চা থেকে ‘টি-কোলা’
চা খাবেন কোকের মতো! একটিতে চিনি আছে, অন্যটিতে নেই। ফলে শরীরে ফ্যাট বা চর্বি জমতে পারবে না কোমল পানীয়গুলোর মতো। ‘চা ‘ থেকে ‘টি-কোলা’ আবিষ্কার করে আমাদের অর্থনীতি বদলে দেওয়ার কাজ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি-টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ এবং তার দুই গবেষক ছাত্র- আল ইমরান জাকারিয়া ও নাবিল নওরোজ বৈশাখ। দারুণ এই আবিষ্কারের কাহিনী লিখেছেন এবং ছবি তুলেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নুরুল ইসলাম রুদ্র
পছন্দের পানীয়? ‘চা’। সকালের নাস্তা শেষে, অফিসের মিটিং বা কাজের মধ্যে অবসর নিতে; বিকালের ক্লান্তি দূর করে একটু সতেজতা শরীরে নিয়ে আসতে চা পান করতে চান প্রায় সবাই। আমাদের মতো ছাত্র, ছাত্রীদের তো চা ছাড়া চলেই না। ক্যাম্পাসের একটি ঘন্টাও চা খান না এমন কোনো ছাত্র বা ছাত্রী কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না বাংলাদেশে। চা’কে তার পিপাসুদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করতে বিদেশে চলছে বিস্তর গবেষণা। তেমনি একটি গবেষেণা করে দেশে প্রথমবারের মতো চা থেকে টি-কোলার (বিশেষ ধরণের কোমল পানীয়) উদ্ভাবন করেছি আমরা।
আমরা তো চায়ের দেশ। ফলে গবেষণায় পিছিয়ে থাকলে চলে? কোনো কিছুর কমতি আছে সিলেটে চা গবেষণায়? আমাদের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তারা মোট তিন গবেষক এই কাজটি করে দেখিয়েছেন। আমাদের ‘ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি’র অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ এর তত্বাবধায়ক ও গবেষক দলটির নেতা। সঙ্গী তার ছাত্র ও দুই গবেষক বিভাগের ছাত্র। একজন মো. আল ইমরান জাকারিয়া আরেকজন নাবিল নওরোজ বৈশাখ। নাবিল গবেষণাটি করেছেন তার থিসিসের অংশ হিসেবে। জাকারিয়া মাস্টার্সে পড়েন বিভাগে। গবেষণায় খুব আগ্রহ তার।
কীভাবে শুরু? কাজে নামলেন? ‘টি-কোলা’ দলের প্রধান অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ বলেছেন, “বাংলাদেশ চা প্রদর্শনী ২০১৮’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত চা ছাড়াও চা থেকে বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী, যেমন- সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট প্রভৃতি এবং খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে টি-কোলা, চায়ের আচার প্রভৃতি উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। এ সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’ তার বক্তব্যের এই নতুন দিকটি ভেবে ছাত্রদের নিয়ে আমি একটি কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস (টি-কোলা) তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হয়েছি এবং অবশেষে আমরা সফল হয়েছি। এই দারুণ গবেষণায় দেশের বেভারেজ সেক্টরে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি।”
অন্যতম গবেষক জাকারিয়া আমাকে বলছেন, ‘এখন স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে অনেকে চা পান করতে চান না। আমরা এই আবিষ্কারের জন্য গবেষণা করে দেখেছি-বিশেষত গ্রীষ্মকালে গরমের মধ্যে প্রায় সবার মধ্যেই চা পানের অনীহা রয়েছে। তাতে ক্ষতিও আছে। আপনি জানেন কী-শরীরের জন্য উপকারী চায়ের উপাদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তাতে অনেকে?’
নাবিল জানিয়েছেন, “শরীর ও মন থেকে গরমের ক্লান্তি দূর করতে অনেকে এই সময়গুলোতে ঝুঁকছেন কোমল পানীয়গুলোর দিকে। এই তথ্যটি অনেকে জানি। তবে এসব কোমল পানীয়র অনেকগুলো মানুষের শরীরে তেমন কোনো উপকার সাধন করে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেও জানি। তারপরও কেন নাচার? তাই চায়ের গুণাগুণ এবং মান ঠিক রেখে বিশেষ কার্বোনেটেড ড্রিংকস তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আমরা আমাদের ‘টি-কোলা’ উদ্ভাবন করেছি। ফলে এখন থেকে প্রচলিত নিয়মেই নয়, বরং কোমল পানীয়ের মাধ্যমে চা পান করতে পারবেন সবাই।”
তাদের গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমদ বলেছেন, ‘আমাদের টি-কোলায় ব্যবহৃত উপাদানগুলো দেশীয় ও সহজলভ্য হওয়ায় তুলনামূলক কম খরচে এই দারুণ পানীয়টি তৈরী করা যাবে। তাতে উৎপাদন খরচ অন্যান্য কোমল পানীয়ের তুলনায় অনেকটা কম হবে বলেও আমি মনে করি।’
ছাত্রদের এজন্য একটি গবেষণা পত্রে তৈরি করতে হয়েছে, বিভাগের গবেষণায়। সেখানে বলা আছে, ‘ব্ল্যাক-টি ও গ্রিন-টি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন গবেষকরা। বাংলাদেশে চলমান কোমল পানীয়গুলোতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকায় অনেকে সেগুলো পান করতে আগ্রহী নন। তাদের কথাও মাথায় রেখে দুই ধরণের কোমল পানীয় তৈরী করেছেন তারা।’
টি-কোলার দুটি ধরণ আছে। একটিতে চিনি থাকবে, অন্যটিতে চিনি থাকবে না। তবে এ দুই ধরণের মধ্যেই সাধারণ চায়ের সকল উপাদান যেমন পলিফেনল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি সব থাকবে। এক একটি পানীয়ের মেয়াদ অন্তত তিন মাস। মেয়াদ আরো বাড়ানো জন্য আরো কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এখন প্রয়োজন উৎপাদন ও বাজারজাত করতে সরকারি, বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
ওএস।