রংপুরে এখন কালের সাক্ষী কেরামতিয়া মসজিদ
রংপুরে ভারতের জৈনপুর থেকে বাংলাদেশে এসে দ্বীন ইসলাম প্রচারসহ নানা অলৌকিক ঘটনার জন্য বিখ্যাত জামানার শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বংশের ৩৭ তম পুরুষ সুফি ও দরবেশ মাওলানা কারামত আলী (রহ.)। যিনি নিজের আলৌকিক ক্ষমতার গুণে কারামত আলী থেকে কেরামত আলী উপাধি পান তৎকালীন রংপুরের মানুষের কাছ থেকে।
তার উদ্যোগে রংপুর ও আশপাশে অনেক স্থানে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য মসজিদ, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, খানকা ও সেবাকেন্দ্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার। মসজিদের ভেতরে তার মাজার শরীফ জিয়ারত ও মানত করে দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন দর্শনাথীরা আসেন নিজেদের মনের বাসনা নিয়ে।
ভারতের জৈনপুর থেকে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে দ্বীন ইসলাম প্রচারের জন্য রংপুরে আগমন করেছিলেন নবী করিম হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বংশের ৩৭তম পুরুষ বিখ্যাত সুফি ও দরবেশ মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী (রহ.)। তার নামানুসারেই প্রতিষ্ঠিত এ মসজিদের নাম রাখা হয় কারামতিয়া মসজিদ। তবে স্থানীয় উচ্চারণে কেরামতিয়া মসজিদ নামেই প্রসিদ্ধ এ মসজিদ।
ইাতহাস সূত্রে জানা গেছে, মোগল স্থাপত্যরীতির সঙ্গে বঙ্গীয় রীতির মিশেলে নির্মিত হয় কেরামতিয়া মসজিদের। সমতলভূমি থেকে প্রায় ১৮ ফুট উচ্চতায় রয়েছে তিনটি গোলাকার গম্বুজ। আটকোনা ড্রামের আকৃতির ওপর ভর করে নির্মিত হয়েছে এসব। প্রতিটি গম্বুজের নিচের অংশে রয়েছে মারলন অলঙ্কার এবং ভেতরে দিকে মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে প্রস্ফূটিত পদ্মফুলের ওপর কসমেটিক ফিনিয়াল চূড়া। মসজিদের প্রতিটি কোণে অষ্টভুজাকৃতির স্তম্ভ বিদ্যমান। গম্বুজগুলো কুইন্স ও পেনডেন্টি খিলানের আর্চের ওপর ভর করে সুকৌশলে নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে খিলানাকৃতি ও প্যানেলের অলঙ্কারের সঙ্গে সঙ্গে ব্যান্ডের উপস্থিতিও শোভা বিরাজমান।
কেরামতিয়া মসজিদ আয়তাকারে ৪২ ফুট লম্বা ১৩ ফুট প্রস্ত। এর পূর্ব ও পশ্চিম দেওয়ালের প্রশস্ততা ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি। উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালের প্রশস্ততা ২ ফুট ১০ ইঞ্চি। ভেতরের দিকে মেহরাব, খিলান ও প্রধান ফটকের উভয়পাশে অষ্ট কোণাকৃতির স্তম্ভেরও সন্নিবেশ দেখা যায়। স্তম্ভগুলোর ওপরের অংশ বিভিন্ন লতাপাতার কারুকাজ শোভা পাচ্ছে। এগুলোর নিচের দিকটা কিছুটা কলসের মতো এবং ছাদের কিনারায় বাহারি অলঙ্করণ লক্ষ করা যায়। প্রতিটি প্রবেশদ্বারে মেহরাব ও খিলানের অভ্যন্তরীণ অংশের উপরিভাগে মারলন অলঙ্করণের সঙ্গে লতাপাতা জড়ানো ফুলের নকশা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে।
ভারতের জৈনপুর থেকে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইসলাম প্রচারের জন্য রংপুরে আগমন করেছিলেন নবী করিম হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর বংশের ৩৭তম পুরুষ বিখ্যাত সুফি ও দরবেশ মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী (রহ.)। তার নামানুসারেই প্রতিষ্ঠিত এ মসজিদের নাম রাখা হয় কেরামতিয়া মসজিদ। তবে স্থানীয় উচ্চারণে কেরামতিয়া মসজিদ নামেই প্রসিদ্ধ এ মসজিদ।
রংপুর কেরামতিয়া মসজিদের পেশ ইমাম মো. আব্দুল জলিল জানান, ১২ জুন ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে (১৮ মহররম, ১২১৫ হিজরি) ভারতের জৈনপুরে জন্ম গ্রহণকারী এ মহান সাধক ৩০ মে ১৮৭৩ সঙ্গে পরলোক গমন করেন। ইন্তেকালের পর এ মসজিদের সামনে তাকে সমাহিত করা হয়। পরবর্তীতে মসজিদের সম্প্রসারণ করা হলে মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী (রহ.) এর মাজারটিও মসজিদের মূল অবকাঠামোর ভেতরে চলে আসে। বর্তমানে মসজিদের পূর্ব দিকে বারান্দার একটু আগ দিয়ে একটি দেওয়াল ঘেরা কক্ষের ভেতরে তার ও তার সহধর্মিণীর কবর অবস্থিত।
কেরামতিয়া মসজিদ ইমাম মো. শাহাজান মিয়া জানান, স্থানীদের মতে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী কেরামত আলী। তার মৃত্যুর পর এখানে মাজারে কেউ মানত করে নামাজ পরলে বিফলে যায় না। তাই দেশে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসেন মাজার শরীফ জিয়াতর করতে।
কেরামতিয়া মসজিদে দর্শনাথী মোস্তফা রিপন জানান, দীন ইসলাম প্রচারক কেরামত আলীর মৃত্যুর পর এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। সেসময় নির্মিত মসজিদ ও মাজার শরীফ ছোট পরিসরে থাকলেও পরে তৎকালীন জমিদার আলা মিয়া ৯৬ শতক জমির উপর পুননির্মাণ করেন মসজিদ ও মাজার শরীফ।
কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার শরীফের মোতওয়ালী এ এফ এম মকসুদ আলী জানান, নগরীর জিরো পয়েন্ট কাচারি বাজার এলাকার মুন্সি পাড়ায় নির্মিত তিনতলা এ মসজিদে প্রতি শুক্রবার অসংখ্য লোকের সমাগম ঘটে। এক সঙ্গে ৭ থেকে ৮ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারে। এ ছাড়া এ মসজিদে নারীদের নামাজ পড়ার জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা।
এসএন