পর্যটক বরণে প্রস্তুত দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সিলেট
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ খ্যাত সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ পাহাড়-টিলা, চা-বাগান, দেশের একমাত্র সোয়াম ফরেস্ট, হাওর, বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত। সিলেটকে এজন্যই বলা হয় প্রকৃতিকন্যা। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, প্রকৃতিকন্যা জাফলং, বিছানাকান্দির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি সাদা পাথরের স্তুপ আর দেশের একমাত্র রূপওয়ে স্টেশন পর্যটকদের টেনে আনে বারবার। ঘুরে দেখতে পারেন এই অপরূপ শহর। শহরের নাম সিলেট। নান্দনিক এই সিলেটের আরও এক নাম পূণ্যভূমি। ওলি-আউলিয়া ও অসংখ্য মহাপুরুষের পাদস্পর্শে ধন্য পবিত্র নগরী এই সিলেট। জেলার পর্যটন ও দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে- মালনীছড়া চা-বাগান, হজরত শাহজালাল (র.) দরগাহ শরিফ, ঐতিহাসিক ক্বিন ব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়ি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক ও প্রসিদ্ধ স্থান। সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা-বাগান, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগর। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার প্রায় শতাধিক পর্যটন স্পট পর্যটক বরণে এখন প্রস্তুত। প্রতি বছরের মতো আসছে ঈদেও এসব স্পটে পর্যটক-দর্শনার্থীদের ঢল নামবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মনকে সতেজ করে তুলতে ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোকে সাজানো হয়েছে নানা সাজে। তবে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস এবং বিভিন্ন বাংলোর ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এবারের পর্যটকদের ভিড় থাকবে বেশি। কারণ গেল দু’বছর করোনার প্রভাবে পর্যটকদের পদচারণা ছিল না। এবার অবশ্য আশানুরূপ পর্যটক পাওয়া যাবে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ফলে পর্যটন স্পটগুলোর সবকটি আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট সেজেছে বর্ণিল সাজে। এদিকে পর্যটকদের সুরক্ষা ও পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দঘন করতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন, থানা ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এ ছাড়া প্রতিটি পর্যটন স্পটসমূহে পুলিশি টহল বাড়িয়ে নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
হোটেলগুলোতে অগ্রিম বুকিং
ঈদকে ঘিরে সিলেট শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে পর্যটকেরা অগ্রিম বুকিং করতে শুরু করছেন। ঈদের ছুটিতে হোটেলগুলোতে পর্যটকদের সমাগম ভালো হবে বলে আশা করছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। জেলার হোটেল, মোটেল ও পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২ মে থেকে ৮ মে পর্যন্ত শহরের হোটেলগুলোর অর্ধেকের বেশি কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। এ ছাড়া এখনো পর্যায়ক্রমে অনেকেই বুকিং করছেন। বেশির ভাগ পর্যটকেরাই ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসবেন।
নগরের আম্বরখানা এলাকার ব্রিটানিয়া হোটেলের ব্যবস্থাপক (বিপণন) কাওসার খান বলেন, এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশের বেশি কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। এখনো অনেকে যোগাযোগ করে অগ্রিম বুকিং করছেন। আবার অনেকে টিকিট নিশ্চিত না হওয়ায় একটু সময় নিচ্ছেন। যাঁরা অগ্রিম বুকিং করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি চাকরিজীবী। ঈদের ছুটিতে সব কক্ষই পরিপূর্ণ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিলেটের একটি আবাসিক হোটেলে অগ্রিম বুকিং করেছেন বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা এ কে আজাদ বলেন, এবার ঈদের ছুটি কিছুটা লম্বা। এই সুযোগে পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে সিলেটে ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করে রেখেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে ৪ মে সিলেটে পৌঁছে হোটেলে উঠব।
সিলেট হোটেল-মোটেল রেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুমাত নুরী বলেন, সিলেট শহরকেন্দ্রিক হোটেল-মোটেলগুলোর অবস্থা ভালো। ঈদের ছুটিতে পর্যটকেরা সিলেট ঘুরে দেখার জন্য অগ্রিম বুকিং করে রাখছেন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় এবার হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা গত দুই বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন বলে আশা করছেন তিনি।
প্রস্তুত কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর
সাদা পাথর,পাহাড়, নদী ও ছোট ছোট ছড়া নিয়ে অবস্থিত সিলেটের সীমান্তবর্তী জনপদ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। রয়েছে ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর, উৎমা ছড়া ও তুরং ছড়া পর্যটন কেন্দ্র। পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত পর্যটন কেন্দ্র সাদা পাথরসহ উৎমা ও তুরং ছড়া পর্যটন কেন্দ্র। সিলেটের ‘হোয়াইট স্টোন’ খ্যাত সাদা পাথর দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক বরণে প্রস্তুত রয়েছে হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁসহ সকল পর্যটনমুখী ব্যবসায়ীরা। সাদা পাথরের আশপাশে ভালো মানের হোটেল তেমন না থাকলেও রয়েছে একটি রিসোর্ট ও আবাসিক হোটেল।
সাদা পাথর রিসোর্টের জিএম সাইফুল ইসলাম জানান, ঈদের আগেই ৮০% অগ্রীম বুকিং হয়ে গেছে ঈদ পরবর্তী তিন- চার দিনের জন্য।
তবে একটানা ৯ দিনের ছুটিতে অসখ্য পর্যটকদের আগমন ঘটবে বলে জানান রেস্তোরাঁ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ঈদের লম্বা ছুটিতে ভ্রমন পিপাসুরা যান্ত্রিক শহর এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে একটু ক্লান্তি দুর করতে ছুটে আসবে সবুজে ঘরা পাহাড় ও মেঘালয়ের শীতল পানির ছোয়া পেতে সাদা পাথরে। আর পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
সাদা পাথর পর্যটনে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় সহজেই আসা যায়। কিন্তু উৎমা ছড়া ও তুরং ছড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ ও দূরে হওয়ায় যাতায়াত করা কঠিন। তবে চাইলে ভাড়া চালিত মোটরসাইকেল দিয়ে যাওয়া যায়।
সাদা পাথর পর্যটন নৌকা ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি তাওহিদ আহমদ জানান, সাদা পাথর পর্যটন নৌকা ঘাট ইজারাদার পক্ষ থেকে পর্যটকদের সুবিধার্থে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে প্রায় দেড় শতাধিক নৌকা রয়েছে, যেগুলো পর্যটকদের আনন্দ ভ্রমণে বাহক হিসেবে কাজ করবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল তাই এ বছর ঈদ পরবর্তী সময়ে পর্যটকদের বেশ সমাগম হবে বলে আশা করছেন সাদা পাথর পর্যটন নৌকা ঘাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষ।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং জানান,পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ সকল কিছু বিবেচনা করেই এবার ঈদ পরবর্তী লম্বা ছুটিতে আগত ভ্রমণ পিপাষুদের সুবিধার্থে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ ও বিজিবি’র পাশাপাশি সেচ্ছাসেবক, লাইফগার্ড থাকবে। নৌকার ভাড়া যাতে না বাড়ায় সতর্ক করা হয়েছে। প্রায় ১৫০ টি নৌকা রেডি আছে, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লাল নিশান থাকবে। পর্যটকদের কেউ হয়রানি করলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত কমলগঞ্জ
পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ। সবুজে ঘেরা চা–বাগান দেখতে প্রতিবছরই ঈদের ছুটিতে চায়ের রাজধানী কমলগঞ্জে ভিড় জমান পর্যটকেরা। তবে এবারের চিত্রও ভিন্ন নয়। ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়াতে অনেকেই বেছে নিয়েছেন কমলগঞ্জকে। এর মধ্যে পর্যটন নগরীর শহরের বাইরের হোটেল–রিসোর্টগুলোর ৮০ ভাগ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। মৌলভীবাজার জেলার সর্বাধিক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলায়।
পর্যটন ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনাময় এই উপজেলায় ২০টিরও বেশি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, নয়নাভিরাম মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রভাত, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাহক বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, পদ্ম ছড়া লেক, বণ্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য রাজকান্দি বন, শমসেরনগর বিমানবন্দর, প্রাচীন ঐতিহ্যের বাহক লক্ষীনারায়ন দিঘী, ২০০ বছরের প্রচীন ছয়চিরী দিঘী, শমসেরনগর বাগীছড়া লেক, আলীনগর পদ্মলেক, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসফিল্ড, অপরূপ শোভামন্ডিত উচু নিচু পাহাড়বেস্টিত সারিবদ্ধ চা বাগানসহ বাংলাদেশের বৃহৎ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী মণিপুরী সম্প্রদায়ের নিরাপদ আবাসস্থল এ উপজেলায়। এছাড়া প্রকৃতির পূজারী খাসিয়া নৃ-গোষ্ঠীসহ গারো, সাঁওতাল, মুসলিম মণিপুরী, টিপরা ও গারোদের নিরাপদ আবাসস্থলও রয়েছে এই উপজেলায়। লেক আর পাহাড়ের মিতালী, সাথে ঝর্ণা কমলগঞ্জের এসব প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতিবছর ঈদের টানা ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসে হাজার হাজার পর্যটক।
