পাঁচ হাত টিনের ছাপড়াই আবুল-জছিরনের সম্বল
বর্ষায় বৃষ্টি, শীতে হিমের কামড়, গ্রীষ্মে ঝড়-বাদলের আতঙ্ক সঙ্গে নিয়েই দিন কাটছে ৮০ বছর বয়সী আবুল হোসেন ও ৭০ বছর বয়সী স্ত্রী জছিরন বেগমের। বছরজুড়েই তাদের সঙ্গী কোনো না কোনো সমস্যা। দুর্বল টিনের চালা আর বাঁশের চাটাইয়ের মধ্যে কোনো রকমে মাথা গুঁজলেও নেই নিরাপত্তা।
মাত্র পাঁচ হাত লম্বা একটি জোড়াতালির টিনের চালাঘরে অতিকষ্টে বসবাস করছেন তারা। বৃষ্টি হলেই বিছানা-বালিশ জড়িয়ে বসেই রাত পোহানোর অপেক্ষায় কাটে। আবার শীতে টিনের বেড়ার ছিদ্র দিয়ে হিমের গুতো খেয়ে রাত কাটে সকালের রোদের আশায়। আবার ঝড় হলেও মাথার উপরের চালাটুকু উড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নাভিশ্বাস উঠে। এভাবেই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা আবুল-জছিরনের।
দুই ছেলে ও ছেলের বউসহ নাতি-নাতনি ভালোভাবে থাকলেও বৃদ্ধ বাবা-মা ছোট একটি টিনের চালায় কোনো রকমেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন আবুল হোসেন ও তার স্ত্রী। ছোট্ট এ টিনের চালার ভেতর কোথাও কোনায়ও ফাঁকা জায়গা নেই। ওই ঘরের মধ্যেই রান্না, খাওয়া, ঘুমানসহ সব। অতিকষ্টে জীবন চলে বৃদ্ধ ভাতার টাকা ও মানুষের সহায়তায়।
আবুল হোসেনের বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্বফুলমতি গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মৃত জমির উদ্দিনের ছেলে। প্রতিবেশীদের সহায়তা ও বয়স্ক ভাতার টাকায় কোনো রকমেই খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ দম্পতি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃদ্ধ আবুল হোসেনের নিজস্ব সাড়ে ৭ শতক জমি থাকলেও অর্থের অভাবে তিনি নতুন করে ঘর তুলতে পারছেন না। আগে দিনমজুরের কাজ করলেও বয়স বাড়ায় ৫ বছর ধরে কাজ করতে পারেন না। কোমরের প্রচণ্ড ব্যথায় গত ১ বছর ধরে একাই হাঁটা চলা করতেও পারেন না। স্ত্রী জছিরন বেগমের সহযোগিতায় কোনো রকমেই ঘর-বাহির হন। তার ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। অনেক কষ্টে একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। একই ভিটায় থাকলেও তিন ছেলের আলাদা সংসার।
ছেলেরা সবাই দিন মজুরের কাজ করেন। তারাও স্বচ্ছল নন। কোনো রকমেই দিন পার করছেন। তাই বাবা-মার খোঁজ খবর নিতেও পারেন না ছেলেরা।
স্থানীয় মাহাবুল আলম ও হাসান আলী জানান, খুব কষ্টে এ বৃদ্ধ দম্পতি জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন। দুজনেই বয়স্ক ভাতার টাকা পেলেও শুধু সেটা দিয়ে তাদের সংসার চলে না। আমরা স্থানীয়রা অনেক সময় তাদের সহায়তা করি। খুব কষ্টেই দিন পার করেন তারা। তবে যে ঘরে এ দম্পতি থাকেন তার অবস্থা খুবই করুণ। তারপরেও অনেক কষ্টে থাকেন।
বৃদ্ধ আবুল হোসেন বলেন, ‘বাহে আমার আবাদি জমি-জমা নাই। মাত্র সাড়ে ৭ শতক জমিতে ছোট একটি টিনশেড স্ত্রীসহ কোনো রকমেই দিন পার করছি। ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তারা তাদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। চোখের সামনে ছেলেরা থাকলেও খোঁজ খবর নেয় না। মোর দুর্ভাগ্য কপাল বাহে!’
তিনি বলেন, কোমরে প্রচণ্ড ব্যথা। টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পাচ্ছি না। এ দিকে তো ক্ষিদা যায় না। পেটের তাড়নায় অনেক সময় ঘরে খাবার না থাকলেও প্রতিবেশিদের দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছি। ধার-দেনাও করতে হয় কখনো কখনো। বয়স্ক ভাতার টাকা দিয়ে অতিকষ্টে বেঁচে আছি। একমাত্র থাকার চালাটিও অবস্থা খুবই নাজুক। যদি সরকার একটা ঘর দিত তাহলে খুবই ভাল হতো বাহে! সেই সঙ্গে সরকারের কাছে ভাতার টাকা বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছেন আবুল হোসেন।
আবুল হোসেনের স্ত্রী জছিরন বেগম বলেন, ভাতার টাকা পাই। তা দিয়ে দুই বেলা খাবার জোটে না। এ দিকে ১ বছর ধরে স্বামী অসুস্থ। টাকা অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। খেয়ে না খেয়ে দিন পারে করছি। ছেলে-নাতি-পুতি থাকলেও দুই বুড়াবুড়ির খোঁজ খবরও নেয় না। সরকার থেকে যদি একটা পাকা ঘর ও আমার অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিত খুবই ভালো হতো বাহে !
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন দাস বলেন, ওই পরিবার থেকে একটি লিখিত আবেদন করলে 'জমি আছে, ঘর নাই' এ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ এলে ওই পরিবারকে একটি সরকারি ঘর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
এসএন