বেরাবিতে মোটর সাইকেলে বহিরাগতদের অপকর্ম
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের পূণ্যস্মৃতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)’। আছে তার জন্মস্থান রংপুরে। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও বসবাসের সুবিধা মারাত্নক হুমকিতে সরেজমিন প্রতিবেদনের মাধ্যমে জেনেছেন প্রতিনিধি ইভান চৌধুরী।
ইভান চৌধুরী নিজে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র। জানিয়েছেন, ‘আমাদের রংপুরের এই একমাত্র সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বহিরাগতদের প্রবেশ ও অবস্থান খুব বেড়েছে। তারা বেপরোয়া গতিতে মোটর সাইকেল চালাচ্ছেন। ফলে পথচারী ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকরা আহত হবার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এমনকি সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারেন যে কেউ। এর বাদেও তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে ছিনতাইয়ে লিপ্ত হয়েছেন। তাতে আমাদের জানমালের বিনাশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ছাত্রীদের পড়ালেখা ও জীবনের ক্ষতি করছেন অনেক বহিরাগত। তারা তাদের যখন, তখন যেখানে-সেখানে উত্যক্ত করছেন।’
ইভান জানিয়েছেন, দীঘদিন ধরে বেরোবিতে মোটর সাইকেল নিয়ে বহিরাগতদের প্রবেশ ও তাদের গতিসীমা লংঘনের অভিযোগগুলো করা হয়েছে ছাত্র, ছাত্রীদের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের কাছে। প্রশাসন এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তবে তারা কোনো প্রতিকার করছেন না। তারা যান চলাচলের জন্য স্পিড ব্রেকারসহ নানামুখী উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে সেদিকেও যাচ্ছেন না। ছাত্র, ছাত্রীদের পাশাপাশি আরো অভিযোগ, তারা কোনো বিষয়েই কোনো ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। তাতে এই বাজে যুবকের দলের সাহস বেড়ে চলেছে। তারা আরো অন্যায় করছে।
ছাত্র, ছাত্রীরা জানিয়েছেন, অনেক বহিরাগত মাদক সেবক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা নির্জন এলাকাকে তাদের মাদক নেবার জন্য উপযুক্ত স্থান বলে বেছে নিয়েছে। তারা এখানে মাদক নেয়। কোনো সময় তারাসহ কোনো বহিরাগত কোনো অন্যায় করলে ধরতে গেলে মোটর সাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে চলে যায়। অনেক সময় ভয়, ভীতি দেখায়। এসব কারণে তাদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম কমছে।
বেশ কজন ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, হামেশাই তাদের যেখানে সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে এসে উত্যক্ত করে ও বাজে মন্তব্য করে বহিরাগতরা। এরপর কোনো কোনো সময় তারা ছেলে সহপাঠী বা সিনিয়র, জুনিয়রদের জানালে বা কোনো শিক্ষক প্রতিকারের জন্য এগিয়ে এলে ওরা পালায়। ঝামেলা করে। এর স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
বাংলার ছাত্র কামরুল ইসলাম নয়ন বলেছেন, ‘বহিরাগত মোটর সাইকেল আরোহীদের উচ্চম্বরে হর্ণ বাজানোতে আমাদের টেকা দায়। তাতে পড়ালেখার অনেক ক্ষতি হয়। পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘তারা অবাধে মাদক নিয়ে এসে আমাদের ক্যাম্পাসকে মাদকাসক্তদের আস্তানা বানিয়ে ফেলছে। ওরা কেউ, কেউ মাদক বিক্রি করে। ফলে ছাত্ররা মাদকাসক্ত হয়ে যাচ্ছে। তাতে তাদের জীবন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।’ আরো বলেছেন, ‘সন্ধ্যার পর প্রতিদিন কটি নিদিষ্ট নির্জন স্থানে মাদকাসক্তি হয়। ফলে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে শিক্ষকদের উদ্যোগী হতে হবে।’
‘বিশ্ববিদ্যালয়ে যানবাহন চলাচল নীতিমালা প্রয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে’-জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি এই বিষয়ে বলেছেন, আমাদের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিবহন বাস আছে। শিক্ষকদেরও। এর বাদে অন্য যেসব বাহন আছে, সবগুলোতে স্টিকার ব্যবহার করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে অনেকে তাদের স্টিকারগুলো ইচ্ছে করে, ক্ষমতা দেখাতে ব্যবহার করেন না। ফলে কে বহিরাগত আর কে ক্যাম্পাসের মোটর সাইকেল চালক খুঁজে বের করতে কষ্ট হয়। কোনো, কোনো সময় সমস্যাও হয়। এসব সংকট আছে। কাটিয়ে উঠতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো সনাক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগ নেই।
দিনে, দিনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত মোটর সাইকেল প্রবেশ ও যাতায়াত এবং বেপরোয়া গতি ও অন্যকে সংকটে ফেলার কাজ বেড়ে চলেছে। এই বহিরাগতরা খারাপ-বলেছেন ছাত্র, ছাত্রীরা।
এই বিষয়গুলোতে তিনি কথা বলেছেন অধ্যাপকদের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করে তারাও জানিয়েছেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বা প্রক্টর অফিসের ক্যাম্পাসের ভেতরে যান চলাচল ও প্রবেশের বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট নির্দেশনা এখনো নেই। এটি দুঃখজনক ও বিপদজনক। তাতে তারাও বহিরাগতদের হাতে পরিবার নিয়ে থাকতে গিয়ে সমস্যার মুখে পড়ছেন। ক্লাস করাতে পারেন না শিক্ষকরা। কেননা বাইরে মোটর সাইকেলের উচ্চ শব্দ হয়। ছাত্র, ছাত্রীরাও মনোযোগ দিতে পারেন না। তারা খারাপ পথে চলে যান।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী এই সমস্যাগুলোর সমাধানের বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘এই অভিযোগগুলো সত্য। আমার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানে, বহিরাগত যুবকরা মোটর সাইকেলে এসে আমাদের এখানে অপ্রীতিকর ঘটনাগুলো ঘটিয়ে চলেছে। আমরা অভিযোগও পেয়েছি। এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য প্রক্টরিয়াল বডি নিয়ে আমি প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালাই। কদিন আগে কয়েকজনকে আটক করেছি। মুচলেকা নিয়ে ছেড়েছি। আমরা প্রশাসনের মাধ্যমে শীঘ্রই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে বহিরাগতদের মোটর সাইকেল প্রবেশ ও তাদের আসা নিয়ন্ত্রণ করব। কড়াকড়ি আরোপ করব। বেপরোয়া যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেব।’
ওএস।