ছবিতে মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের জীবনের গল্প
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজন করেছে ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম’। এই আলোকটিত্র প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার জীবনের স্বাক্ষী পাকিস্তানের জন্ম, ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়দফা, উনসত্তরের গণ আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তি সংগ্রাম সবই আছে। মোট ১শ ৪২টি ছবি। লিখেছেন আয়োজকদের প্রধান ওবায়দুর রহমান ও সায়ন্তনী রাখী। ছবিগুলো তাদের দেওয়া।
মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দুই মেয়ে বাদে পুরো পরিবার, ছোট ভাই এবং নিকটাত্মীয়রা ঘাতক বাহিনীর নির্মম বুলেটের আঘাতে জীবন দান করেছেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সারা দেশে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ও বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
তাদের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী জাতীয় শোক দিবসে অসাধারণ একটি আয়োজন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ববিসাস)। দেশের নব প্রতিষ্ঠিত, নদীমাতৃক অঞ্চলের সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের সাংবাদিকতার এই সমিতির আয়োজনটির নাম হলো ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম’। তাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা, জর্জ হ্যারিসনের ‘দি কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে তাদের বহু কষ্টে জোগাড় করা অসাধারণ উদ্যোগে।
ঐতিহাসিক ও দুর্লভ এই ঘটনাগুলোতে সাজানো আলোকচিত্র মালার শুরু হয়েছে ২৯ আগস্ট। সোমবার দিনটি তাই তাদের জীবনে অন্যরকমভাবে শুরু হয়েছে। সকাল ১১টায় মূল ক্যাম্পাসের নীচতলায় ফিতা কেটে উদ্বোধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবান্ধব বিখ্যাত অধ্যাপক, নামকরা গবেষক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো.ছাদেকুল আরেফিন মাতিন। তার সঙ্গে ছিলেন ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড, আবদুল কাইয়ূম, টিএসসির পরিচালক জ্যোর্তিময় বিশ্বাস, শেরে বাংলা হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আবু জাফর মিয়া, বঙ্গবন্ধু হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আরিফ হোসেন ও বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকরা। এই আরো ছিলেন আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ওবায়দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির আহমেদসহ সমিতির সব সদস্য। আয়োজন ঘুরে দেখেছেন অফিসার্স এসোসিয়েশনের কর্মকর্তা ও কমচারী সমিতির কর্মচারীরা। দূর, দূরান্তের মানুষজন। ছাত্র, ছাত্রীরা তো বটেই।
আয়োজক সাংবাদিক সমিতির ছাত্র, ছাত্রীরা তাদের প্রিয় উপাচার্য ও অধ্যাপকদের জানিয়েছেন, “আমাদের ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম প্রদর্শনী’তে ১৯৪৭ সাল পাকিস্তানের জন্মের মুহূর্ত থেকে ১৯৭৫ সাল দেশের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার জীবন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, বিশ্ব সংবাদ মাধ্যম, মুক্তিযুদ্ধের পত্র-পত্রিকা ও পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং তার পরিবারের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবিগুলো সাজানো আছে।”
শুনে খুব খুশি হয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ছাদেকুল আরেফিন মাতিন। অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে তিনি তার ছেলেমেয়েদের ছবিগুলো দেখেছেন, যেগুলো তারা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছেন। তার সঙ্গে এবং নানা সময়ে প্রদর্শনী ঘুরতে আসা শিক্ষক, ছাত্র, ছাত্রী, আশপাশের মানুষ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী অবাক বিস্ময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানদের ছবিগুলো দেখেছেন। এই প্রদশনীতে মোট ১শ ৪২টি ছবি আছে বলে বিরাট এই আয়োজনের ব্যাপ্তি অনেক বড়।
ছবিগুলো ঘুরে দেখতে, দেখতে অনেক কিছু শিখেছেন তাদের ভিসি স্যারও। তিনি তাদের বলেছেন, ‘আমি তোমাদের কাজে অত্যন্ত খুশি হয়েছি।’ এরপর তিনি তার ছাত্র, ছাত্রীদের কলম ও ক্যামেরার (মোবাইল) মুখোমুখি হয়েছেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটনা পরম্পরায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে অবদান রেখেছেন, তার পরিবার ও অন্যদের ভূমিকা কী ছিল, তথ্য, উপাত্তগুলো আমাদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ছবিগুলোর মাধ্যমে ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। আমি তোমাদেরকে নিয়ে ছবিগুলো দেখে খুব প্রীত হয়েছি। তিনি কীভাবে ইতিহাসের পটগুলোতে উপস্থাপিত হয়েছেন, সুন্দরভাবে বর্ণনা রয়েছে। কম কথায় ছবিগুলো অনেক কথা বলেছে। আমাদের জ্ঞানের প্রতি আগ্রহী ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকরাসহ সবাই বঙ্গবন্ধু ও তার বাংলাদেশকে নতুনভাবে জানতে পারবে। তোমাদের এমন আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ আমার তরফ থেকে।’
তার সঙ্গে থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আসলে বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ। তার জীবন ও কর্ম আমাদের ছাত্রছাত্রী ও তরুণ প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয়, অনুকরণীয় সবসময়। সমিতির আলোকচিত্র প্রদর্শনীর প্রশংসা করার কোনো ভাষা আমার নেই। তাদের মধ্যে ছবির প্রতি আগ্রহ, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা জাগ্রত হবে।’
আলোকচিত্র প্রদশনী ঘুরে দেখেছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত প্রেসক্লাব বরিশাল’র সাধারণ সম্পাদক এস. এম. জাকির হোসেন, আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।
ওএফএস।