সাগর পাড়ের বিশ্ববিদ্যালয়
আধুনিক, বিজ্ঞান শিক্ষাকে ছড়ানো, উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি, প্রযুক্তি শিক্ষাকে বাড়ানো, গবেষণার সুবিধা সৃষ্টি, কৃষি ব্যবস্থাপনায় আধুনিকতার ব্যবহার পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে নিতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের নিয়ে লিখেছেন ইমরান হোসেন
বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ। এ অঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক। স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’। জন্ম ২০০০ সালের ৮ জুলাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় পটুয়াখালী কৃষি কলেজের অবকাঠামোতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এখন ২২ বছরের যুবক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মানুসারে সবাই কাজ করছেন আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে প্রাগ্রসর ছাত্র, ছাত্রী গড়ে তুলতে। ফলে দেশ, বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছেন তারা। শুরুতে কৃষি, সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) ও বিবিএ (ব্যবসায় প্রশাসন) তিনটি বিভাগ ছিল। এখন ৮টি অনুষদ-কৃষি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন, মাৎস্যবিজ্ঞান, এনিমেল সায়েন্স অ্যন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নিউট্রেশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স এবং ল এন্ড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। মোট ৫৮টি বিভাগ আছে। ৯টি উচ্চতর ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। ৮৯.৯৭ একর জমিতে তারা। অনার্স বিভাগগুলোতে ৩ হাজার ৬শ ৯১ জন, মাস্টার্সে ৪শ ৫১ জন ও পিএইচডিতে ২৪ জন ছাত্র-ছাত্রী পড়ছেন। ২৫৩ জন অধ্যাপক রয়েছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আছে বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস। নিরাপত্তায় ভবনগুলোতে সংযুক্ত আছে সিসি ক্যামেরা। ৫টি ছাত্র ও ৩টি ছাত্রী হল রয়েছে। ১ শ ৮৩ জন কর্মকর্তা ও ৫শ ২৯ কর্মচারী রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো সেশনজট নেই। এখন উপাচার্য বরেণ্য কৃষি অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. স্বদেশচন্দ্র সামন্ত। বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান খুব ভালো। ছাত্র, ছাত্রীরা পাশ করে ভালো, ভালো জায়গায় চাকরি পাচ্ছে। অন্য বিভাগগুলোর মতো কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, কৃষি সমৃদ্ধি আনতে তাদের অনুষদের শিক্ষকরা ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ও সফল হচ্ছেন। তাদের সবার পড়ানোর মান খুব ভালো। আমাদের আছেন মেধাবী, তরুণ শিক্ষকরা। তাদের পাঠদানও বিশ্ববিদ্যালয়কে সমৃদ্ধ করছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় যেমন মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করছে, পিছিয়ে নেই সহ-শিক্ষা কার্যক্রমেও। ছাত্র-শিক্ষকের অংশগ্রহণে বছরজুড়ে চলে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, অলিম্পিয়াড, বইমেলা, পিঠা উৎসব ইত্যাদি। ‘যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয় জাতীয়, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক দিবসগুলো। ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষকরা নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন খেলাগুলোতে। প্রতিবারই কৃতী শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকসহ অন্য পুরস্কারগুলো লাভ করে। এ আমাদের জন্য গৌরব।’
অধ্যাপকরা জানিয়েছেন, দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ শিক্ষালয় হিসেবে সুনামের সঙ্গে তাদের অগ্রগতি হচ্ছে। হাজার, হাজার প্রাক্তন দেশ-বিদেশে, সরকারী, বেসরকারী, গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত রয়েছেন। নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর লেখাপড়ার আদর্শ স্থান। দুমকি উপজেলা শহরের দৈনন্দিন খরচও অন্যান্য শহরের তুলনায় কম। একাডেমিক ব্যয় অস্বচ্ছল পরিবারের সামর্থ্যের মধ্যে আছে। প্রায় সব শিক্ষার্থীর আবাসন রয়েছে। বরিশাল শহর ও পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে আসা-যাওয়ার জন্য পরিবহন রয়েছে। এখন তারা ডিজিটাল ক্যাম্পাস।
বিশ্বমানের দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি করতে অধ্যাপকরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিভর বিশ্ববিদ্যালয়ে লার্নিং আউটকাম বেইজড কারিকুলাম ও কোর্স তৈরি করছেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও ছাত্র, ছাত্রীদের শেখানোর জন্য আশপাশের এলাকাগুলোর প্রান্তিক কৃষক, মাৎস্যজীবি, গরিব, ভূমিহীনদের সঙ্গে কাজ করেন। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, পড়ালেখায় তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার, তাদের মাধ্যমে মৎস্যজীবীদের উন্নত প্রযুক্তিতে মাছ চাষ, পরিচর্যা ও সংরক্ষণ, খামারিদের গবাদি পশু পালন ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষার্থী ও খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনোভেশন ডিসিমিনেশন সেন্টার (পিআইডিসি) আছে। কৃষক ও যুবকদের প্রশিক্ষণদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য সিএসই, কৃষি ও বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ একত্রে কাজ করে চলছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে ৮৪টি গবেষণা প্রকল্প রয়েছে। আহরিত জ্ঞান দেশ ও দশের উন্নয়নে কাজে লাগছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটির অধীনে দুইটি ১০ তলা আবাসিক হল ও একটি ১০তলা একাডেমিক ভবনও নির্মিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও অবোকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি হবে। পাশের বঙ্গোপসাগরনির্ভর অথনৈতিক কার্যক্রম (ব্লু ইকোনমি) পরিচালনার জন্য পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ‘মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট’ হবে।
এই ক্যাম্পাস দারুণ সুন্দর। প্রকৃতির অপরূপ শোভা ছড়ানো আছে। দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোও বিমোহিত করবে। রয়েছে সারি, সারি নারিকেল গাছ; হরেক রকমের গাছ-গাছালি। তার একটি শেখ হাসিনার নিজ হাতে রোপিত বকুল গাছ। কয়েকটি বড় লেক আছে। ক্যাম্পাসকে করেছে আরো সুন্দর, আকষণীয়। প্রশাসন ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য ও মুর্যাল আছে। ৭ বীরশ্রেষ্ঠের আবক্ষ ভাস্কর্য রয়েছে। ‘জয়বাংলা’ মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিভাস্কর্য। ক্যাম্পাস দশর্নীয় স্থান হিসেবেও খুব জনপ্রিয়। প্রতিদিন দূর-দূরান্তের অনেক পর্যটক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমান। সব উৎসব, আয়োজন আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হয়।
ব্যথা হলো-গবেষনাগার, অ্যাকাডেমি ভবন, বিনোদনের স্থানের সংকট বাড়ছে। সেজন্য বহুতল ভবন ও স্পেস বানাতে হবে। মূল্য ক্যাম্পাস ও হলগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও বাজার আছে। অন্যত্র সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন। শক্তিশালী অ্যালামনাই নেই। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসকক্ষ ও আসবাবের সংকট আছে। বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পটুয়াখালীসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলে তারা রাখছেন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মননশীলতা, আধুনিকতায় দক্ষিণাঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাসের স্বাক্ষী এই বিশ্ববিদ্যালয়।
ওএস।