‘কবিতা’য় জুবায়েদ মোস্তফার ‘বন্ধন’
ছেলেটি খুব ভালো। মেধাবীও বটে। পড়ালেখা করেছেন চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের জিল্লুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এসএসসিতে ভালো ফলাফল করেছেন। তাও আবার বিজ্ঞানে। এরপর পড়েছেন বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এটি জেলাটির অন্যতম সেরা বিদ্যায়তন। কলেজেও তিনি ভালো ফল করেছেন। তারপর উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণা প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়েছেন মেধা ও যোগ্যতায় লড়াই করে। ও বলাই হলো না, নামটি তার জুবায়েদ মোস্তফা। তিনি এসএসসি ও এইচএসসি বিজ্ঞান-২০১৬ এবং দুটি বছর পর।
এখন লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র। দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্যতম নামকরা ও সেরা বিভাগ এটি বরাবর, বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। জুবায়েদ আসলে একজন কবি। ছোটকাল থেকে তার সাহিত্যপ্রীতি আছে। ভালোবাসেন পড়তে। অসাধারণ তার মেধাশক্তি, লেখার প্রতি নিবেদন। এখনো পট করে বলে দিতে পারেন-“আমার প্রথম লেখাটি হলো ‘বন্ধন’। একটি দারুণ কবিতা। বন্ধুরা পড়ে, খুব ভালো বলেছে। শিক্ষকরাও নিয়মিত লিখতে উৎসাহ দিয়েছেন। মা, বাবাও খুব খুশি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অবারিত আলোবাতাস, মুক্ত আবহাওয়া, চারপাশের জীবনঘনিষ্ঠতা, প্রেম ও অপ্রেম তাকে কবিতায় ঠেলে দিয়েছে-লাজুক মুখে জানাতে ভুললেন না জুবায়েদ। তবে লেখাপড়ায় তিনি বরাবরই মনোযোগী বলেছেন গর্বভরে-‘আমি কিন্তু সায়েন্সের ছাত্র।’ ভালোবাসেন বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে, কখনো একা একা হেঁটে বেড়াতে। উদাস দুপুর, বিষন্ন বিকেল, মায়াবী রাত, আলোঝরা ভোর তাকে মন্ত্রের মতো মুগ্ধ করে রাখে। সেসব তিনি রচিত হয় তার কবিতা। কখনো উঠে আসে ভালোবাসার মানুষ, কোনোদিন লিখে চলেন তিনি বেদনাভরা কাব্য। লেখার জন্য পড়েনও দেদার। কী পড়েন? ‘ভালোবাসি কবিতা পড়তে। তাও আবার নামকরা লেখকদের’, বললেন মৃদু হেসে।
অন্যদের মতো কবিতাগুলোকে নিজের খাতায় বন্দী করে রাখেননি। জুবায়েদ মোস্তফা একজন লেখক হিসেবে নাম করেছেন বই প্রকাশ করে। মোট তিনটি কাব্যগ্রন্থ আছে তার। প্রথমটি হলো ‘অগ্নিবীণা’। ২০২০ সালে বেরিয়েছে। করোনাভাইরাসের আক্রমণে কোভিড ১৯ রোগে যখন চরাচর বিপযন্ত, তখন সাহস করে বইটি প্রকাশক খুঁজে দিয়েছেন তিনি। ফলে ভালো চলেছে জানালেন খুশি মনে। নামটি তার রেখেছেন বাংলাদেশের জাতীয় ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের অসামান্য ও ইতিহাস খ্যাত ‘অগ্নিবীণা’র নামে। এরপর এসেছে পাঠকদের নাগালে তার ‘আলো-আঁধারের সন্ধিক্ষণ’। এও কবিতার বই। পরের বইমেলায় আগের বইটি ভালো-কিনে বন্ধুরা, জুনিয়র, সিনিয়র এবং শিক্ষক ও গ্রামের আত্মীয়জনেরা বলার পর দ্রুত বের করেছেন তুমুল উৎসাহে। সেজন্য কষ্ট অবশ্য কম করেননি। মানেও খারাপ রাখেননি। এরপর বলেছেন, ‘খেয়াল করেছেন? আমার বইগুলোর নামগুলো কিন্তু খুব ভালো। এও ভালো চলার অন্যতম কারণ। কাউকে বলি না। আপনারা সাক্ষাৎকার নিতে এসেছেন বলে জানালাম।’ তাতে তার সিনিয়র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ছাত্র সফিকুল আহসান ইমনও অবাক বনে গিয়েছেন। ছেলেটি তো খুব ভালো কবি হবে-মনে, মনে জানিয়েছেন তিনি।
কবি জুবায়েদ মোস্তফার শেষ বইটি এসেছে এবারের বইমেলাতে। নামটি হলো ‘রঙিন ফুলের স্বপ্ন’। এও খুব ভালো বই। অনেকে পড়ে জানিয়েছেন। সেসব কানে এসেছে ইমনেরও। তবেই না তাকে নিয়ে লিখতে ছুটেছেন। কবি বলেছেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসের আড্ডায়, ক্লাসের অবসরে ও নানা আয়োজনে অনেকেই আমার স্বরচিত কবিতা শুনতে চান। পড়ি।’ এই বইটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা বলেছেন ভালো হয়েছে। ফলে ক্যাম্পাসে এখন ‘কবি’ জুবায়েদ মোস্তফা বড় কবি, বেশ নামকরা মানুষ। মেয়েরা যখন দুটি একটি লাইন আওড়ে দেন তার বই থেকে, খুব ভালো লাগে, চমকেও যান। আরো ভালো লিখতে হবে সেই কলাকৌশল শেখান শিক্ষকরা। তাতে তার মান বাড়ে।
এত, এত গল্পে দারুণ একটি খবর তো দেওয়াই হলো না। ‘ভোরের পাখি ও বাংলার প্রকৃতি’ নামে তার একটি কবিতা আছে। সেটি অত্যন্ত উচ্চমানের। এই কবিতাটি কবি জুবায়েদ মোস্তফাকে অনুরোধ করে ছাপিয়েছেন ভারতের কলকাতার একটি সাহিত্য পত্রিকা। ফলে কবি পেয়েছেন ‘কলকাতা মহানগী সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার’। তরুণ কবি হিসেবে এ অনন্য অর্জন।
কবি বলেছেন, ‘আমার কবিতাগুলো মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। মানুষের জীবনের, প্রকৃতির বন্দনা করি। কোনো কবিতাতে কেউ যখন নিজেকে খুঁজে পান, তখন আমার কবি জীবন স্বার্থক হয়।’ পরিবারের মা-বাবা-ভাই-বোনকে তার অনুপ্রেরণা বলে গর্ব করলেন তিনি-‘তারাই আমার সবচেয়ে বড় পাঠক। প্রতিটি কবিতা পড়েন ও খুব ভালো বলেন।’
কবিজীবনের স্বপ্ন? ‘আমি কোনোদিন নিজেকে অন্য কারো সাথে তুলনা করি না। সবসময় নিজের লেখা ও ভুবন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। ফলে নিজেকে আরো পড়ে, ভেবে ও লিখে ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে ভালো লাগে আমার। জীবনের শেষ ক্ষণ পর্যন্ত কবিতা লেখা চলবে।’
ওএস।