আইভিআইতে গবেষক জুলহাস সুজন
আমাদের তৃতীয় গবেষক হিসেবে ‘আইভিআই’ বা ‘ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনস্টিউটিউট’-এ কাজ করছেন তিনি। এর আগে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসইতে। বসুন্ধরা, ইনফোসিস ইন্ডিয়া ও ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসঅব হেলথ ইন্টারন্যাশনাল (এমএসএইচ)-এ নয় বছরের গবেষণা জীবন। তাকে নিয়ে লিখেছেন মুহাম্মদ বাবুল হোসেন বাবু
ছেলেটির নাম মোহাম্মদ জুলহাস সুজন। দারুণ মেধাবী। বাংলাদেশের তৃতীয় হিসেবে চলে গিয়েছেন ‘আইভিআই’ বা ‘ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনস্টিউটিউট’-এ। অত্যন্ত উন্নত দেশে, দারুণ প্রতিষ্ঠানে গবেষকের অসাধারণ কর্মজীবন শুরু করেছেন। পড়ালেখা করেছেন তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম ব্যাচের ছাত্র। একজন কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তাদের সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের অন্যতম সেরা ছাত্র। প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়ে পাশ। হাসতে, হাসতে দিয়েছেন খুশির খবর, ‘আমি ২০ জুন থেকে চাকরি করছি সিউলের অফিসে।’
তাদের ‘আইভিআই’ হলো একটি স্বাধীন, অলাভজনক, আন্তর্জাতিক সংস্থা। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৭ সালে, ৯ অক্টোবর। উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোর শিশুদের স্বাস্থ্য নাটকীয়ভাবে ভ্যাকসিন বা টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মাধ্যমে উন্নত করাই তাদের লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী সমাজের সঙ্গে সহযোগিতায় কাজ করেন। সাহায্য করেন বিভিন্ন দেশের ও বিশ্বের বড়, বড় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো, সরকাররা ও এই ভুবনের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে আইভিআই বিস্তৃত পরিসরে, সব ধরণের টিকা উৎপাদন ও বিতরণ ক্ষেত্রে কাজ করে। গবেষণাগারগুলোতে নতুন টিকার পরিকল্পনাও করেন তারা। তেমনিভাবে তৈরি ও উৎপাদনের পর যেসব দেশের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তাদের শিশুদের সুরক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করে কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
জাতিসংঘ উন্নয়ন প্রকল্প বা ইউএনডিপির একটি উদ্যোগ হিসেবে আইভিআইয়ের জন্ম। তাদের সদর দপ্তর কোরিয়াতে শুরু থেকে। এখন ৩৬টি দেশে কাজ করছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা হু’র সঙ্গে তো আছেন শুরু থেকে চুক্তিবদ্ধ। ফলে বিরাট বড় কাজের দুনিয়া। বিশ্বজুড়ে চলছেন শিশুদের ভুবনগুলোতে বাঁচাতে। যে রোগগুলোকে অবজ্ঞা করা হয় দেশে, দেশে সেগুলোর দিকেও জোর দেন তারা। ‘প্রতিষ্ঠানটি সদস্য দেশগুলোর আর্থিক অনুদানে পরিচালিত হয়’, বলেছেন সুজন। টিকা উন্নয়ন, নিরাপদ সরবরাহ, কার্যকরভাবে ব্যবহারও কাজের মহা কর্মযজ্ঞে। তথ্যগুলো দেবার পর জুলহাস সুজন বলেছেন, ‘জানেন আমাদের বাংলাদেশ আইভিআইয়ের অন্যতম সদস্য রাষ্ট্র। ২০২২ সালের পহেলা মে সদস্য হয়েছে। অবশ্য প্রথম থেকেই বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করে চলেছি আমরা।’
কীভাবে আইভিআইয়ের সঙ্গে শুরু? জবাবে দারুণ মেধাবী ও পরিশ্রমী সুজন বলেছেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের একটি প্রকল্পে বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ছিলাম। ফলে তারা আমাকে নিয়ে গিয়েছেন এবার সদর দপ্তরে।’ জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম শিল্পগ্রুপ ‘বসুন্ধরা’, ‘ইনফোসিস ইন্ডিয়া’ ও ‘ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স অর হেলথ ইন্টারন্যাশনাল (এমএসএইচ)’ মিলিয়ে আমার কর্মজীবন মোট নয়টি বছর।”
