‘আমার খালি বাগানটি আজ ফুলে পূর্ণ হলো’
সোমবার যৌবনের প্রথম দিনে পা দিয়েছিল আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। আমি রায়হান মাহবুব। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনাস ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। অনেক লিখেছি আমার দক্ষিণ-পশ্চিমের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ঘিরে। তবে এই ২১ মার্চ সত্যিই চমকে গিয়েছি।
সবগুলো বিভাগ সেজেছে নিজের মতো করে। প্রতিটি বিভাগে ছাত্রীরা আগের দিন থেকে আলপনা একেছেন ক্লাসরুমের ফ্লোরে। সাজানো হয়েছে দেওয়ালগুলো নানা রঙে, এখানে সেখানে ফুল ফুটে আছে। আর ভোর থেকে সবগুলো বিভাগের ছাত্র, ছাত্রীরা একে, একে চলে এসেছেন প্রধান ফটক পেরিয়ে কুষ্টিয়ার নামকরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিটি বিভাগ তখন থেকে প্রস্তুত হয়েছে তাদের ছাত্র, ছাত্রীদের জন্য।
আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোনো ও প্রচলিত বাংলা, অথনীতি, হিসাববিজ্ঞান, আরবী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ফার্মাসি যেমন আছে, তেমনি আছে নতুন ও চমকপ্রদ বিভাগ-আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবিজ্ঞান, টুরিজম ইত্যাদি। আজ এই প্রতিটি বিভাগে হয়েছে নবীণবরণ। শিক্ষকরা ছাত্র, ছাত্রীদের উপহার দিয়েছেন ফুল, কলম আর ভালোবাসা। বিভিন্ন বিভাগের উদ্যোগে মিষ্টিসহ নানা ধরণের চা খাওয়ানো হয়েছে ছাত্র, ছাত্রীদের। প্রতিটি বিভাগের সামনে শিক্ষা মানুষকে কীভাবে বদলে দেয় সেই চিরন্তন সত্যগুলো উৎকীর্ণ ছিল।
আমাদের ভিসি স্যার অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, প্রক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন প্রায় সবগুলো বিভাগ একে, একে আলাদাভাবে ঘুরে দেখেছেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন শিক্ষকরা। নতুন ছাত্র, ছাত্রীরা তাদের পেয়ে খুব খুশি হয়েছে। তারাও অনেকদিন পরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রাণ দেখে খুব খুশি হয়েছেন। নানা ধরণের জীবন গড়ার পরামর্শ দিয়েছেন, বক্তব্য রেখেছেন তাদের উদ্দেশ্যে। সেগুলো চিরজীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে সবার। এই সময়গুলোর ফাঁকে বাংলাদেশের নানা জেলার ও প্রধানত কুষ্টিয়া এবং আশপাশের জেলাগুলোর ছাত্র, ছাত্রীরা একে, অন্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন।
তারা দলে বা একজন দুজন করে বেড়িয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এখানে, সেখানে বেড়িয়েছেন। গিয়েছেন লেকের পাড়ে, দেখেছেন পাখিদের বাসা। বিভিন্ন শিক্ষকদের দেখে সালাম দিয়েছেন। একে, অন্যে নানা জায়গাতে বসে গল্প করেছেন। বিভাগের বড় ভাই, বোনেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে তাদের উপদেশ দিয়েছেন। শিক্ষকরা বলেছেন, ‘পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে খুব কম ছেলেমেয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারী খরচে পড়ালেখার সুযোগ পায়। এমন মান সবার ভাগ্যে জোটে না।’ ইংরেজিতে ভর্তি হতে পেরে খুব খুশি শারমীন আক্তার। বলেছেন, আমার জীবনের স্বপ্ন পূরণ হলো। ইংরেজিতে পড়তে চেয়েছি বরাবর। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারার খুশি বলার মতো ভাষা আমার নেই। বড় হয়ে দেশ ও দশের কাজ করব।’
ঘুরতে, ঘুরতে আমাদের ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামকে পেয়ে গেলাম। বরাবরের মতো আমার কাছে এগিয়ে এলেন মন্তব্য দিতে, ‘আমার খালি বাগানটি আজ এই ছেলেমেয়েদের পেয়ে ফুলে পূর্ণ হলো। তাদের উচ্চতম জীবনের স্বপ্ন পূরণের দিনগুলোতে আমি তাদের এই আশীবাদ করি, তারা যেন নিজেদের স্বপ্নের সমান বড় হয়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বের কল্যাণে কাজ করে যেতে পারে।’ অনেকে ছবি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব ভাস্কর্যে গিয়ে। খুব সুন্দর। দারুণ খোলামেলা।
ওএস।