‘পড়ালেখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতাপরায়ণ হতে হবে’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন ফাহিমা ইয়াসমিন ও প্রজ্ঞা পারমিতা বোস। দুজনেই ইংরেজি বিভাগের। প্রথমজন প্রথম ব্যাচের আর দ্বিতীয়জন দ্বিতীয় ব্যাচের। তাদের একজন প্রজ্ঞার সঙ্গে আলাপ করেছেন সায়ন্তনী রাখী। মেধাবী, চৌকস মেয়েটির ক্যাম্পাস জীবনের রঙিন গল্পগুলো শুনেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সজীব ঘাসে মোড়া সবুজ কার্পেটে হাঁটতে, হাঁটতে গল্প করেছেন। জুড়ে গেল শিক্ষাজীবনের চমৎকার কটি গল্পের সমাহার।
আপনার জীবন?
জন্ম বরিশাল সদর উপজেলায়। শিক্ষাজীবনে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল বদলাতে হয়েছে বারংবার। এরপর সপ্তম শ্রেণীতে একেবারে বিদেশে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার আদিত্য একাডেমিতে। আবার দেশে ফিরে পড়েছেন বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখানেই মাধ্যমিক। উচ্চমাধ্যমিক করেছি বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে।
বিশ্ববিদ্যালয়?
ভাগ্যক্রমে পা রাখলাম স্থানীয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইংরেজী বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের ছাত্রী। স্নাতক ২০১২-’১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছি, ২০১৬-’১৭ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। পড়ালেখার পাশাপাশি বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, গান, চিত্রাঙ্কন, নাচসহ আরও কটি সহপাঠ্য কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। ভালো করেছি। বহুমুখী প্রতিভায় বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী হওয়ায় শিক্ষকরা থেকে সিনিয়র-জুনিয়র সকলেই একনামে চিনতেন।
পরিবার কীভাবে সাহায্য করেছে?
আমাদের পরিবারে প্রায় সবাই-ই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। কেবল বড় মামাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনি পররাষ্ট্র সচিব। মামার পর আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি নিয়ে পড়ালেখা। জানি, ডাক্তার হলে মা-বাবা বেশী খুশী হতেন। তারা চেয়েওছিলেন ডাক্তারি পড়ি, প্রাইভেটে হলেও। ডাক্তারদের মধ্যে থেকে, প্রাইভেট থেকে ডাক্তারি পড়তে চাইনি। ফলে নিজেকে বহুবার প্রমাণ করতে হয়েছে। জীবনে না পাওয়া অনেককিছুকে পেছনে ফেলে মা-বাবার ভালোবাসা ও ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখে সামনে হেঁটেছি। অসংখ্য হোঁচট খেয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। নিজের প্রতি কখনো বিশ্বাস হারাইনি। ফলে স্বপ্নকে ছুঁতে পেরেছি। তৃতীয় বর্ষ থেকে বিয়ে করার উপদেশ, আদেশ আর এজন্য চাপ এসেছে। নিজেকে খোঁজার আর বোঝার যাত্রায়, এখনও তা এড়িয়ে চলতে হয়।
ইংরেজিতে পড়ালেখায় কী, কী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে?
হঠাৎ বাংলা থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা শুরু করতে হয়েছে। বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তো। পরিবারে পড়ালেখা বলতে সবাই সায়েন্সকে বোঝেন। তাই সাহিত্য নিয়ে বেশ লড়াই করতে হয়েছে বৈ কি! শুধু জানতাম ইংরেজি তো সবার প্রয়োজন হয়-কী ডাক্তার আর কী ইঞ্জিনিয়ার। কখনো আমি নিজেকে সাহস দেওয়া ছাড়িনি।
শুরুর কর্মজীবন?
প্রথমে বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে। ইংরেজি বিভাগে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি, তারপরে বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (বাউয়েট)'র ইংরেজি বিভাগে স্থায়ী পদে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলাম।
এত ভালো করার রহস্য?
সবকিছুর ওপর মাথায় একটা বিষয় ছিল যে, যে বারান্দায় শিক্ষার্থী হিসেবে হেঁটেছি, সেখানে শিক্ষক হিসেবে হাঁটতে হবে। আজকে আমার যতটুকু যা অর্জন, তার পেছনে আছেন ঈশ্বর, আমার মা-বাবা, শিক্ষক, অন্যান্য গুরুজনসহ সকল শুভার্থীদের অফুরান আশীর্বাদ। মা-বাবাকে আমি সুখী করতে পেরেছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য পরামর্শ?
খুব ভালোভাবে, মনোযোগ দিয়ে প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন পড়তে হবে। শিক্ষকদের পড়ানো অনুসরণ করতে হবে। পরীক্ষাগুলো মনোযোগ ও খুব ভালোভাবে দিতে হবে। ক্লাসে পূর্ণ মনোযোগী হয়ে থাকতে হবে। ক্লাস নোটকে বিশেষ প্রাধান্য দিতে হবে। বিষয়ভিত্তিক মূল বইগুলো সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইন আছে, সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিজেকে প্রতিটি টপিকে আপ টু ডেট রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখায় প্রতিযোগিতাপরায়ণ হতে হবে।
মেয়েদের জন্য সাজেশন?
একটা কথাই মনে রাখতে হবে, যে যা-ই বলুক আর যা-ই হোক, আমি পারব, আজ না হয় কাল। থামা যাবে না। তবে বিশ্রামে ক্ষতি নেই। সবচাইতে প্রয়োজন, আত্মবিশ্বাসী হওয়া। পরিচয়টা মানুষ হিসেবে হোক, মেয়ে হিসেবে নয়। তাহলে আর কোনদিকে তাকাতে হবে না।