উপজেলার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জীবনধারা ও সংস্কৃতিসহ প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এ জনপদে অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোর সাথে সদ্য আবিস্কৃত নতুন সংযোজন ফিকল জলধারা যে কোনো পর্যটকের দৃষ্টি কেড়ে নেবে। তাই তো পবিত্র ঈদুল আযহায় এসব আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি কমলগঞ্জের বন্যপ্রাণীর নিরাপদ
আবাসস্থল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে দর্শণীয় ও আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের সাতটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও দশটি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে লাউয়াছড়া অন্যতম। এই বনের পরিচিতি শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় এটি আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি পর্যটন কেন্দ্র। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সুন্দরবনের পরেই লাউয়াছড়ার অবস্থান। চিরহরিৎ এ বনাঞ্চল বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকেরকের নিরাপদ আবাসস্থল। এছাড়াও নানা ধরনের দুর্লভ প্রাণী, কীটপতঙ্গ আর গাছপালার জন্য এ অরণ্য বিখ্যাত।
১৯৯৬ সালে পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত এই বনের প্রায় ১২৫০ হেক্টর এলাকাকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ উপজেলায় পাহাড়ি উঁচুনিচু টিলার উপর সবুজ চা বাগানবেষ্টিত, জাতীয় ফুল দুর্লভ বেগুনি শাপলার আধিপত্য আপনাকে আনন্দের বাড়তি মাত্রা যুক্ত করবে পদ্মকন্যা মাধবপুর লেক। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর চা বাগানে নয়নাভিরাম মনোরম দৃশ্য মাধবপুর লেক ভ্রমণ পিপাষু মানুষের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান ও তার পাশেই পদ্মছড়া লেক। মাধবপুর লেকের দৃশ্য উপভোগ করে বেরিয়ে এসে একই রাস্তায় প্রায় ১০ কি.মি. যাওয়ার পরই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহি হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। চাইলেই ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে রাজকান্দি বন রেঞ্জের কুরমা বনবিট এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন হামহাম জলপ্রপাত। স্থানীয় পাহাড়ি অধিবাসীরা এ জলপ্রপাতের ধ্বনিকে হামহাম বলে। এ বনের ভেতরেই রয়েছে সম্প্রতি আবিস্কৃত ফিকল ঝরনা। বনের কুরমা খাসিয়া পুঞ্জির পাশেই দৃষ্টি নন্দন এ ঝরনার অবস্থান। সেখানে সরাসরি যানবাহন নিয়ে পৌঁছার ব্যবস্থা নেই। বাসে এবং সিএনজি যোগে কুরমা চেকপোস্ট যাওয়ার পর বাকি পথ হেঁটে যেতে হয় হামহাম জলপ্রপাত ও ফিকল ঝরনায়। কুরমা চেকপোস্ট থেকে হামহাম যাওয়ার পথে ত্রিপুরা আদিবাসী পল্লী ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকা তৈলংবাড়ী কলাবন বস্তি পাবেন। হামহাম জলপ্রপাতে ভ্রমণ করতে পুরো একদিনের প্রয়োজন।
এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর সময়ে গড়ে ওঠা একটি বিশালাকার বিমানবন্দর রয়েছে শমশেরনগরে। বর্তমানে এখানে রিক্রুট ট্রেনিং স্কুল করায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত হলেও এ এলাকা সংলগ্ন স্থানেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন একটি বধ্যভূমি। এ উপজেলার আরেকটি আকর্ষণীয় স্পট হচ্ছে ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী দূর্গম পাহাড়ি এলাকা ডবলছড়া খাসিয়াপল্লী। যদি ডবলছড়া খাসিয়াপল্লী যেতে পাহাড়ি উঁচু-নিচু প্রায় ১২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাড়ি দিতে হয়।
তবে পথিমধ্যে শমশেরনগর চা বাগানের দুটি প্রাকৃতিক হ্রদ, একটি গলফ মাঠ ও ক্যামেলিয়া ডানকান হাসপাতাল যে কোনো পর্যটকের নজর কাড়বে। ডবলছড়া খাসিয়া পল্লীতে ‘আড়াইশ’ ফুট উপরের হেডম্যান বা মন্ত্রীর বাংলোটি দেখতে খুবই সুন্দর। এ ছাড়াও ভ্রমণের জন্য রয়েছে- কমলগঞ্জে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের নীরব সাক্ষী বধ্যভূমি, ব্রিটিশদের শোষণের প্রতীক তিলকপুর নীলকুটি, ঘটনাবহুল মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড, মণিপুরী, টিপরা, খাসিয়া, গারোসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর আবাসভূমি।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়াদৌস হাসান বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবসময় সকলের পাশে আছে তবে ঈদকে সামনে রেখে পর্যটকেরা যেন নির্বিঘ্নে ঘুরাফেরা করে বাড়ি ফিরতে পারেন সেই ব্যাপারে মাথায় রেখে কাজ করছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, পর্যটকদের জন্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগীতা থাকবে যাতে নির্বিঘ্নে সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।