মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

রূপকথাকে হার মানানো বিরুর হাজার দুয়ারের প্রাসাদ

পেশায় তিনি প্রতিবন্ধীতা ও উন্নয়ন পরামর্শক। তবে নেশা ঘোরা ও ছবি তোলা। বিশেষ শখ হেরিটেজ সাইটগুলোতে যাওয়া, যেগুলোর বয়স অন্তত ১শ। ডা. নাফিসুর রহমান এবার গেলেন ইতিহাসের এমন এক আঁতুড় ঘরে যেখানে চমকে দেওয়া গল্প আছে। একটি সাধারণ পরোপকারী ছেলে কীভাবে জমিদার হলো, তার রাজবাড়ি ও পতন-কুঁড়ে, কুঁড়ে খাবে আপনাকে। লেখকের চমকপ্রদ ছবি তো আছেই। সিরিজের প্রথম রচনা বিরুবাবুর জমিদার বাড়ি।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের হাজার দুয়ারী প্রাসাদের কথা আমরা অনেকেই শুনেছি। অনেকে দেখেছিও। একটি ভবনে আছে ১ হাজারটি দরজা! রাজা, বাদশা বা বড় মাপের কোনো জমিদার ছাড়া এমন প্রাসাদ বানাবার ক্ষমতা কয় জনেরই বা আছে? কিন্তু বাংলাদেশেও যে এরকম একটি ১ হাজার দরজার প্রাসাদোপম বাড়ি ছিল, কাঠামোটি পুরোপুরি রয়েছে, তা আমরা কজন জানি? চলুন ঘুরে আসি প্রাসাদটি।

রাজশাহী জেলার সর্ব পূবের উপজেলা বাগমারা। তার পরেই নাটোর জেলার শুরু। মোঘল সম্রাজ্য চলার সময়ে অঞ্চলটি ছিল আত্রাই পরগনার অধীনে। উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি স্বতন্ত্র হয়ে যায়। এই বাগমারা উপজেলাতেই নির্মিত হয়েছিল আমাদের দেশের একমাত্র হাজারদুয়ারী প্রাসাদ। ‘বিরকুৎসা হাজার দুয়ারী জমিদারবাড়ি’ নামে পরিচিত ও বিখ্যাত।
আত্রাই’র জমিদার ছিলেন রাজা গোপাল ধাম। কোনো পুত্র সন্তান ছিল না তার, ছিল কেবল একটি কন্যা। তার নাম ছিল প্রভাতী বালা। প্রভাতী দেখতে যেমন ছিলেন সুন্দরী, তেমনই ধর্ম-কর্ম, লেখাপড়া ও শিল্প-সাহিত্যে ছিলেন তিনি নিবেদিত ও পারদর্শী।

রাজা গোপাল ধামকে প্রায়শই জমিদার কার্যে দিল্লী যেতে হতো। যেতে আসতে ভারতের বহু শহর ঘুরে বেরিয়েছেন তিনি। ধর্মভীরু মানুষটি বড় কোনো মন্দিরের কথা জানতে পেলেই গিয়ে পূজো দিতেন। যখনই তিনি কোথাও গেছেন, স্ত্রী ও কন্যার জন্য উপহার নিয়ে ফিরতে ভুল করতেন না। এভাবেই একবার রাজা গেলেন বানারাস। শখ করলেন, ফেরার সময় স্ত্রী আর কন্যার জন্য দুটি স্পেশাল শাড়ি কিনবেন কিন্তু মন্দিরে গিয়ে হঠাৎ গোলক ধাম অসুস্থ হয়ে পড়লেন। স্থানীয় এক যুবক তাতে খুব সাহায্য করল। একেবারে অজানা, অচেনা যুবকের সঙ্গে তাই তার কয়দিনেই খুব সখ্যতা গড়ে উঠল। অল্পবয়সী হয়েও সে ধর্মভীরু, বেশ শিক্ষিত, বিচক্ষণ ও উচ্চাকাংখী। স্থানীয়রা সবাই জানতেন, সে অত্যন্ত পরোপকারী। নাম বিরেশ্বর ব্যানার্জি হলেও মন্দির এলাকায়, খেলার মাঠে বা শিক্ষাঙ্গনে কী সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে সবাই বিরু নামে একনামে চিনত তাকে।

