা- ১৩ টি
ওয়েবসাইট-www.bau.edu.bd.
ওএফএস।