এখন আমাদের প্রিয় ভুবন
বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার জমে এখানে, সেখানে, পথের ধারে; বিভাগ, অনুষদের ক্যান্টিনে। টিএসসিতে। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। সে গল্প
আমি সফিকুল আহসান ইমন। পড়ি পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে-‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’-এ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি খুব ভালো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অন্যতম সেরা। অনেকেই জানেন না, বঙ্গবন্ধুর নামে বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয় হলেও একমাত্র আমাদেরটিই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি হিসেবে তার জন্মস্থান গোপালগঞ্জে আছে। আরেকটি হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। সবার মতো আমরাও রোজার দিনে ক্যাম্পাসে ইফতার করি-যারা থাকি হলে, কাজ করেন আমার মতো ক্যাম্পাসে আবার ক্যাম্পাস ছাড়তে, ছাড়তে যেসব আড্ডাবাজের বেলা হয়ে যায়। তবে এখানে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠই আমাদের রোজার সবচেয়ে বড় আনন্দ আয়োজনের কেন্দ্র। ওখানেই ইফতার করি সবাই মিলে। শত, শত বন্ধু-স্বজন। দাওয়াত রইলো। এই মাঠটি নিয়ে বলি, এটি আমাদের খেলার মাঠ। যেকোনো অন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কেন্দ্র। খেলাগুলো হয় বিভাগগুলোর মধ্যে। তার বাদে, প্রতি সন্ধ্যায় অন্যান্য সময়ে, এখন তো বটেই ঘাসের ওপর বসে, শুয়ে আড্ডা, গিটারের গান, খালি গলার সঙ্গীত, প্রেম, গুলতানি, জ্ঞান বিতরণ, পিকনিকও হয়। তবে এখন শুরু থেকে প্রতি দুপুর থেকে আমরা চলে আসি কজনের বা অনেকের দলে এই মাঠে। এখানে-সেখানে কিনে আনা, বান্ধবীদের বানানো ইফতারগুলো সাজানো হতে থাকে। বেলা গড়ায়, সময় আগায়, আমাদের শরীর ক্লান্ত এগুতে চায় না। ফলে মাগরিবের আজানের আগে, আগে সময় থমকে থাকে। আমাদের অপেক্ষার পালা মুয়াজ্জিনের আজানের সুমধুর ধ্বনির জন্য। অনেকেই জানেন, প্রায় সবার অভিজ্ঞতায় আছে, ছাত্র-ছাত্রীরা কোনো কিছু ভাগ না করে খেতে পারেন না। চিরকালের অভাবী মানুষগুলোর যে জীবন, তার সাথে আমাদের প্রায়ই হয় দেখা। ফলে এখানেও তাই। গোল হয়ে, বইয়ের ভাষায় বর্গাকারে ছোট, ছোট কাছাকাছি দলে প্রায় দিনই বসি। আমার কথা বাদ-অনলাইনে লিখতে হয় বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ-খবর রাখতে গিয়ে, সবাইকে জানাতে গিয়ে, নানা অনিয়ম ও অন্যায়ের বিপক্ষে কলম ধরতে, ধরতে দম ফেলার সময় থাকে না কোনো, কোনো দিন। অন্য সময়ও নানা খবরের খোঁজে ছুটতে হয়। তাই সবাই খুব ভালোবাসেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিক হিসেবে এ আমার কাজ, পবিত্র দায়িত্ব। তবে অন্যসময় আসি বন্ধুদের ভুবনে। জুনিয়ররা থাকে, সিনিয়ররাও আসেন। সবাই চেনেন, জানেন। বাকিদের মতো ফ্রি থাকলে কাজ করি দেদার। খবরের কাগজ বা পাতলা ওয়ান টাইমের থালা কিনে আনি। সব বাংলাদেশীর মতো আমি, আমরাও খাই-ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ, জিলাপি মিশিয়ে। দারুণ মজা। কোনো বান্ধবীকে যদি পাই পরিবেশনে, তাহলে তো খুব, খুবই মজা হয়। তারা যদি বানিয়ে আনে হল থেকে, কোনো সিনিয়র বা জুনিয়র যদি দেন-আরো ভালো হয় খেতে। মফস্বল শহরে ফলের আকাল নেই, দামও নেই শহর ঢাকার মতো। ফলে তরমুজ, আনারস, পেয়ারা তো পেটে পড়েই, ভালো, ভালো দেশী ফল খাই জুত করে। আপনারা কী খান? এবার বলি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠনগুলোর প্রাণকেন্দ্র কিন্তু এই আড্ডাগুলো। ফলে তাদের ইফতার আয়োজন হয়। নানা জেলা এবং গোপালগঞ্জের ছেলেমেয়েদের মিলনমেলায় ইফতারের জুড়ি নেই। অপ্রতিদ্বদ্বী তারা এমন আয়োজনে। ইফতার হয় আরো অনেক জায়গাতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে। প্রশাসন ভবনের মাঠে, আমাদের লেকের ধারে, টিলার নীচে, ওপরে, ফুড পয়েন্টে। সেসবের প্রতিটিতে আড্ডা জমে টানা। আসবেন নাকি? এখানেও আমার সাংবাদিকতা। পেট পূজার গল্প হলো না। হায় কপাল! আমার এক বছরের জুনিয়র বিভাগের সাইম রায়হানের কাছ থেকে লেখার জন্য মন্তব্য চাইলাম। খুব ভালো ছাত্র সে। বলে দিলো পাকা-‘ইফতার করতে ক্যাম্পাসে এই মাঠই আমার মতে সেরা ও সবচেয়ে ভালো লাগে। বন্ধুদের নিয়ে খাওয়ার মজাই অন্যরকম, দারুণ। সারা দিন রোজা রেখে সবাই মিলে ইফতার করতে খুব ভালো লাগে।’ তার এক বছরের জুনিয়র পরিসংখ্যান প্রথম বর্ষের রাব্বি বলেছে, ‘ভাইয়া, আপনাকে আমার মতামত নেবার জন্য থ্যাংকস। আমারও খুব ভালো লাগে। বলে বোঝানোর মতো নয়, তারও বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব বাসনাটি আমারও ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রযুক্তিভিত্তিক, বিজ্ঞানের ভুবনে পড়ার সুযোগ পেয়ে নিজেকে কৃতার্থ মনে করছি। এবার বলি, ইন্টারমিডিয়েট থেকেই, ভর্তির আগে তো বটেই- ফেসবুক ও খবরের পাতায় ফিচার অনেক পড়েছি ছাত্র, ছাত্রীরা টিএসসি, ক্যাম্পাসের নানা ক্যাফেটোরিয়াতে, মাঠে ইফতার করেন। আমাদের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সে তুলনায় অনেক ভালো। সেসব আশার দিনের পূর্ণতায় নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হয়।’
ওএস।