বিরুর বাবা-মা বছর তিনেক আগে কাশী গিয়ে আর ফেরেনি, অসুস্থ হয়ে পথেই মারা গেছেন। ছোট দুটি ভাইকে দেখাশোনা করছে সে। তবে বিরুর গায়ের রঙ একেবারে কৃষ্ণবর্ণ, তার ওপর ছেলেবেলায় বসন্ত হওয়ায় তার গভীর ক্ষত রেখে গেছে সারা গায়ে, মুখে। তার পরও তাকে খুব মনে ধরল রাজা গোপাল ধামের। তাদের তিন ভাইকে তিনি নিয়ে এলেন আত্রাই।

বিরাট জমিদার বাবুর দফতরে খুব দ্রুত কাজ শিখলো বিরু। তার উপস্থিত বুদ্ধি ও বিচার, বিশ্লেষণ ক্ষমতায় মুগ্ধ হলেন রাজা গোপাল ধাম। তবে প্রভাতী বিরুকে প্রথমবার দেখে খুব ভয় পেয়েছিল। তারপর আস্তে, আস্তে ভয় কেটে গেছে, সয়ে গেছে তাকে। শুধু তাই নয়, তার আচার-ব্যবহার, জ্ঞান, বুদ্ধিতে বেশ মুগ্ধ হলো রাজকন্যা প্রভাতী। কিছুদিন পর ধুমধাম করে একমাত্র কন্যার বিয়ে দিলেন বাবা গোপাল ধাম বিরুর সঙ্গে। বিয়ের যৌতুক হিসেবে ‘বিরেশ্বরপুর’ নামে একটি নতুন পরগনা বানিয়েছেন। তার দায়িত্বও দেন বিরেশ্বর ব্যানার্জিকে। এছাড়াও একটি বড় প্রাসাদ বানাবার জন্য বড় অঙ্কের টাকা দিলেন তিনি।

বানারস থেকে আসার পথে বিরু মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারী প্রসাদ দেখেছে। তার শখ হলো, সে এ রকমের একটি প্রাসাদ বানাবে কিন্তু বাধ সাধলো বউ প্রভাতী। তার শর্ত হলো-দুটি প্রাসাদ একই রকম হতে পারবে না। দুজনে মিলে আলোচনা করে একটি হাজারদুয়ারী প্রাসাদের পরিকল্পনা করলেন তারা। সেভাবেই ১৫ একর এলাকা পরিবেষ্টিত করে দুই একর জমির উপর জন্ম নিল বিশাল এই দোতলা রাজপ্রসাদ। মোট ১,০০০টি দরজা আছে, একটিও জানালা নেই!

বিরু-প্রভাতীর হাজারদুয়ারী প্রাসাদের কয়েকটি অংশ। মূল ভবনটি দক্ষিণমুখী। প্রতি তলায় দুটি করে বড় ঘর আছে। দুটি করে মাঝারী আকারের ঘর সেগুলো আর দুই পাশে আছে ষড়ভুজাকৃতির দুটি ছোট ঘর। প্রতি তলার এ মাথা থেকে সে মাথা পর্যন্ত লম্বা ও ৯ ফুট প্রশস্ত বারান্দা। পুরো বাড়ির মেঝে, সিঁড়িগুলো দামী মার্বেল পাথরে মোড়া। সকল দরজা হলো তিন স্তরের। এক স্তরে কাঠের কাজ আছে। সুদূর বার্মা থেকে আনা হয়েছে দামী সেগুন কাঠ। তার ভেতরে কাঠের ফ্রেমে বসানো হয়েছে নানা রঙের নানা ডিজাইনে কাঁটা কাঁচ। যেন দিনের আলোয় ঘর নানা রঙে রাঙানো থাকে। শেষ স্তরে লোহার শিক।

