ইতিহাসের প্রথম গবেষণা প্রদর্শনী
ফিচার ডেস্ক
আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কত গল্প। নানা লেখা ছাপানো হয় এখানে, সেখানে। নিয়মিতভাবে আমি জুনায়েদ খান লিখি ঢাকাপ্রকাশে। জ্ঞানের গর্বের খবর যেমন থাকে, তেমনি নানা সমস্যার কথাও লিখতে হয় নিয়মিত। তবে এই খবরটি একেবারেই অন্যরকম। বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আদর্শ। বারবার আমরা খবরের কাগজে, অনলাইনে, টিভিতে দেখি-অধ্যাপকরা, উপাচার্যরা, নামী মানুষরা বলছেন, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় হলো গবেষণার ক্ষেত্র। তবে কোন বিশ্ববিদ্যালয় কতটুকু গবষেণা করে, সেগুলোর কতগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ করে?
এই দারুণ কাজটি করে দেখালো আমাদের প্রিয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আজ ২৪ মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলেছে ছাত্র, ছাত্রী, গবেষক ও সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গবেষণা প্রদর্শনী। চলবে ২৮ মার্চ পযন্ত। এই বিশেষ আয়োজনটি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ও চাকসু (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) ভবনের পাশের খোলা জায়গায়। একে আমরা সবাই চিনি জারুলতলা নামে। আয়োজন করেছে ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি। সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন এমন অসাধারণ আয়োজন করতে পেরে খুব খুশি। তিনি অনেক দিন ধরে এমন একটি গবেষণা উপস্থাপনের আয়োজন করতে চেয়েছিলেন বলে জানালেন। তবে করোনাভাইরাসের আক্রমণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় করতে পারেননি। ড. আবুল হোসেন বলেছেন, ‘আজ থেকে আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগুলো পোস্টারের মাধ্যমে উপস্থাপনের প্রদর্শনী শুরু করলাম। খুব ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’ ছাত্র, ছাত্রীরা উপচে পড়া ভীড় করেছেন এই প্রদর্শনীতে। তারা সবাই অবাক হয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগুলো দেখছেন। নানা অজানা তথ্য জেনে নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন। ঘুরে, ঘুরে তারা বেলা পাঁচটা পর্যন্ত গবেষণাগুলো সম্পকে জানছেন। শিক্ষকরা-নানা বিভাগের এসে তাদের কাজ দেখছেন। গবেষক ছাত্র, ছাত্রীরা ভীড় করে আছেন। ছাত্র, ছাত্রীদের নানা কিছু বলে দিচ্ছেন, বুঝিয়ে দিচ্ছেন অধ্যাপকরা। কোন গবেষণায় কী আছে? কোনটি কীভাবে করা হয়েছে? সবই জানতে পারছেন ছেলেমেয়েরা। জানলে অবাক হবেন-মোট ১শ ৫টি গবেষণা রয়েছে এই বিশেষ প্রদর্শনীতে। করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২শ ৫৭ জন মিলে। আরো বিশেষ ব্যাপার হলো-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রদর্শনীর কোনোটিই এর আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি। অনন্য এই উদ্যোগ ও বিশেষ আয়োজনের আইকিউএসসিকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। জানা গেল, সবচেয়ে বেশি গবেষণা এসেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগ থেকে। তারা মোট ১৭টি গবেষণা জমা দিয়েছেন এই আয়োজনে। অথনীতি দ্বিতীয় হয়েছে ১২টি গবেষণাপত্রে। প্রায় সব বিভাগের গবেষণাই আছে এই আয়োজনে।
একজন গবেষকের সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি সমরেশ্বর সিনহা। জানালেন, ‘আমরা চট্টগ্রাম শহরের গাছের প্রজাতিগুলোর বৈচিত্র্যতা ও এভাবে তাদের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ধারণ ক্ষমতার পার্থক্য নিয়ে গবেষণা করেছি। গবেষণায় স্থান পেয়েছে চট্টগ্রাম শহরের পাঁচটি এলাকার গাছ। সেগুলোর মধ্যে আছে পার্ক, সমাধিস্থল এমনকি সড়ক বিভাজনের গাছগুলোও।’ সমরেশ্বর পড়েন ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়মেন্টাল সায়েন্স অনুষদে। ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবষের ছাত্র। আরেকজন গবেষকের সঙ্গে আলাপ হলো। তিনি আমাদের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান। বলেছেন, তার গবেষণায় আছে চট্টগ্রাম বিভাগের নারীদের দেনমোহর বঞ্চনার কারণ ও প্রতিকার। তবে তাদের অসুবিধা হতে পারে বলে তিনি এর বিস্তারিত মুখে জানাতে রাজি হলেন না। বলেছেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গবেষণার তীর্থভূমি। আমরা অধ্যাপকরা আশা করছি, আমাদের এই আয়োজনের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে গবেষণা ও গবেষণামূলক কাজের প্রতি আগ্রহ অনেক বাড়বে। ফলে গবেষকের দৈন্যতা লাঘব হবে। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ঘটবে।’
অধ্যাপক মনিরুজ্জামান আরো জানিয়েছেন, ‘ছাত্র, ছাত্রীরা ঘুরে দেখার ফলে তাদের মধ্য থেকে আগামী দিনের উজ্জ্বল গবেষক জন্ম লাভ করবেন। তারা এখন অনুপ্রেরণা লাভ করছে।’ স্যার মন খারাপ করলেন, ‘আমাদের দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও গবেষণাখাতের তালিকাতে পিছিয়ে আছে দেশে এবং বিদেশে। এই বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে বিশেষ খাতেও নতুন গবেষকের জন্ম হবে। ফলে আমরা গবেষণা র্যাংকিংসহ সব তালিকাতেই এগিয়ে যাবো অনেক।’
ওএস।