ঘুরে আসুন কবি নির্মলেন্দু গুণের পৈতৃক বাড়ি
জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণের পৈতৃক বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলাধীন কাশবন গ্ৰামে। এই গ্ৰামে অবস্থিত কবির পৈতৃক বাড়িতে এলে গাঁয়ের প্রকৃতির সবুজ স্নিগ্ধতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। দেখা মিলবে কবির শৈশব কাটানো গ্রামের কিছু খণ্ড চিত্র।
যারা ঘুরতে ভালবাসেন এবং বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখার শখ তারা আসতে পারেন নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় অবস্থিত কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মভূমি কাশবন গ্রামে। কাশবন নামের পেছনেও ছোট্ট একটি গল্প জড়িয়ে আছে, যা কবির লেখা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারি কবির ভাষায়, “আমার একটি ছোট্ট সুন্দর গ্রাম ছিল, তার নামটিও ছিল ভারী সুন্দর “কাশতলা” হয়তো এক সময় কাশফুলের খুব প্রাচুর্য ছিল ওই গ্রামে। আমি কবিত্ব করে, তার নাম পাল্টে রেখেছিলাম কাশবন। ভালোবেসে প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার নাম পাল্টে রাখে, সেই আমার প্রথম কবিতা...।”
গ্রামের বুক ছিঁড়ে চলছে আঁকা-বাঁকা পিচঢালা পথ। পথের দুই পাশ সবুজ ঘাসের চাঁদরে মোড়ানো। রাস্তার পাশে কৃষকের কষ্টে বুনা ফসলের সবুজ মাঠ।
পথে চলতে চলতে রাস্তার পাশে সূর তুলে স্বাগত জানাবে ছোট্ট হাতির প্রতিমূর্তি। রাস্তার পাশেই -"কাশবন বিদ্যানিকেতন"। বিদ্যালয়ের সামনেই রয়েছে কবি নজরুল এবং আইজ্যাক নিউটনের ভাস্কর্য।
কিছু দূর এগিয়ে গেলে কবির বাড়ির মূল ফটক। বাড়ির মূল ভিটায় টিনশেডের পুরাতন বসতঘর। বাড়ির সামনে কবির ঠাকুরদার নামে রয়েছে রামসুন্দর পাঠাগার। বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে সেখানে।
পাঠাগারের সামনে কবির নিজ উদ্যোগে শান বাঁধানো ঘাটসহ খনন করা সুখেন্দু সরোবর এবং পিছন দিকে কামিনী সরোবর নামে দুটি স্বচ্ছ পানির পুকুর রয়েছে। পুকুরপাড়ে গাছের ছায়ায় বসার জন্য রয়েছে পাকা বাধানো বেঞ্চ। সেই বেঞ্চে বসে পরন্ত বিকালে স্নিগ্ধ বাতাস গায়ে মাখা, বাতাসে ঢেউ খেলানো সবুজ ফসলের মাঠের মনোরম দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। বাড়ির আঙিনায় রয়েছে, মাইকেল মধুসূদন ও রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল এবং শহীদ বেদি ।
বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য রয়েছে ‘বীরবরণ মঞ্চ’। বাড়ির মধ্যে রয়েছে কবির দুই মায়ের নামকরণে বীণাপাণি-চারুবালা সংগ্রহশালা, যা মার্বেল পাথর আর পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে তৈরি। সেখানে দেখা মিলবে বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, কবির পুরস্কারের ক্রেস্ট, সনদ, চিঠি, উপহার সামগ্রী, পরিবারের সদস্যদের নানা স্মৃতি, দেশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু ।
দেখা মিলবে কবির ঠাকুর ’দা এবং বাবার নামে সারদা-বাসুদেব চিত্রশালা, যেখানে গ্রামের ছোট ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় শিখছে চিত্র আঁকা। সংগীত চর্চার জন্য রয়েছে ‘শৈলজা’ সংগীত ভবন ।
কবির বাড়িতে কিভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে ৩টি ট্রেন চলাচল করে সরাসরি বারহাট্টায়। হাওর এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, এবং মহুয়া কমিউটর। ইচ্ছে করলে দিনে এসে দিনেই চলে যাওয়া যায় । ট্রেনে করে বারহাট্টা স্টেশনে এসে নামতে হবে। তা ছাড়াও বাসে আসা যায়। বারহাট্টা থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার রিকশা বা অটোতে করে সরাসরি কাশবন কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়িতে বললেই পৌঁছানো যাবে।
এসআইএইচ