বরগুনায় শতবর্ষী মটকার সন্ধান
'বর্তমান প্রজন্ম এসব জিনিস তেমন একটা চিনবে না। আর শতবর্ষী এসব জিনিস এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। কেউ কেউ এগুলোকে কৈয়া ঝুড়ি মাইড বলে। তবে বেশি পরিচিত মটকা নামে। বাবার কাছ থেকে আমি দুটো পেয়েছিলাম। প্রজন্মান্তরে স্মৃতি হিসেবে এসব মটকা আমি সংরক্ষণ করে রাখেছি।'
কথাগুলো বলছিলেন, বরগুনা সদরের বালিয়াতলী ইউনিয়নে চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা সামসুল আলম হাওলাদার। শতবর্ষী পুরোনো ব্রিটিশ আমলের ৪০০ কেজি ধারণক্ষমতার কৈয়া ঝুড়ি মাইড বা মটকার সন্ধান পাওয়া গেছে চরপাড়া গ্রামে।
জানা যায়, মাটি থেকে তৈরি একপ্রকার বিশালাকৃতির পাত্রের নাম মটকা। যা দেখতে অনেকটা কলসের মতো মনে হয়। যদিও মটকা তৈরি বা এর ব্যবহার সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেলেও কোথাও এর স্পষ্ট ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে কিছু কিছু স্থানের গ্রামীণ বাসিন্দাদের কাছে এখনো এগুলো সংরক্ষণে রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামীণ মানুষের কাছে এগুলো কৈয়া ঝুড়ি মাইড নামেই বেশি পরিচিত।
উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, এজাতীয় পাত্রে আগেকার দিনে সাধারণত চাল সংরক্ষণ করা হতো। মটকায় রাখা চালে সহজে পোকা ধরে না এবং চালের গন্ধ ও স্বাদ দির্ঘদিন অটুট থাকে। তা ছাড়া মাটি থেকে তৈরি বলে এ জাতীয় পত্রের সংস্পর্শে থাকার ফলেও চালে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান মিশে না।
সম্প্রতি বরগুনার বালিয়াতলী ইউনিয়নে চরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা সামসুল আলম হাওলাদারের বাড়িতে ব্রিটিশ আমলের কয়েকটি মটকার সন্ধান পাওয়া যায়। এবিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৩৬ সালে দাদা জহুরুদ্দিনের হামেজ উদ্দীনের ছেলে তার বাবা ইউসুফ আলী হাওলাদার পৈত্রিক সূত্রে মটকাগুলো পেয়েছিলেন। যা উনিশ শতকের শুরুর দিকে কিনেছিলেন তার দাদা জহুরুদ্দিনের হামেজ উদ্দীন হাওলাদার।
সামসুল আলম হাওলাদার বলেন, প্রাচীনকাল হতে রবিশস্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে মটকা। ব্রিটিশ আমলে এসব মটকা স্থানীয় হাওলাদাররা (জমির মালিক) ধানচাল সংরক্ষণের জন্য ঝালকাঠি থেকে কিনে নৌকাযোগে বাড়িতে আনতেন। সময়ের বিবর্তনে ধান চাল সংরক্ষণের পদ্ধতি বদলে গেলে এসব মটকা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। তবে বাবার কাছ থেকে পাওয়া দুটো মটকা আমি প্রজম্মান্তরে স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখেছি। কারণ এসব এখন আর আগের মতো দেখা যায়, বিলুপ্ত বললেই চলে।
চরপাড়া গ্রামে সামসুল আলম হাওলাদারের দুই ভাইয়ের ছেলে গোলাম সরওয়ার রাজা ও কালাম হোসেন তারাও সংরক্ষণ করে রেখেছেন শত বছরের কয়েকটি পুরোনো মটকা।
সামসুল আলমের ভাতিজা গোলাম সরওয়ার রাজা বলেন, এ কৈয়া ঝুড়ি মাইড ব্রিটিশ আমলে দাদার বাবা ক্রয় করেছিলেন। এগুলো তখন ঝালকাঠি থেকে কিনে নৌকাযোগে বাড়িতে এনেছিলেন ধান-চাল সংরক্ষণ করার জন্য।
আরেক ভাতিজা কালাম হোসেন বলেন, সম্ভবত চার পুরুষ ধরে কৈয়া ঝুড়ি মাইড পারিবারিকভাবে চাল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। আমাদের বাসার ৬-৭টা মাইড আছে। ৩টা বড়, বাকিগুলো সব ছোট। বড় মাইডে ১০-১২ মণ চাল সংরক্ষণ করা যায়।
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, সময়ের বিবর্তনে এখন এসব মটকা বিলুপ্তির পথে। সরকারিভাবে সংরক্ষণ করে প্রত্নসম্পদ হিসেবে এগুলো জাদুঘরে প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
এসএন