রংপুরে সুইসাইড ট্রি ঘিরে নানান রহস্য
রংপুর নগরীর একটি সুইসাইড ট্রি গাছকে ঘিরে জনমনে নানান রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন এটি সুইসাইড ট্রি। এই গাছের কারণে মানুষ আত্মহত্যা করেন। গাছটির জন্ম হয়েছে নগরীর ব্যস্ততম রংপুর কুড়িগ্রাম সড়কের সিটি কলেজের সামনে। গাছে গোল আকৃতির ফল ধরেছে। ফলগুলো দেখতে অনেকটাই মেহগনি ফলের আকৃতি। এই গাছটির কারণে এখন পর্যন্ত কেউ আত্মহত্যা করেছেন-এমন তথ্য জানা যায়নি।
রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমরা ওই গাছের পরিচয় নির্ধারণের জন্য কাজ করছি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এই জাতীয় গাছ সুন্দরবনে রয়েছে। সুইসাইড ট্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এ ধরনের গাছের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। খুব দ্রুতই ওই গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।
গাছ রোপনকারী কবির মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, এ পর্যন্ত ওই গাছে কোনো পাখি কিংবা কোনো প্রাণীকে বসতে দেখিনি। এমনটি পিঁপড়াকেও কখনো ওই গাছের উপরে দেখিনি। নগরীতে গাছের পাশেই চা-দোকানি আবদুল হান্নান জানান, অনেকে এসে এই গাছটিকে সুইসাইড গাছ বলেন। তিনি এই অঙ্গত গাছটি ছোট থেকেই দেখছেন। কখনো জানার কৌতুহল মনে জাগেনি।
এ প্রসঙ্গে কবির মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, রংপুর-কুড়িগ্রাম মহাসড়ক নির্মাণের সময় স্থানীয় গাছটি লাগিয়েছি। গাছটির অবস্থান থেকে কিছুটা দূরে কবির মিয়ার বাড়ি। গাছটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা আমাকে ওই গাছের চারা দিয়ে বলেছিলেন এটি বিদেশি গাছ। গাছটি তুমি রোপণ কর। ওই কর্মকর্তার কথায় গাছ লাগিয়েছি। ওই গাছের বয়স ৩৫/৪০ বছর হবে। এ পর্যন্ত ওই গাছে কোনো পাখি কিংবা কোনো প্রাণীকে বসতে দেখিনি। এমনটি পিঁপড়াকেও কখনো ওই গাছে দেখিনি। তিনি বলেন, অনলাইনে সার্চ দিয়ে জানতে পারি, এ ধরনের গাছকে নাকি সুইসাইড ট্রি বলা হয়। এটি সুইসাইড ট্রি হলে মানুষের ক্ষতি হতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই গাছের কারণে কারও ক্ষতি হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।
রংপুরের ফসল ও উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সুইসাইড ট্রি নামে গাছ আছে। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে গাছটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। ভারতের কেরালায় এর নাম ওথালাঙ্গা মারাম, তামিলনাড়ুতে এর নাম কাট্টু আড়ালি। মাদাগাস্কারে ফামেন্ডনা ট্যাংগেনা নামে পরিচিত। শ্রীলঙ্কায় একে ‘পং-পং’ ‘বিন্ডোরো’ কিংবা ‘নয়ন’ নামে ডাকা হয়। সিংহলিজ ভাষায় এর নাম গন কাদরু। এই গাছটি প্রাকৃতিক ভাবেই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে জন্মায়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে কেরালার উপকূলীয় অঞ্চলেই এই গাছটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। গাছটিতে ‘কার্ডেনোলাইড’ এবং ‘কার্ডিয়া গ্লাইকোসাইড’ নামক বিষাক্ত টক্সিন রয়েছে, যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে হৃদ স্পন্দন বেড়ে যায় এবং শরিলের পেশির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। ফলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন শুরু হয় মানব দেহে। অনেক সময় গাছের সংস্পর্শে এসে অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তির জন্য মানুষের আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
রংপুর বন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, গাছের ছবি পেয়েছি ওই গাছের বিষয়ে আমরা সার্চ করছি। কী প্রজাতির গাছ তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত ওই গাছটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বেগম রোকেয়া কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যপক ও পরিবেশ কর্মি ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেছেন, গাছটি আমি দেখেছি। সুইসাইড ট্রি বিশ্বের অন্যান্য দেশে রয়েছে। তবে এটি সুইসাইড ট্রি কি না বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেছেন, ‘কার্ডেনোলাইড’ এবং ‘কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড’ নামক বিষাক্ত টক্সিন দিয়ে মানব দেহের হার্ডের রোগীর চিকিৎসার কাজে পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ হয় এবং এন্টিভেনাম ঊষধ তৈরী হয়। যদি ‘কার্ডেনোলাইড’ এবং ‘কার্ডিয়াক গ্লাইকোসাইড’ নামক বিষাক্ত টক্সিন মানব দেহে বেশি পরিমানে প্রয়োগ হয় তাহলে তার মৃত্যু নিশ্চিত। তবে এই গাছটি সুইসাইড ট্রি কি না বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া জরুরি।