বিরু-প্রভাতী তাদের বহু শখের প্রাসাদের বারান্দায় ঝুলানেন ভারী পর্দা। যেন গ্রীষ্মকালের তাপদাহেও অসুবিধা না হয়। বারান্দাগুলো চওড়া হওয়ায় বর্ষাকালেও পানির ছাঁট ঘর পর্যন্ত আসতে পারতো না। শীতকালে সারাদিনই বারান্দায় থাকতো পর্যাপ্ত সুর্যরশ্মি। মূল বাড়ির দুই পাশে করিডোর টেনে গড়া হয়েছে আরও দুটি সুসজ্জিত বাড়ি। এগুলো বানানো হয়েছে বিরুবাবুর দুই ভাই দুর্গাবাবু ও রমাবাবুর থাকার জন্য। এই তিনটি অংশের জন্য ছিল বাড়ির ভেতরে তিনটি পৃথক উঠান। এছাড়াও ছিল বিরুবাবুর দাপ্তরিক অংশ। এখানে ছিল বাবুর খাস দফতর, বিচার কক্ষ, খাজনা কক্ষ, নথিপত্র রাখার মোহাফেজখানা, মালখানা, প্রজাদের বসার জন্য ঘর এবং ১২ জন রক্ষীর জন্য থাকার ৬টি ছোট কক্ষ। ভবনের আরেকটি অংশে ছিল অতিথিদের জন্য বেশ কয়েকটি ঘর। একটি বিশাল নাচঘর ছিল। নামী, দামী শিল্পীরা তাতে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। কোলকাতার ভোলানাথ অপেরা বেশ কয়বার এসেছিল বিরুবাবুর আমন্ত্রণে তার হাজারদুয়ারী রাজপ্রসাদে।

মূল বাড়িটির পেছনেই ছিল শান বাঁধানো ঘাটসহ বিশালাকার একটি পুকুর। এর পার ধরে গড়ে তোলা হয়েছিল কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আবাসন ব্যবস্থা। জমিদার পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ বড় পুকুরটিতে গোসল করতে পারতেন না। একটু পূব পাশে কাটা হয়েছিল আরেকটি পুকুর। বাড়ির বাকীরা ব্যবহার করতেন। এলাকার মানুষের ব্যবহারের জন্য আরো কিছু পুকুর কাটা হয়েছিল আশ,পাশে।

মূল বাড়ির সামনে গড়া হয়েছিল বিশাল একটি ফুলের বাগান। রাজকন্যা প্রভাতী বালা বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা জাতের শখের গোলাপ এনে এখানে লাগিয়েছিলেন। এছাড়াও পুরো চত্বরে বিভিন্ন স্থানে এক সারিতে চারটি করে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল অসংখ্য টয়লেট। কারা কোনগুলো ব্যবহার করতে পারবেন- তারও শ্রেণীভিত্তিক বিভাজন করা ছিল।

প্রভাতী বালা নিজে যেমন ছবি আঁকতেন, নামী, দামী শিল্পীদের ছবিও সংগ্রহ করতেন। তার প্রাসাদের প্রতিটি ঘরের দেয়ালে শোভা পেত দামী ছবি। সারা বাড়ি ঝকঝকে পরিষ্কার রাখার জন্য প্রচুর মানুষ কাজ করতেন তার নির্দেশে এই রাজপ্রাসাদে। কাজ তদারকি করতেন প্রভাতী নিজেই। শুকনো মৌসুমে ধুলোয় চারিদিক ছেয়ে যেত বলে সময়গুলোতে তার রাজবাড়ির সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় স্যান্ডেল পড়া অবস্থায় কাউকে যেতে দেয়া হতো না।

বিরেশ্বর নিজের জমিদারী দেখাশোনার পাশাপাশি ছিলেন শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ধর্মপালনের পৃষ্ঠপোষক। তার এলাকায় বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাঠাগার, সঙ্গীত বিদ্যালয়, চিত্রশালা ও মন্দির গড়েছেন। তার বাহন ছিল একটি হাতি ও সুদূর ইউরোপ থেকে আনা চারটি প্রশিক্ষিত ঘোড়া। হাতি-ঘোড়ার পিঠে চড়েই তিনি নিজের জমিদারী তদারকি করতেন।

কথিত আছে, বিরেশ্বর ব্যানার্জিকে সবাই সামনাসামনি বিরু বাবু বলে সম্বোধন করলেও কুৎসিত হবার কারণে তিনি বিরকুৎসিত নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। তবে মানুষের এই অবহেলা ও খারাপ ব্যবহারে জমিদার বাবু মোটেও ক্ষিপ্ত হতেন না। তার নাম থেকেই কালের পরিক্রমায় এলাকাটির নাম বিরেশ্বরপুর থেকে বিরকুৎসিতপুর এবং সব শেষে অপভ্রংশু হয়ে বিরকুৎসা নাম ধারণ করে।

তার পুরো রাজপ্রাসাদটি সমাপ্ত হবার কয়েক বছর পরেই বিরুবাবু মারা যান। প্রিয়তম স্বামীর অভাব প্রভাতী বালা খুব বেশি দিন সহ্য করতে পারেনি। তাদের সংসারে ছিল পাঁচটি ছেলে সন্তান-পরিমল, নির্মল, সুনীল, শ্যামল ও অমল। তাদের বাবার মৃত্যুরপ পর পরবর্তী প্রজন্মদের অধীনেই জমিদারীটি পরিচালিত হতে থাকে।

