শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আইআইআর পেশাজীবিদের নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে
নব চিন্তা আমাদের এগিয়ে দেয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তর্কের কোনো শেষ নেই। কোনোদিন হবেও না বোধহয়। তাদের মান, লেখাপড়ার পদ্ধতি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় খোলা, কাজ ও চাকরির ব্যবস্থা করা এই হলো চিরকালের আলোচনা। এই আলোচনায় নতুন ঘি ঢেলেছেন দারুণ এক লেখায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র খায়রুল ইসলাম
বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলছে। আরও তিনটি অনুমোদন আছে। এখনও কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যিই নতুন বেসরকারী ও সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পাচ্ছে। অনুমোদন পাওয়া পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে- নারায়ণগঞ্জে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোর সদর উপজেলায় ড. ওয়াজেদ আলী মিয়ার নামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নাটোরের সিংড়া উপজেলায় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় আরেকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের নির্বাচনী এলাকা মেহেরপুরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
দেশে আবাদি জমির যে সংকট, তার ওপর নিত্যনতুন আবাসন, কলকারখানা, বাজার, শহর, অফিস আদালত হচ্ছে যার অধিকাংশই অপরিকল্পিত। জনসংখ্যা বাড়ছে। অথচ আবাদি জমি কমছে। আমাদের এদিকে কোনো ভ্রক্ষেপ নেই। আবার পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে জমির ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অথচ বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মান সম্মত শিক্ষাপ্রদান করছে। সেগুলোতে মোটামুটি শিক্ষাদানের পরিবেশ রয়েছে। অধিকাংশগুলোতেই তা নেই। আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের দেশে একটি চলমান বাস্তবতা। অনেক ভালো বেসরকারী স্কুল, কলেজ মাদ্রাসা, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদ্যালয় কলেজ লেভেলে বাংলাদেশে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে তেমন কোনো পড়ালেখা হয় না-এই হলো বহুকালের চলমান বিশ্বাস। আবার সরকারী ডিগ্রি ও অনাস লেভেলের কলেজগুলোর মান খুব খারপ এই হলো বাস্তব ধারণাগত বহুকালের অবস্থা। পড়াতে হলে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন যেতে হবে।
রাষ্ট্র আমাদের দেশের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারে। তারা নচেৎ আইইআরের শিক্ষা বিশেষজ্ঞ পেশাজীবিদের সেখান নিয়োগ দিতে পারেন। নতুন পদ ও ভালো কাজ হতে পারে।
রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ হলে একদিকে যেমন জবাবদিহিতা সৃষ্টি হবে, যেগুলো পুরোপুরি অধ্যাপক নিয়ন্ত্রিত, তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ভালো পথে বৃদ্ধি পাবে। মানসম্মত শিক্ষাদানে তারা আরও বেশি উৎসাহিত হবেন। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতেও অবদান রাখতে পারবে। উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের বিদেশে যেতে হবে না অনেককেই। সেটি আরেকটি চল।
চীনে সমাজতান্ত্রিক দল ক্ষমতায় আসার পর নাকি দেশের বহু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়েছিল। তারা হিসেব করে দেখেছিলো, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থান করা আসলেই কঠিন কাজ। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের চেয়ে তারা কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দিয়েছেন। আমাদের দেশে সেটি ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পযায়ে কারিগরি বা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির আগে ছিল না। এখন এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের নতুন পথে নিয়ে যবে। কারিগরি শিক্ষা থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রের কাছে চাকরির জন্য ধর্না দেবেন না, রাষ্ট্রকে জিম্মি করবে না ও নতুন কারিগরি খাতে আয় ও সম্পদ বাড়াবেন।
চীন কারিগরি শিক্ষা ও প্রকৌশল বিদ্যায় কতটা এগিয়েছে সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমাদের যেসব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেগুলোর দিকে রাষ্ট্রীয় নজর আরো দিলে আমরা আরো বিশ্বমানের শিক্ষাদান করতে পারব। তবে চাপানো যাবে না। আমরা আমাদের চলতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে যদি আসলেই নজর দিই তাহলে সেগুলো আরো বিশ্বমানের শিক্ষার্থী, গবেষক, চাকরিজীবি তৈরি করবে।
আামাদের দেশের বিশ্বিবদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বেকার তৈরীর কারখানায় পরিণত হচ্ছে? অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো, জীবনের চাহিদাগুলো মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটুকু সময় উপযোগী? উৎপাদন সক্ষম, আত্মনির্ভশীল গ্র্যাজুয়েটদের তৈরির দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ও নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আরো বাড়ানো সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করছি |
মো: খায়রুল ইসলাম, ছাত্র, ফিশারিজ বিভাগ, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুর।
ছবি : চুয়েটের স্থবির ক্যাম্পাসের অনিন্দ্য ছবি, চুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটির ফেসবুক পেইজ থেকে নেওয়া।
ওএফএস/