এক-পায়ে ভাত শালিকের জীবনসংগ্রাম
আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ রয়েছেন যারা এক পায়ে টেনে নিচ্ছেন জীবন সংসার। প্রকৃতিতে এক পায়ের পাখি খুব কমই দেখা যায়। তবে তারা যে এক পা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তা নয়। ডিম থেকে দুই পা নিয়েই জন্ম নেয়। তবে আক্রমণের শিকার বা বিভিন্নভাবে হারাতে পারে এক পা। এমনই এক-পায়ে একটি ভাত শালিকের জীবনসংগ্রাম দৃশ্য দেখা গেল।
সোমবার (২৫ জুলাই) দুপুরে নওগাঁ শহরের নওগাঁ-ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দৃশ্যটি ধরা পড়ে ঢাকাপ্রকাশ-এর ক্যামেরায়। পাখিটির বসার ভঙ্গি ছিল অস্বাভাবিক, সন্দেহ হচ্ছিল। যখন নিচে নামল তখন দেখা যায় এর একটি পা নেই। পূর্ণবয়স্ক এই ভাত শালিক জীবনযুদ্ধে টিকে আছে ভালোভাবেই।
পাখি গবেষকদের তথ্য মতে, খাদ্য সুনিশ্চিত হলে এক পা নিয়েই সুস্থ ও সবলভাবে বেঁচে আছে পাখিটি। লড়াই করে দু’পায়ের অন্যান্য পাখিদের মতো প্রকৃতিতে টিকে আছে। শিকারির আক্রমণসহ কয়েকটি কারণে কোনো না কোনো পাখিকে হারাতে হয় একটি পা। এরপর এক পায়েই ভর করে শুরু হয় তার জীবন চলার পথ।
নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা (বিভাগীয় প্রধান) প্রফেসর মো.গোলাম কিবরিয়া ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ভাত শালিক (বৈজ্ঞানিক নাম: Acridotheres tristis) Sturnidae (স্টার্নিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Acridotheres (অ্যাক্রিডোথিরিস) গণের অন্তর্গত অত্যন্ত পরিচিত একটি পাখি। এরা সাধারণত ডাল, ভাত, গম, যব ও নানা রকমের পোকামাকড় খায় । তবে ভাত শালিকের সব ধরনের পোকামাকড় নয় বরং সবুজ রঙের ফড়িং জাতীয় পোকা বেশি পছন্দ। এরা সারাদিন মাঠ জঙ্গল পেরিয়ে নির্দিষ্ট একটি গাছে রাত কাটায়। বৈশাখ-আষাঢ় মাসে বাসা তৈরি করে। তবে একেবারে জঙ্গলে নয়। লোকালয়ের মধ্যে কোনো গাছে অথবা বাড়ির চিলেকোঠায়। খড়কুটো, সাপের খোলস, ন্যাকড়া যা পায় তা দিয়েই বাসা তৈরি করে।
পাখিদের এক পা কাটা যাওয়ার কারণ হলো হয়তো তার পায়ে কামড় দিয়ে ধরেছিল অন্য কোনো প্রাণি। তখন সে নিজেকে ছাড়াতে চেয়েছে। এর ফলে পা ছিঁড়ে গেছে। আবার তার পায়ে মানুষের মাথার চুল বেঁধে গিয়ে ধীরে ধীরে সেই পা কেটে যেতে পারে।
জঙ্গলের নিয়ম হলো- যে উপযুক্ত সে-ই বেঁচে থাকবে। দুর্বলরা বেঁচে থাকতে পারবে না। এগুলোর মধ্যে এই শালিক পাখিটা কিন্তু ব্যতিক্রম। এক পা হারিয়েও এই শালিকটা কিন্তু বেশ সুস্থ-সবল। অসুস্থ বা দুর্বল মনে হচ্ছে না তাকে- বলেন মো.গোলাম কিবরিয়া।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নওগাঁ জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, একটু খাবারেই তারা খুব আপন হয়ে যায়। মনে হয় ফুটপাতের কোনো অসহায় ব্যক্তির অনাহারী পেটের তীব্র জ্বালায় ডাস্টবিনের ফেলে দেওয়া খাবার যেভাবে কুড়িয়ে খায় ঠিক কঠিন সাহসের সাথেও ভাত শালিক একটু খাবারের জন্য মানুষের কাছে ছুটে আসছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। এ কারণে আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। দেশের বন্যপ্রাণি আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
এসজি/