১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাদের হাজার দুয়ারি জমিদারবাড়ি। মূল ভবনটির অল্প কিছু ক্ষতি হয়। বাকি অনেকগুলো অংশ একেবারে গুড়িয়ে যায়। নতুন করে আবার পুরো প্রাসাদটি গড়া আর সম্ভব হবে না বলে ছোট দুই ভাইয়ের বংশধরেরা চলে যান কোলকাতায়। মূল ভবন এবং দাপ্তরিক অংশটি কেবল ভালোভাবে মেরামত করা হয়েছে। অতিথিশালার অংশটিও কিছুটা মেরামত করা হলো।

ধারণা করা হয়, ১৯২০’র দশকে মূল জমিদার বাড়িটিকে আবার সংস্কার করা হয়েছিল। এ সময় কাঠের বিমের পরিবর্তে লোহার বিম বসানো হয়েছে। মেঝের বেশ কিছু অংশে গোলাপী মার্বেল পাথর বসানো হলো। দোতলায় একটি ছোট ঘরে ব্যবস্থা করা টয়লেট ও গোসলখানার। এজন্য নির্মাণ করা হয়েছিল একটি বাথটাব।

১৯৪৭ এর দেশভাগের পর বিরুর জমিদার পরিবার চলে যায় কোলকাতায়। একজন নায়েবের অধীনে কর্মচারীরা রয়ে যান এখানেই। তবে ৫০’র দশকে জমিদার প্রথা উচ্ছেদ হয়ে যাবার পর বাড়িটি সরকারের দখলে এলো। স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। নিয়মিত মেরামতের অভাবে ক্রমেই বিরু-প্রভাতীর স্বপ্নের রাজবাড়ি বাসযোগ্যতাও হারায়। সেই থেকে জমিদারবাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।

প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর প্রাসাদটিকে ২০০৮ সালে অধিগ্রহণ করে। রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও নিরাপত্তার জন্য তারা কিছুই করেননি। তাদের একটি সাইনবোর্ডও চোখে পড়ে না।

ভূমিকম্প ভাঙার পর যে খাজনা ঘরটি নতুন করে বানানো হয়েছিল, তা এখন ব্যবহার করে সরকারী তহসিল অফিস। পূজামন্ডপটিতে হয়েছে পোস্ট অফিস। স্থানীয় প্রভাবশালীরা জমিদারদের পুকুরগুলো দখল করে নিয়েছে। প্রাসাদের অদূরে বিরুবাবু তার দাদা অবিনাশ ব্যানার্জির নামে ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অবিনাশ হাই স্কুল। সেটিই কেবল বেঁচে আছে। বিরকুৎসা অবিনাশ স্কুল ও কলেজে উন্নীত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটি জমিদারবাড়ির কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত পুকুরটিই কেবল ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল কয়েক বছর। পরে সেটিও হাতছাড়া হয়ে গেছে।

তাদের রাজবাড়িটির যত সেগুন কাঠ, নানা ডিজাইনে কাঁটা রঙিন কাঁচ, লোহার গ্রিল, মার্বেল পাথর ও ভাঙ্গা অংশগুলোর দামী ইট- সবই প্রায় চুরি হয়ে গেছে। যেগুলো দেওয়াল থেকে খুলে নেয়া যায়নি, ভেঙ্গে চুরমার করে রাখা হয়েছে। ফুলবাগানটি দখল হয়ে এখন গড়ে উঠেছে একটি বাজার। মূল ভবনটির একতলা এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির গোয়ালঘর হিসেবে। সন্ধ্যার পর থেকে দোতলা ব্যবহার করা হয় মাদক ও অন্যান্য অসামাজিক, খারাপ কাজের আখড়ায়।

রাজপ্রাসাদটির বর্ধিত অংশগুলো এখন আর মেরামতের অবস্থায়ও নেই। তবে মূল ভবনটি কাঠামোগতভাবে এখনও যতটুকু মজবুত অবস্থায় আছে, এটিকে আরও ভঙ্গুরতার দিকে ঠেলে না দিয়ে বরং যদি মেরামত করা যায়, তাহলে আজ বাংলাদেশের একমাত্র হাজার দুয়ারি প্রাসাদটিও ফিরে পাবে তার হারানো জৌলুস। হবে একটি চমৎকার পর্যটন কেন্দ্র।

