বাগানবিলাসে মেতেছে মন
ইংরেজিতে ‘বোগেইনভিলিয়া’। দ্বিপদ নাম ‘Bougainvillea spectabilis’. বাহারি ফুল গাছ। দক্ষিণ আমেরিকায় উৎপত্তি। ফরাসী আবিস্কারক ‘লুই অটেইন ডি বোগেইনভিলিয়া'র নাম অনুসারে তার প্রিয় গাছটির নামটি রাখা হয়েছে।
কান্ডটি চিকন, তবে ফুলের সারি প্রসারিত। মনোমুগ্ধকর সারা দুনিয়াতেই। হলুদ, সাদা, গোলাপী, কমলা, লাল বিভিন্ন রঙের ফুলের মালা সাজায়। তার জন্মভূমি ও আশেপাশের দেশগুলোর আবহাওয়া উষ্ণ বা গরম। এই উষ্ণমন্ডলীয় দেশগুলো, পাশের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলেও পুরো বাড়িটিরই সৌন্দর্য্য বহুগুণে বাড়াতে এই ফুলের জুড়ি নেই। অথচ জন্মলাভ করে তারা লতাজাতীয় গুল্ম হয়ে।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন বিলাসী ও অভিজাতের বাড়িতে ফুলগাছটি প্রথম দেখেছিলেন। রঙের রূপে মুগ্ধ কবিগুরু। তবে ইংরেজি নামটি মনে ধরলো না মোটেও তার। তখন তিনি নিজের কবিমনের মাধুরী মিশিয়ে নাম রাখলেন ‘বাগানবিলাস’। মানে বাগানের বিলাসিতা। বাগানের শোভা।
থাকে সে বাড়ির দ্বারে। অভিজাত ও বিলাসীদের বাড়িতেই তখন ফুলগাছটি দেখা যেত। এখনো তাই।
রঙিন কাগজের মতো গাছটির ফুলগুলো। বিভিন্ন রঙের ফুলগুলো জন্ম দেয় বলে তাকে ফুলের নামে মিলিয়ে ‘কাগজ ফুল’ বা ‘কাগজের ফুল’ও ডাকেন অনেকে।
অনেকে গেটের পাশের ফুলের গাছ হিসেবে ‘গেট ফুল’ বলেন। নানা দেশে গৃহী মানুষের বাড়ির ধারে, প্রবেশদ্বারের পাশে অবহেলায়, কোনোমতে শরীরটি বিছিয়ে বিরাট ফুলের সারি দিয়ে রঙ ছড়িয়ে মন রাঙায়।
শীত-বসন্তের ফুলের শোভা পেরিয়ে এখন গ্রীস্ম এসেছে আমাদের ষড়ঋতুর বাংলাদেশে। দীর্ঘকালের বৃষ্টিহীনতা শুরু হয়েছে এই কালে। শুষ্ক হয়ে উঠেছে প্রকৃতি। আমি সফিকুল আহসান ইমন দেখেছি, প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যে ছাওয়া আমাদের প্রিয়তম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা গিয়েছে গরমের রুক্ষ্মতা। তখনও সে গায়ে ধুলো মেখে ভালোভাবে ফুটেছে। ক্যাম্পাসে গাড়ি, ঘোড়া তো খুব কম। তবে অবশেষে বৃষ্টি বলো সেদিন শুক্রবার। সাংবাদিক হিসেবে মনে রেখেছি ডায়েরিতে টুকে -২২ এপ্রিল। দিনের খাতায় শুক্রবার। কয়েক পশলা ঝরলো।
এই আকাশের কান্নায় কেটেছে প্রকৃতির নির্জীবতা। প্রাণ সঞ্চার হয়েছে গাছগাছালিতে, ফুল পাখির জীবনে। ছুঁয়েছে আমাদের বাগানবিলাসগুলোর গা।
বলে রাখি-এলে, দেখবেন-লেকের পাড় ও ভিসি অধ্যাপক ড. এ. কিউ. এম. মাহবুব স্যারের বাসা, ইংরেজদের হিসেবে ভিসি বাংলো; এলাকা দুটি জুড়ে লালের শোভা ছড়িয়ে চলেছে এখন বাগানবিলাস।
লেকের পাড়ে গেটের মুখে গন্ধহীন ভালোবাসার বর্ণালী ভুবন গড়েছে ও। টকটকে রঙে গোলাপীতে দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে ছাত্র, শিক্ষকের। তারা মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, গল্পে মাতেন খনিকের। তার জীবনের মতোই। আর ভিসি স্যারের বাসার গেটের পাশে পিলারের ধারে জন্মে আছে বাগানবিলাস। রঙের রক্তিমতা এখন তার উজ্জ্বলতর। ফলে ক্যাম্পাসে তার নতুন দর্শনীয়তা হয়েছে, দর্শনীয় স্থানের তালিকায় বাগানবিলাসের নীচ ও আশপাশগুলো রাখতেই হচ্ছে। সেলফি ও ক্যামেরা, কাব্য ও প্রতিভা, আলোচনা-গল্প-তক তার শরীরগুলোকে ছুঁয়ে চলেছে। একজন বলেছেন, ‘স্যারের বাংলা এলাকাটিকেই বদলে গিয়েছে বাগানবিলাস, বাড়ি নয়, ফুলের সারিই হয়েছে আনন্দময়তা। এই অপরূপ শোভা না মেখে কী থাকা যায় কারো? বৃষ্টি পেয়ে দারুণ সজীব গরমের এই ফুল।’
চলে গেলাম তার ধারে ফিচার লেখার প্রয়োজনে। ওমা, অনেকেই আছেন। কেউ ঝরে থাকা সজীব ফুল পরম যত্নে কুড়িয়ে তুলে নিচ্ছেন কোঁচড়ে, কারো পড়ার মেয়েদের ব্যাগে বাগানবিলাস জায়গা নিচ্ছে, আর সেলফির তো কোনো বিরাম নেই। বাগানবিলাস নিজেও একটি সেলফি কত যে হচ্ছে বলে শেষ করতে পারবো না। পথে চলতে ফিরতে আমাদের ক্যাম্পাসের ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, রিকশাওলা মামা-সবার মনে বাসা বাঁধছে ভালোবাসা। ফেসবুকে যাচ্ছে, কারো মনের স্মৃতিকোঠায় ঢুকে পড়ছে অবসরে বেরুবে বলে। ও, এটি আমাদের ভিসি স্যারের বাংলোর সামনের বাগানবিলাস।
ওএস।