রুটিতেই রুজি আশরাফ আলীর
সংসারের ছয় সদস্যের পেটের ভাত জোগাতে আশরাফ আলী বিক্রি করেন রুটি। ছোটখাট নানা ব্যবসায় ছিঁটকে পড়ে অবশেষে তার রুজি থিতু হয়েছে রুটিতে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বন্দরে মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে গমের আটার রুটি বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন মো. আশরাফ আলী।
বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা ইউনিয়নের ভাগকোলা গ্রামের কৃষক মৃত মোসলেম উদ্দিনের ছেলে। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বসতভিটা ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নেই। চার কন্যা ও স্ত্রীসহ ছয় সদস্যের পরিবার তার। পরিবারের একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি আশরাফ আলী।
এক সময় কলার ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু ব্যবসায় লোকসান হয়। কোনো পথ না পেয়ে মোকামতলা বন্দরে মহাসড়কের পাশে ফুটপাতে পিয়াজু, ফুলনা ,বেগুনীসহ বিভিন্ন মুখরোচক খাবরের ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু সেখানেও ভালো ফলাফল করতে পারেননি তিনি। বর্তমানে গমের আটার রুটি বিক্রি করে, যে আয় হয় তা দিয়ে অতি কষ্টে কোনো রকমে সংসার চলে।
বাড়ির পাশে মোকামতলা বন্দর, বন্দরের মাঝখান দিয়ে রয়েছে ফোর-লেন মহাসড়ক এবং আন্তজেলা দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড এ সুবাদে দিন রাত ২৪ ঘণ্টায় লোকজনের আনা গোনা থাকে এ বন্দরে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের আনাগোনা বেশি হওয়ায় শুকনা ও বেকারি সামগ্রী স্বল্প খরচে বেশ পছন্দের খাবার।
বিভিন্ন দিক ভেবে-চিন্তে করে আশরাফ আলী সিদ্ধান্ত নেন রুটি বিক্রির ব্যবসার। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে রুটি তৈরির সরাঞ্জাম কিনেন। এরপর বাজার থেকে আটা কিনে রুটি তৈরি করে ডিম, আলু ভর্তা দিয়ে বিক্রি শুরু করেন। মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে মসজিদের সামনে সামিয়ানা দিয়ে তাবু টাঙ্গিয়ে ফুটপাতে অস্থায়ী রুটি বিক্রি শুরু করেন।
আশরাফ আলী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আলু ভর্তা, ডিম, সবজিসহ গুড় দিয়ে রুটি বিক্রি করা হয়। এসব রুটি খেতে অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ভোর পর্যন্ত চলে রুটি বিক্রি। প্রতিদিন ১২/১৫ কেজি আটার রুটি বিক্রি হয়। তার রুটি বিক্রির ব্যবসা অনুকরণ করে মোকামতলা বন্দরে আরও ৮/৯ জন এ ব্যবসা শুরু করেছেন। বর্তমানে মোকামতলা বন্দর এখন অনেকে রুটি পট্টি হিসেবে চেনেন ও জানেন।
তিনি আরও বলেন, এই রুটি বিক্রি করে ছয় সদস্যের সংসার পরিচালনা করা আমার পক্ষে খুব কঠিন হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আকুল আবেদন আমাকে যেন সরকারি যেকোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়।
রুটি খেতে আসা ট্রাক ড্রাইভার মো. কুতুব উদ্দিন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই বন্দরের উপর দিয়ে উত্তরঞ্চলে যাওয়ার সময় গাড়ি এখানে দাঁড় করে চাচার রুটির দোকান থেকে রুটি খাই।
রুটি খেতে আসা মো. জিন্নাহ ব্যাপারী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমি দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস হলে এই বন্দরে রুটি খেতে আসি। এই বন্দরের গমের রুটি এখন সবার কাছে জনপ্রিয় এবং পছন্দের খাবার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান হাবিব সবুজ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই, আমার কাছে আসলে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
এসএন