চরের বানভাসীদের দুঃখমোচনের সংগ্রাম
লেখা ও ছবি : রাজিবুল ইসলাম, ঢাকা প্রকাশ প্রতিনিধি, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
নদীর নাম ‘যমুনা’। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান ত্রয়ী নদীর অন্যতম। ভারতের ব্রক্ষপুত্র নদের প্রধান শাখা। আমাদের দেশে যমুনা ও ব্রক্ষ্মপুত্র দুই-ই আছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী নম্বর ৭৬ হলে কী হবে, প্রমত্তা যমুনা আমাদের অন্যতম জলজ জীবনপ্রবাহ। নদীটির ওপরই আছে ‘বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু’। এই রেল ও সড়ক সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলাদেশের দ্বিতীয় দীর্ঘতম। নদীটির শাখা নদীগুলোও পূর্ণ নদী। এবারের বন্যায় যমুনায় ঢল নেমেছে-বলেছেন বাংলার মানুষ।
প্রায় দুই সপ্তাহ পানি বন্দী হয়ে থেকেছেন বগুড়ার চর ও গ্রামের মানুষরা। গিয়েছেন বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে। সেগুলোই বানভাসিদের আশ্রয়কেন্দ্র। পেয়েছেন সাহায্য, সহযোগিতা। এরপর ফিরেছেন ভিটায়। তাদের সাহায্য করেছেন নানাজনে।
সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়া বাড়ি ইউনিয়নের একটি দুর্গম চর যমুনার। নাম কুরি পাড়া, কাজলা ইউনিয়ন। আছেন এক হাজারের বেশি মানুষ। তারা এবারের বন্যাকবলিত ১শ পরিবার। তাদের সাহায্য করেছে সুগন্ধা প্রপাটি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। সাহায্য করেছেন ও নিয়ে গিয়েছেন নিজেদের ইউনিয়নের চলতি দায়িত্বে চেয়ারম্যান শওকত আলী, পাশের কাজলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী সারিয়াকান্দি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাহাদত জামান, প্রথম আলোর বগুড়া প্রতিনিধি ও বিখ্যাত সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ, বগুড়া ফটোগ্রাফিক ক্লাব (বিপিসি)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী সাঈদ খান নোমান, ধুনট উপজেলার ‘ধুনট ফটোগ্রফিক সোসাইটি (ডিপিসি)’র সাংগঠনিক সম্পাদক নিত্যানন্দ শীল, ঢাকা প্রকাশের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, সিলেট কষি বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটির অন্যতম সদস্য রাজিবুল ইসলাম, বগুড়ার আলোকচিত্রীদের সংগঠনগুলোর সদস্য সুজিত আনোয়ার, জোবায়ের রহমান।
বন্যায় কীভাবে জীবনযাপন করেছেন জানতে গিয়ে ঢাকা প্রকাশ ২৪.কমের সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি তার জন্মস্থান বগুড়ায় ইদ ও বন্যার ছুটিতে গিয়ে এই কাজ করতে গিয়ে কথা বলেছেন গোলাপী বেগমের সঙ্গে।
এই নারী জানালেন কাঁদতে, কাঁদতে, ‘আমার ঘরে ১০টি দিন এক বুক পানি ছিল। আমরা বাড়িতে থাকতে পারিনি। মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেলাম বেড়িবাঁধে বাঁচার জন্য।’
‘সুগন্ধা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট’ তাদের সবাইকে সাহায্য করেছে। দিয়েছে পরিবার প্রতি পযাপ্ত চাল, ডাল, ছোলা, আলু, চিড়ার মতো শুকনো খাবার। সঙ্গে পানিবাহিত রোগের হাত থেকে বাঁচতে ও শরীর ঠিক রাখতে খাওয়ার স্যালাইন।
ফলে খুব খুশি এই মা, ‘অনেক কষ্টের পর আজ কয়ডা চাল, ডাল ইত্যাদি খাবার পেলাম। আমি খুব খুশি হয়েছি। কয়টা দিন ভালো চলতে পারব। তোমরা বেঁচে থাক বাবা।’
তখন চোখে পানি চলে এলো সুগন্ধার হয়ে ত্রাণ বেলানো ত্রাণ ‘বগুড়া ফটোগ্রাফিক ক্লাব (বিপিসি)’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তৌহিদ পারভেজ বিপ্লবের, “বন্যাদুর্গত অসহায় এই নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা ও শিশু-কিশোরকে সুগন্ধার মাধ্যমে সাহায্য বিলিয়ে দিলাম করলাম।’
তিনি জানালেন প্রত্যক্ষ স্মৃতি, ‘চরাঞ্চলের বানভাসী মানুষের দুঃখ অবর্ণনীয়। বন্যার্তদের সহযোগিতায় আমাদের সবার সবসময় এগিয়ে আসা উচিৎ।’
তারা সবাই ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুর্গম চরগুলোতে বড় নৌকা নিয়ে গিয়েছেন। বিকেল পর্যন্ত সহযোগিতা করেছেন।
মানুষের পাশে দুঃখমোচনের জন্য দাঁড়াতে পেরে তারাও খুব খুশি হয়েছেন। এরপর নিজেদের ছবিও তুলেছেন তরুণ সমাজসেবীরা।
কুড়িপাড়াতেই নয়, বগুড়ার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকায় কষ্ট করে গিয়েছেন খ্যাতিমান এই সমাজসেবকরা।
তাদের সঙ্গে সুগন্ধা প্রপাটি ডেভেলপমেন্টের কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও ছিলেন।
বিপিসির সভাপতি তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব জানিয়েছেন তারা শুকনো খাদ্যসামগ্রীগুলো সবখানে বিলিয়েছেন।
হাটবাড়ি চরে ৪শ, চর দলিকায় ১শ, চর ফাজিলপুরে ১শ, শেরপুর ইউনিয়নের দীঘা পাড়া চরে ৫০, নয়া পাড়া চরে ৫০, চর করমজা পাড়ায় ১শ মানুষকে পরিবার হিসেবে তারা সাহায্য করেছেন বলে জানিয়েছেন।
কাজলা ইউনিয়নের অন্য চরগুলো-বেনীপুরে ৫০, চর টেংরাকুড়ায় ২শ দুর্গত মানুষের কাছেও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন তারা।
ওএস।