বুড়োর বিলের পদ্ম ফুলে মুগ্ধ ‘সব বয়সী’
গাঢ় সবুজ ক্যানভাসের মাঝে মাঝে হালকা গোলাপি পদ্মের উঁকিঝুঁকি। কুঁড়িগুলো মাথা তুলেছে সলজ্জ ঘোমটার আড়ালে। আবার কেউ কেউ সব সংকোচ দূরে ঠেলে স্বমহিমায় মেলে ধরেছে আপন পাঁপড়ি। তাদের মাঝে নির্ভয় বিচরণ পানকৌড়ি- ডাহুকের। বাদ যায় না অপরূপ রূপের অধিকারী প্রজাপতিদের প্রেম বিনিময়। প্রকৃতির অকৃপণ হাতে সাজানো এমন সৌন্দর্যভাণ্ডারের দেখা মিলবে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মটবাড়িয়া পদ্ম বিলে। বুড়োর বিল নামেও পরিচিত এ বিল।
অপরূপ সুন্দর পাঁপড়িগুলোর দক্ষ বিন্যাসের এসব পদ্ম যেমন সুগন্ধি ছড়ায়, তেমনি যেকোনো মানুষের হৃদয় কাড়ে সহজেই। মটবাড়িয়া পদ্ম বিল মুগ্ধ করছে দর্শনার্থীদের। পদ্ম ফুল শুধু যে বিশুদ্ধতা, সৌন্দর্য ও পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে মানুষের মনহরণই করে তা নয়, খাদ্য ও ওষুধি গুণ হিসেবে পদ্ম সমাদৃত।
মটবাড়িয়া পদ্ম বিলে দেখা যায়, কয়েক একর পতিত জমিতে হাজার হাজার গোলাপি পদ্ম ফুল ফুটে আছে। পদ্মের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসছেন। দলবেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বুড়োর বিলে। দেখতে আসা দর্শনার্থীরা নিজেদের ইচ্ছামতো স্মৃতিটুকু ধরে রাখতে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছেন। প্রথম দিকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যেত। এতে বিলের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে।
বালিয়াকান্দি থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী রিয়াজ মিয়া বলেন, ঘুরতে এসে বুড়োর বিলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি। স্থানীয়দের কাছে শুনেছি এখানে নাকি অনেক আগে থেকেই প্রকৃতিকভাবে পদ্ম ফুল ফুটে থাকে। তেমন জানাজানি ছিল না তাই মানুষ তেমন দেখতে আসত না। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ জানতে পেরে প্রতিদিন অনেক লোক দেখতে আসে। আমরাও কয়কজন বন্ধু বিলে পদ্ম ফুল দেখতে এসেছি। বিলের দৃশ্য সত্যি অত্যন্ত চমৎকার।
রাজবাড়ী শহর থেকে আসা আকমল শেখ বলেন, এ বিল সাধারণত স্থানীয়দের কাছে বুড়োর বিল নামেই পরিচিত। বিলে প্রতি বছর অসংখ্য পদ্মফুল ফোটে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। আমি এ বিলে ফুটে থাকা পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে এসেছি। এসে খুবই ভালো লাগছে। তবে বিলে ঘোরাঘুরি করার মতো কোনো নৌকার ব্যবস্থা নেই। নৌকা থাকলে দর্শনার্থীরা ফুলের কাছে গিয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারত।
সাব্বির খান নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, বিকালে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে এসেছি পদ্ম বিলের সৌন্দর্য দেখে অনেক ভালো লেগেছে। এখানে অনেকেই ফুল ছিড়ে নিয়ে যেত এখন উপজেলা প্রশাসন থেকে দুইজন বিট পুলিশ দিয়েছে যার কারণে কেউ ফুল ছিঁড়তে পারছে না। এতে বিলের সৌন্দর্য বেড়েছে।
পদ্মবিল পাড়ের বাসিন্দা রকিবুল হাসান বলেন, বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মানুষ পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। তবে এখানে আসার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না। তাই অনেকেই গাড়ি নিয়ে আসতে পারেন না। যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলে এখানে অনেক পর্যটক আসবে। আমি জন্মের পর থেকেই এ বিলে পদ্ম ফোটা দেখছি। এটাকে অনেকে বুড়োর বিল বলে, আমরা বলি পদ্মবিল। এখানে অনেক মানুষ ঘুরতে আসে, ছবি তোলে। সকাল-বিকাল পদ্মফুল দেখে অনেক ভালো লাগে আমাদের।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা আম্বিয়া সুলতানা বলেন, ইসলামপুর ইউনিয়নের মাঠবাড়িয়া পদ্মবিলে গত দুই বছর ধরে শত শত পদ্ম ফুল ফুটতে দেখা যাচ্ছে। যেহেতু সম্প্রতি ফুল ফুটতে শুরু করেছে, সেহেতু এখন পর্যন্ত পদ্ম ফুল সংরক্ষণের জন্য কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়নি। তবে ভবিষতে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় কি না সেটা বিবেচনা করা হচ্ছে।
এসএন