এই বাড়িটিতে আমি মুগ্ধ। ইতিহাসে আরও। তবে বলি, ঐতিহ্য, স্থাপত্য বা পুরাতত্ব কখনই আমার পাঠ্য বিষয় ছিল না। ইতিহাস শেষ পড়েছি আজ থেকে ৪৫ বছর আগে। আমার পেশার সঙ্গেও তাদের সম্পর্ক নেই। আমার শখ ঘোরা ও ছবি তোলা। বিশেষ শখ হেরিটেজ সাইটগুলোতে যাওয়া, যেগুলোর বয়স অন্তত ১শ বছর। কোনো স্থাপনা পছন্দ হলে নেট ঘেঁটে জানি। বিভিন্ন সূত্র খুঁজে তথ্যটুকু ক্রস চেক করে যথাসম্ভব ত্রুটিমুক্ত থাকতে চেষ্টা করি। সাইটগুলোতে আসতে, যেতে মানুষের সঙ্গে কথা বলি। তখন অনেক মজার গল্প শোনা যায়। সেগুলোও টুকে রাখি। তথ্য, গল্প ও ছবি নিয়ে নিছক আনন্দের জন্যেই এই সিরিজ। গবেষণা ভাববার বা রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ তো নেই।

ইতিহাস বলে, ১৯০০ সাল পর্যন্ত এই বাংলাদেশের ভূখন্ডে যত দ্বিতল বা ত্রিতল ভবন ছিল, তার প্রায় সবই কোনো না কোনো রাজা, নওয়াব, জমিদার বা বড় ব্যবসায়ীর প্রাসাদ অথবা তাদের গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ধর্মীয় উপাসনালয়। পশ্চিমের দেশগুলো তত দিনে গৃহনির্মাণে আধুনিক সিমেন্ট ব্যবহার করলেও এই অঞ্চলে আসেনি। ভবনসব নির্মান হয়েছে বাংলার পোড়া মাটির ইট-চুন-সুড়কির গাঁথুনিতে।

১৮৯৭ সালে আসামে একটি বড় ভূমকম্প হয়েছে। বাংলাদেশব্যাপী তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে। তার প্রভাবে আমাদের ভূখন্ডের প্রায় সকল অঞ্চলের বড় ভবনগুলো কিছু না কিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যেগুলো সেবার উৎরে গেছে, মাঝারি আকারের আরেকটি ভূমিকম্পে টিকবে, বলা কষ্টের। সঙ্গে তো রয়েছে দীর্ঘদিনের অবহেলা ও অযত্ন। চলুন, আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে, ছিটিয়ে থাকা রত্নের মত এই হেরিটেজ সাইটগুলো সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবার আগেই দেখে আসি। সিরিজের আরও একটি উদ্দেশ্য আছে। আমাদের প্রজন্মের বহু মানুষ জীবনের প্রয়োজনে পাড়ি জমিয়েছে নানা দেশে। দেশগুলোতে জন্ম নেয়া, বেড়ে ওঠা পরের প্রজন্মরা বাংলাদেশ, তার কৃষ্টি-সভ্যতা ও সোনালী অতীত জানবার সুযোগ পাননি, পাবেনও না। তারা গর্ব করবেন কী নিয়ে? তারাও জানুন, আমরা কেন গাই...আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি?

লেখকের মেইল : nafees1962@yahoo.com

ওএফএস।

 

Header Ad
Header Ad

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

ছবি: সংগৃহীত

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। সোমবার গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, এতে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের অভ্যন্তরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত নকশায় না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ (রেস্টুরেন্ট) পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, যা জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করায় এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনৈতিক উপায়ে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে।

ডিএসসিসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্পদ ও জানমালের ঝুঁকি এড়াতে নকশাবহির্ভূত সব রেস্তোরাঁ এবং ভবনের ছাদে স্থাপিত রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হলো। বাতিল করা লাইসেন্স দিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যেসব রেস্তোরাঁ সঠিক তথ্য না দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের অনুমোদন কিন্তু বাতিল করা হয়নি। ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সশরীর উপস্থিত হয়ে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত দিলে সেগুলো সচল করা হবে।’

বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি। ছবি: সংগৃহীত

অপর এক প্রশ্নের জবাবে জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রেস্তোরাঁকে আলাদা করে চিঠি পাঠাব।’

ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ডিএসসিসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম চলছে। ব্যবসাগুলো এক দিনে গড়ে ওঠেনি। রাজউকের পাস করা ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। বিগত সরকারের সময় এই জটিলতা নিরসনে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। সেই টাস্কফোর্সের দুটি বৈঠক হয়েছিল। তারপর তো সরকার বদল হয়ে গেল।

ইমরান হাসান বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে এখন যদি ডিএসসিসি অভিযানে নামে, তাহলে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রেস্তোরাঁর অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। ওই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, তবে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদন ছিল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চার বছর আগে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি। বাকি সব ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। রেস্তোরাঁর জন্য প্রথমে নিবন্ধন ও পরে লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি রেস্তোরাঁ।

Header Ad
Header Ad

মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বান। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ ও জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া দূরত্ব কমিয়ে এনে মানুষের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আজ রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী শাসনের অবৈধ আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশের অনেক সদস্য জনরোষের মুখে পড়েছেন।” পুলিশকে জনগণের বন্ধু হিসেবে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ সদস্যদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।

Header Ad
Header Ad

নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো

নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। ছবি: সংগৃহীত

বারবার নিলাম ডেকেও এস আলম গ্রুপের বন্ধকী সম্পত্তির কোনো ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছে না দেশের ব্যাংকগুলো। ফলে ঋণ আদায়ে এখন বাধ্য হয়ে অর্থ ঋণ আদালতের শরণাপন্ন হচ্ছে তারা। এতে পুরো প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত ও জটিল হয়ে পড়েছে।

চট্টগ্রামভিত্তিক এই শিল্পগোষ্ঠী ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জনতা ব্যাংক ১০,৭০০ কোটি টাকার বিপরীতে ছয়বার নিলাম ডেকেও কোনো সাড়া পায়নি। একইভাবে ইসলামী ব্যাংকও সাত দফা নিলাম আয়োজন করেও ব্যর্থ হয়েছে, যার মধ্যে আইডিয়াল ফ্লাওয়ার মিলসের ১,১০০ কোটি টাকার ঋণ সংক্রান্ত নিলামও অন্তর্ভুক্ত।

সাম্প্রতিক সময়ে এস আলম গ্রুপের একাধিক স্টিল মিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জমি নিলামে তোলা হলেও দরপত্র জমা পড়েনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া পূরণের জন্যই তারা এসব নিলাম ডাকছেন, যদিও আগ্রহী ক্রেতার দেখা মিলছে না। অনেকেই এই বিষয়টিকে ভয় পাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, এস আলম গ্রুপ সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণ জব্দ করে।

বর্তমানে এস আলম গ্রুপের ওপর কেন্দ্রীয়ভাবে তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে ১৪ সদস্যের বিশেষ লিগ্যাল টিম। একই সঙ্গে তাদের জব্দকৃত শেয়ার বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

 

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

সব রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান
নিলামে তুলেও এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রি করতে পারছে না ব্যাংকগুলো
সেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই চার বছর পর সাদমানের সেঞ্চুরি
স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন প্রধান উপদেষ্টার, মাসিক খরচের বিষয়ে যা জানা গেল!
রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডরের বিষয়টি স্পষ্ট করুন: জামায়াত আমির
প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন দশম গ্রেড, সহকারী শিক্ষক ১২তম
এনসিপির সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই: উমামা ফাতেমা
আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করেছিল: প্রধান উপদেষ্টা
আত্মসমর্পণ করলেন তারেক রহমানের খালাতো ভাই
চার শতাধিক যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ল বছরের প্রথম হজ ফ্লাইট
রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে আলোচনা করা উচিত ছিল: ফখরুল
দেশের সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শাটডাউন কর্মসূচি
ভারতের সামরিক আক্রমণ আসন্ন,পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি পাকিস্তানের
কানাডার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত মার্ক কার্নি
নওগাঁয় ডাকাত দলের ৩ সদস্যসহ ৮ জন গ্রেপ্তার, উদ্ধার লুণ্ঠিত মালামাল
নিজের মূত্র পান করেছিলেন বলিউড অভিনেতা পরেশ রাওয়াল
নাহিদ ইসলামকে বাংলাদেশের আগামীর প্রধানমন্ত্রী বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
কিছু লোডশেডিং না হলে ভর্তুকি বেড়ে যাবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা
গণপিটুনির পর কারাগারে ইমামের মৃত্যু, গাজীপুরের পূবাইলে চাঞ্চল্য