কেমন চলছে ফিলিপাইন থেকে আসা সেই তরুণীর সংসার
সম্প্রতি প্রেমের টানে বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণ-তরুণীদের আসার খবর হরহামেশায় পাওয়া যাচ্ছে। অবার বিদেশ থেকে আসা তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে বিয়ের পর সেসব বিয়ে বিচ্ছেদের খবর পাওয়া গেছে। আবার কেউ কেউ প্রতারিতও হয়েছেন বলে অভিযোগে উঠেছে। কেউ কেউ প্রেমিক-প্রেমিকার ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশে এসে মারধরের শিকারও হয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানা গেছে। এক্ষেত্রে ব্যতীক্রম ফিলিপাইন থেকে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে আসা তরুণীজানা ইয়াসমিন।
বাংলাদেশি যুবকের ভালোবাসার টানে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে সুদূর সিঙ্গাপুর থেকে ছুটে এসেছেন ফিলিপাইনের এ তরুণী। সংসার জীবন এখন ভালোই চলছে বলে জানানিয়েছেন তিনি। স্বামীর সংসারে শ্বশুর-শ্বাশুড়িসহ সব সদস্যদের মন জয় করে ৪ বছরের সংসারে সুখে-শান্তিতেই রয়েছেন জানা ইয়াসমিন।
জানা ইয়াসমিনের ব্যবহারে মুগ্ধ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তার ভালোবাসা ও সেবা যত্নে মুগ্ধ স্বামী রুবেল আহমেদসহ পরিবারের সবাই। শুধু কী পরিবার, তার ব্যবহারে মুগ্ধ আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশিরাও।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে আসার ৪ বছরের সংসার জীবনে ফিলিপাইনের তরুণী ও বর্তমানে বাংলাদেশের গৃহবধূ ৬ বার ফিলিপাইন টু বাংলাদেশের স্বামীর বাড়িতে যাওয়া আসা করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ জুলাই স্বামী রুবেলের বাড়ি থেকে ফিলিপাইনে যান ওই গৃহবধূ।
২০০৮ সালে সিঙ্গাপুর গিয়ে একটি গ্লাভস কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ পান রুবেল। ২০১০ সালে একই কোম্পানিতে কর্মরত জানা ইয়াসমিসের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই পরিচয় থেকেই তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। দীর্ঘ চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি দুই পরিবারের মধ্যে জানাজানি হলে তাদের সম্মতিতে সিঙ্গাপুরেই ২০১৪ সালে খৃষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণ করে বাংলাদেশি যুবক রুবেল আহমদকে বিয়ে করেন।
রুবেল আহমেদ জানান, সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন ফিলিপাইনের তরুণী জানা ইয়াসমিনের সঙ্গে প্রথমে পরিচয় হয়। পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি সিঙ্গাপুরে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। তার সঙ্গে অবসর সময়ে সময় কাটাতাম। দুইজনের সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে শুনে আমরা দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করি। ২০১৮ সালে আমি ছুটি নিয়ে বাংলাদেশ আসি। সে সময় বাড়িতে ছিলাম পাঁচ মাস। তখন আমার স্ত্রী জানা ইয়াসমিন বাংলাদেশে আমার কাছে চলে আসেন। সেই দিন ঢাকার একটি আদালতে এফিডেভিটের মাধ্যমে আবারও বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি। এরপর ২৬ মার্চ আমার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুরে নিয়ে আসি তাকে।
তিনি আরও বলেন, সিঙ্গাপুরের ৪ বছর ও বাংলাদেশের ৪ বছর সংসার জীবনে তার সঙ্গে আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোনো মনোমালিন্য হয়নি। ১৪ জুলাই আমার বাড়ি থেকে ফিলিপাইনে যান তিনি। আমি দুই এক মাসের মধ্যে ফিলিপাইনে গিয়ে আমার স্ত্রীকে নিয়ে আসব। সবার দোয়ায় আমরা খুবই ভালো আছি। সবাই দোয়া করবেন বাকি জীবনটা যেন একসঙ্গে কাটাতে পারি।
রুবেলের বাবা বেলাল হোসেন ও মা নুরজাহান বেগম জানান, তাদের দুই ছেলের মধ্যে রুবেল বড়। তারা যেহেতু একজন আর একজনকে ভালোবাসে সেজন্য তাদের সুখের কথা চিন্তা করে আমরা তাদের সম্পর্ক মেনে নিয়ে কোর্টের মাধ্যমে তাদের বিয়ে দিয়েছি। বাড়িতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনদের বৌ ভাত খাওয়ানো হয়েছে। ছেলের বউ খুবই ভালো। বিদেশি নারী হলেও বাঙালি বধূর মতো শ্বশুর-শ্বাশুড়িকে খুবই যত্ন করে ও ভালোবাসে। তার ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ। শুধু আমরা না ছেলের বউয়ের ব্যবহারে সব আত্মীয়-স্বজনসহ পাড়াপ্রতিবেশিরাও মুগ্ধ হয়েছেন। সবাই আমার ছেলে ও ছেলের বউয়ের জন্য দোয়া করবেন যেন সারাটা জীবন ভালো থাকে।
স্থানীয় আজিজুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন জানান, গ্রামে অনেক বাংলাদেশি গৃহবধূর চেয়ে ফিলিপাইনের ওই তরুণীর কথা বুঝতে না পারলেও তার ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ। তিনি ইশারায় সব কিছুই বোঝেন। আমরা তার দাম্পত্য জীবন সুখময় হোক এ কামনাই করছি।
ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মণ্ডল জানান, সম্প্রতি আমাদের দেশে আসা ভিনদেশি প্রেমিক-প্রেমিকা ভালোবাসার টানে ঘর-বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে এলেও অধিকাংশ প্রেমিক-প্রেমিকার সংসার টেকে না এবং তারা নিজ দেশে ফিরে যান। তবে আমার প্রতিবেশি মামাতো ভাই রুবেলের ঘর-সংসার ভালোই চলছে। ওই নারীর ব্যবহারে তার পরিবার এমন কী প্রতিবেশিরাও মুগ্ধ হয়েছেন। তাদের সংসার জীবন সুখে থাকুক।
এসএন