ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাঘা যতীনের ভাস্কর্য
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের কয়া মহাবিদ্যালয়ে স্থাপিত ব্রিটিশ বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর ঘটনার দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও আজও সংস্কার করা হয়নি। এখনো নাক ও মুখের ভাঙা ক্ষতচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি।
যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী বাঙালি নেতা। তিনি বাঘা যতীন নামেই অধিক সুপরিচিত। ভারতে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। বাঘা যতীন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের প্রধান নেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রতিশ্রুতি অর্জন করেছিলেন।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের নেতা যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৮৭৯ সালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে। খালি হাতে বাঘ মারার কারণে তিনি ‘বাঘা যতীন’ নামে পরিচিত পান।
১৯১৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে ৩৬ বছর বয়সে নিহত হন বিপ্লবী বাঘা যতীন।
জাতির সূর্য সন্তান। অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শক্তি এবং সাহসের প্রেরণা। যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওরফে বাঘা যতীনের মতো একজন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী নেতার তার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার পর দীর্ঘদিন পরেও তা সংস্কার না হওয়ায় সাধারণ মানুষ ও সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সুশীল সমাজের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন কেন্দ্রীয় সদস্য কারশেদ আলম বলেন, বাঘা যতীনের ভাস্কর্য যখন ভাঙা হলো সেই সময় এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করেছিলাম। বাঘা যতীন শুধু জাতীয় সম্পদ নয় তিনি আন্তর্জাতিক সম্পদ। তার বিপ্লবী চেতনা ধারণ করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়েছিল। ব্রিটিশরা ভারত বর্ষ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত কর্তৃক সেই বিপ্লবী নেতার ভাস্কর্য ভাঙার দেড় বছর পেড়িয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত সংস্কার করা হয়নি এটা শুধু দুঃখজনকই নয় বিষয়টা লজ্জার। দ্রুতই বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য সংস্কার করে পূর্বের রূপ ফিরিয়ে দেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বিপ্লবী বাঘা যতীন কুষ্টিয়ার অহংকার, তিনি জাতির একজন অন্যতম সূর্য সন্তান। তিনি আমাদের সব অন্যায় ও অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের শক্তি ও সাহসের প্রেরণা। তার ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার পর দীর্ঘদিন পরেও তা সংস্কার না করায় আমরা অত্যন্ত দুঃখিত ও মর্মাহত। অতিবিলম্ব বাঘা যতীনের এ ভগ্ন ভাস্কর্য সংস্কার করে সে চত্বরকে আরও দৃষ্টিনন্দন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটি জোর দাবি জানাচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মণ্ডল ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বাঘা যতীনের ভাস্কর্য সংস্কারের জন্য একটা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ওই টিমের সদস্যরা আমার কাছে বলেছিল করোনার কারণে তারা ভারত থেকে ভাস্কর্য নির্মাণ শিল্পীদের নিয়ে এসে বাঘা যতীনের ভাস্কর্যের সংস্কার করবে। কিন্তু করোনার কারণে তারা ভারত থেকে তাদের আনতে পারেনি। তারা আমাকে বলেছিল ভাস্কর্যের কাজ যেকেউ করতে পারে না এর জন্য স্পেশাল লোকের প্রয়োজন। এখন যেহেতু করোনা নেই তারা ইচ্ছা করলে এখন তাদের নিয়ে এসে সংস্কার কাজ করাতে পারেন। আমি তাদের আবার এ ব্যাপারে তাগাদা দেব। যাতে করে দ্রুতই ভাস্কর্য সংস্কার করা হয়।
২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতের কোনো এক সময় বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় কয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হারুনর রশিদ বাদী হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আনিসুর রহমান আনিছ, নাসির উদ্দিনের ছেলে সবুজ হোসেন ও বুদ্দিন মণ্ডলের ছেলে হৃদয় হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আনিসুর রহমান আনিছকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করে কুমারখালী উপজেলা যুবলীগ।
এসএন