আশ্রয়হীন ছাকরা-শাহেরার খুপড়ির জীবনযুদ্ধ
বাবা-মার মৃত্যুর পর মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকুও হারিয়ে যায় দুই বোন ছাকরা বেগম (৫৫) ও শাহেরা বেগমের (৪৭)। যে বাড়িতে কাজ করতেন তাদের রান্নাঘরেই কাটিয়ে দিতেন রাত। বছর চারেক ধরে প্রতিবেশির দেওয়া সামান্য জায়গায় টিনে ঘেরা ছোট্ট খুপড়িতে কোনো রকমে দিন পার করছেন তারা।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পুর্বফুলমতি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী ছোট বোন শাহেরা বেগমকে নিয়েই সংসার ছাকরা বেগমের। খুপড়ি ঘরটিতে শাহেরা ও ছাকরার দুর্বিসহ জীবনযাপন। প্রচণ্ড দাবদাহেও আধো আলো আধো অন্ধকারে টিনে ঘেরা ছোট্ট এই ঘরেই কাটছে তাদের সকাল-বিকাল-রাত। বিদ্যুৎ বিল দিতে পারবে না বলে কেউ একটি বাল্বের ব্যবস্থাও করে দেয়নি। অধিকাংশ সময় চেষ্টা করেন দিনের আলোতেই কাজ শেষ করে শুয়ে পড়ার।
সকাল হলেই ঝিয়ের কাজ করার জন্য বেরিয়ে পড়েন ছাকরা বেগম। প্রতিবন্ধী শাহেরা বেগমও চেষ্টা করেন বোনকে সাহায্য করার। তাই তিনিও অন্যের বাড়িতে কাজ করে পান ১০০ টাকা। বড় বোন ছাকরা বেগম পান ১৫০ টাকা। তবে অসুখ-বিসুখ হলে যদি কাজ না করতে পারেন, হাতলে না খেয়েই কাটাতে হয় দিন। এভাবেই কখনো খেয়ে কখনো না খেয়ে চলছে শাহেরা ও ছাকরার জীবন।
বাবা-মা অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়িছিলেন ছাকরা বেগমকে। দুই বছর বয়সী মেয়েসহ তাকে ছেড়ে স্বামী চলে যান। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হওয়ায় সংসার টিকেনি শাহেরা বেগমেরও। তাদের বাবা ১৫ বছর ও মা ১২ বছর আগে মারা যান। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ভাইয়ের সংসারেও ঠাঁই মেলেনি তাদের। দুই বোন হয়ে পড়লেন আশ্রয়হীন। পরে দুই বোন মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন।
ছাকরা বেগমের একমাত্র মেয়েকে বড় করার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রতিবেশি মহাসিন। আর দুই রাত্রি পার করেন যে বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন সেই বাড়ির রান্না ঘরেই। এভাবেই দুই যুগেরও বেশি সময় কেটে যায়। ছাকরা বেগমের মেয়ে বড় হলে প্রতিবেশি মহসিন আলীসহ এলাকাবাসীর সহায়তায় বিয়ে দেন। এরপর গত ৪ বছর ধরে প্রতিবেশি মহাসিনের বাড়ির এককোণে টিনে ঘেরা ছোট্ট খুপড়িতেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন এই দুই বোন।
বড় বোন ছাকরা বেগম বিধবা ভাতা পেলেও ছোট বোন শাহেরা বেগমের আইডি কার্ড পুড়ে যাওয়ায় বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হলেও এখনো মেলেনি প্রতিবন্ধী ভাতা। এই দুই অসহায় নারীর একটি সরকারিভাবে থাকার ব্যবস্থাসহ ছোট বোন শাহেরার প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় আইয়ুব আলী ও জান্নাত আলী জানান, খুব কষ্টে দুই বোন মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবন কাটাচ্ছেন। দুই বোনই মানসিকভাবে খানিকটা ভারসাম্যহীন। এ কারণে দুই বোনের স্বামী তাদের ছেড়ে যান। প্রতিবেশির দয়ায় থাকার জায়গাটুকু পেয়েছেন। খুবই কষ্টে আছেন তারা। সরকারি ঘর পেতে এবং শাহেরাকে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আকুল অবেদন জানিয়েছেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম সাবু জানান, এই দুই নারীর করুণ অবস্থা। কোনো রকমেই মানুষের বাগিতে কাজ করে জীবন চালান। থাকেন মানুষের বাড়িতে। তারা ভূমিহীন। তারা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে আবেদন করলে সরকারিভাবে স্থায়ী ঠিকানা পাবেন বলে আমার বিশ্বাস। ছোট বোন শাহেরা বেগমের আইডি কার্ড পুড়ে যাওয়ায় তিনি বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী হলেও তার কপালে ভাতা জোটেনি।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন দাস বলেন, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রতিবন্ধী ভাতাসহ ওই দুই নারীকে সরকারি ভাবে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
এসএন