পূণ্যভূমিতে পূণ্যবানের জন্মদিন
লেখা ও ছবি : আতোয়ার রহমান
কবি নজরুলের পূণ্যভূমি ময়মনসিংহের ত্রিশাল। আছে ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়’, অনেকেরই জানা। খুব সুন্দর ক্যাম্পাসটি। উন্নতির দিকে চলেছে দারুণ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ পালন করেছি খুব ভালোভাবে। তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত জাতীয় শিশু দিবসও পালন করেছি ওদের সঙ্গে। যারা দিবসে অনেক কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধুর জন্য, চমকে যাবেন খবরে। ভাববেন বসে, অনেক দূরের জেলা বিশ্ববিদ্যালয়টি এত কাজ কীভাবে করলো? দেরি না করে জেনে নেই একে, একে। প্রথমেই নতুন উপাচার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন, অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। বাংলার ছাত্র, ছাত্রীরা সারাবিশ্ব জুড়ে ছড়ানো থাকলেও কৃতবিদ্য অধ্যাপককে চেনেন। অনেক বই করেছেন। আমাদের ‘জাতীয় শিশু দিবস ২০২২’-এ ‘শিশু সমাবেশ’ করেছেন। গিয়েছেন কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে। চালু করেছেন ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’। সবারই আছে, আমাদের থাকবে না কেন? পত্র, পত্রিকা, ছবি, বইতে সাজানো কর্ণারটি ঘুরে দেখেছেন। বলেছেন, তোমাদের জন্য এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম; তার ডাকে বাঙালির আত্মদান-মুক্তিযুদ্ধের তিনশর বেশি বই এনেছি। পড়ে বাংলাদেশকে জানতে পারবে, বঙ্গবন্ধুকে তো বটেই।’ ভিসি স্যার ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল’-এ তার জীবন ও কর্মের ওপর ছবির প্রদশনীর উদ্বোধন করেছেন। আবার থেকেছেন শিশুদের সঙ্গে। আমাদের চারুকলা বিভাগের ছাত্র, শিক্ষকের বিশেষ আর্ট ক্যাম্পটি সকালে শুরু হয়ে বিকেলে প্রদর্শনীতে শেষ হয়েছে। সেখানে তারা সবাই ছিলেন। তারা তাদের ও কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রদর্শনীটি করেছেন। ওরা ছোট হলেও বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ওপর খুব ভালো, ভালো ছবি এঁকেছে। ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চটিতে তখন ছবির মেলা, রঙের ছড়াছড়ি। খুদে আঁকিয়েরা কী যে ভালো ছবি আঁকে! ময়মনসিংহের সবচেয়ে বিখ্যাত পুরুষ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন দেখলে খুব খুশি হতেন। ওরা তখন নানা ধরণের ছবি এঁকেছে বঙ্গবন্ধুর। সবাই মিলে ছবিগুলো দেখেছি মন ভরে। তাদের শিশু দিবসের খাবার উপহার দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। বলাই হয়নি, সারাদিনের কর্মচঞ্চলতার জন্য আমাদের ক্যাম্পাস ভোরে জেগে উঠেছে। কত কষ্ট করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্রলীগের ছেলে, মেয়েরা বলে বোঝানো যাবে না। আগের রাতে ঘুম ছিল না অনেকের। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সকাল ১০টার র্যালি শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে, শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ড. সৌমিত্র শেখর। সারা ক্যাম্পাস ঘুরে শেষ হয়েছে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে। স্মৃতিফলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবার আগে ফুলের তোড়া উপহার দিয়েছেন তিনি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা পরিষদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি (১১-১৬ গ্রেড), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়ন (১৭-২০ গ্রেড), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছেলেমেয়েরাসহ অন্যরা স্মৃতিফলকে মাল্য উপহার দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ১শ ২ বছরে জন্মবার্ষিকী পালন ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২২’র কেক, বেলুন ও পায়রা উড়ানো হয়েছে। আকাশে উড়েছে বেলুন, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে সাদা কবুতর। দেখে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি সবাই। শিশুরা চমকেছে, খুব খুশিও হয়েছে। বারবার জিজ্ঞেস করেছে, কবুতরগুলো কী বেলুনগুলোর চেয়ে ওপরে উঠে যাবে? জবাব দিতে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে, থাকতে চোখ ব্যথা হয়ে গিয়েছে। ওদের বাবা, মা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকরাও চমকে গিয়েছেন, এত ভালো লাগবে এই অনুষ্ঠান! তাদের কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। তারা বাসায় যাননি। শিশুদের খাবার খেয়েছেন, ক্যাম্পাসের অন্য আয়োজনগুলো করেছেন ছেলেমেয়েরা যখন আঁকতে ব্যস্ত। শিক্ষকরা জুমার নামাজের পর শবে বরাতের দিন কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদে শামিল হয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের, শিশু রাসেলের আত্মার শান্তি কামনায়। ঠিক চারটায় ওদের ছবি আঁকার প্রদশনী হতে, হতে শুরু হয়েছে আলোচনা। প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। স্বাধীনতা যুদ্ধটি শুরু করেছেন। আগের ২৩টি বছর লড়েছেন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তার মেয়ে জননেত্রী ও বাংলাদেশের অনেকবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুধামুক্ত, উন্নত, সামাজিক ও উদার দেশ গড়তে রাত, দিন কাজ করছেন। আমরা সেই অভিযাত্রায় কর্মী।’ এসেছেন শিশু দিবসে-‘বঙ্গবন্ধু তার জন্মদিনগুলো শিশুদের নিয়ে পালন করেছেন। তার তো অনেকগুলো ছেলেমেয়ে ছিল। জেলজীবন তাকে সুযোগগুলো বারবার দেয়নি। মোটে ৫৫ বছর বেঁচেছেন। শিশুদের মতো ছিলেন। শিশু অন্ত:প্রাণ মানবতাবাদী একজন রাজনৈতিক নেতা তিনি। খুব সহজ ও সরল জীবনযাপন করেছেন। সহজে মানুষের সঙ্গে মিশতে পারতেন। আমরা জানি, ক্লাসরুমে পড়াই ও বিশ্বাস করি-আজকের শিশুরাই আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক। শিশুদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর চেতনার বীজ রোপনের এই উপযুক্ত সময়। তারাই আমাদের ভবিষ্যত পরিচালনা করবে।’ এসব আলোচনায় ক্লাসরুমের শিক্ষকদের অন্য পরিচয় পেয়েছি। তারা কত লেখাপড়া করেন, ইতিহাস গভীরভাবে আত্মস্থ করেছেন। কোনো তুলনা নেই। অবাক সব কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু ও শিশুদের নিয়ে দিবসের আয়োজক কমিটির সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারী। বঙ্গবন্ধুর সমাজ ভাবনা বলেছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, শিক্ষকদের প্রতি তার শ্রদ্ধা তুলে ধরেছেন অধ্যাপকদের অরাজনৈতিক ও মানবিক সংগঠন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তুহিনুর রহমান, আমাদের বঙ্গবন্ধু-নীল দলের সভাপতি ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধানের বক্তব্যও মনোগ্রাহী ছিল। কর্মকর্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রামিম আল করিম, কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম, কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক মঞ্চে অধ্যাপক ও সবার সামনে কথা বলতে পেরে খুব খুশি। তারা যে মঞ্চে উঠতে পারেন এই প্রথম আমাদের অনেকে জানতে পারল। ছাত্রলীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলাপ করেছেন ভালো। উপস্থাপনা করেছেন রেজিষ্ট্রার অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর।
ওএস।