‘ইনফোসিস ইন্ডিয়া’ বা ‘ইনফোসিস লিমিটেড’ হলো একটি ভারতীয় বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক কম্পানি। তারা ব্যবসায় পরামর্শ, তথ্য প্রযুক্তি ও আউট সোর্সিং সেবা প্রদান করেন। পুনেতে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত। ৪১ বছরের, সদর দপ্তর ব্যাঙ্গালুরুতে। ২০০০ সালের হিসেবে বিশ্বের ৬শ ২তম বড় পাবলিক কম্পানি। ২০২০ সালে তারা ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম আইটি কম্পানির আয় করেছেন। ২০২১ সালের আগষ্টে ভারতের চতুর্থ কম্পানি হিসেবে ১শ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের হয়েছেন ফোবর্সের হিসেবে।
‘এমএসএইচ’ বা ‘ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস অব হেলথ ইন্টারন্যাশনাল’ একটি বৈশ্বিক অলাভজনক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তারা বিভিন্ন দেশের সরকার, প্রতিষ্ঠানগুলো ও বেসরকারী খাতকে কর্মকৌশল, উপকরণ ও ব্যবস্থাপনা সাহায্য প্রদান করেন বিনা পয়সায়, যাতে কার্যকর ও দক্ষ উপায়ে উচ্চমানের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। অগ্রসর জ্ঞান ও প্রযুক্তি সেবা দিয়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বজুড়ে। যেন স্থানীয়ভাবে সবার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হয়, অন্যতম লক্ষ্য। ‘এমএসএইচ’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দেশে, দেশে কাজ করছে। বেসরকারী খাত, সুশীল সমাজেও তারা বিশ্বস্ত পরামর্শক। স্বাস্থ্যসেবাকে আমূল বদলে দেওয়ার জন্য এমএসএইচও কাজ করছে। কাঁধে, কাঁধে মিলিয়ে তাদের কাজের উদ্দেশ্য, মানুষের জীবন বাঁচানো। বিশ্বের সবচেয়ে গরীব ও সবচেয়ে দুর্বল মানুষগুলোকে ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী করতে কাজ করছেন তারা। টেকসই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও গড়ে দিচ্ছেন সবার। ৫০ বছরের বেশি কর্মরত আছেন তারা।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুজন মাতৃভূমিসহ মোট ১১টি দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশে কাজ করেছেন। তার ভুবন ‘এন্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ বা ‘জীবাণু প্রতিরোধী’। জনস্বাস্থ্য তথ্যবিদ হিসেবেও অনেক সুনাম আছে তার। খুবই দক্ষ। মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করবেন বলে পড়ালেখা করেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি (এনএসইউ)’তে। সেখানে তিনি জনস্বাস্থ্য বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন আপন মেধার জোরে, খুব ভালো ফলাফলে।
বলেছেন জুলহাস সুজন, ‘আমার এই সাফল্যগুলোর অনুভূতি খুব ভালো। নতুন কিছু প্রাপ্তি অবশ্যই সুখের ও তৃপ্তির। আনন্দ ও ভালোলাগার।’ কীভাবে অর্জন? ‘আমার সাফল্যগুলোর পেছনে কঠোর পরিশ্রম আছে। পরিবার, শুভাকাংখী ও শিক্ষকদের অনেক অনুপ্রেরণা, উৎসাহদান ও প্রচেষ্টা রয়েছে।’ ভালো করতে হলে? ‘যেকোনো বিষয় ভালোবেসে পড়তে হবে। ভালো লাগা থেকে কাজ করে যেতে হবে। যেদিকে ভালো, সেদিকে আরো মনোযোগ দিতে হবে। দুর্বলতাগুলো শ্রম দিয়ে কাটিয়ে উঠতে হবে। তাহলে সাফল্য আসবে।’ গবেষক হতে চাইলে? ‘গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প কোথাও নেই। শুরু থেকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ভালো সম্পর্কও গড়ে তুলতে হবে।’ বলেছেন তিনি, ‘ভালো গবেষক হতে চাইলে শেখার জন্য গবেষণার সেমিনারগুলোতে নিয়মিত, ভালোভাবে অংশ নিতে হবে। যোগাযোগও বাড়াতে হবে।’ সুজন জানিয়েছেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়নির্ভর এবং ভালো লাগার ভুবনের ওপর লেখার আগ্রহ থাকতে হবে।’ তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আইভিআইতে কাজ করবেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন ইনস্টিউটিউটের নতুন প্রকল্পগুলোতে মাতৃভূমিকে যুক্ত করার চেষ্টা করব।’
ছবি : সিউলে আইভিআই অফিসের সামনে সুজন। তার কাজের দুনিয়া-বসুন্ধরা, ইনফোসিস ইন্ডিয়া, এমএসএইচ এবং মানুষটিকে গড়ে দেওয়া পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
ওএফএস।