বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যারিয়ার নিয়ে কাজ করে ‘এসডিসি’
লেখা ও ছবি : আতোয়ার রহমান
আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তাদের মেধায় টিকে ভর্তি হতে হয়। তবে আমরা কেউই জীবনের এই তুমুল সময়ে নিজে, নিজে দক্ষতা অর্জন করতে ও দক্ষ হয়ে উঠতে পারি না। এখন তো বিশ্ব অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এই প্রতিযোগিতাগুলোতে টিকতে ক্লাসরুমের পড়ালেখার বাইরে নানা বিষয়ে পছন্দ অনুসারে দক্ষ হওয়া অনেক জরুরী। তেমনই একটি অসাধারণ কাজ করে চলেছে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশেষ সংগঠন। তারা চার, চারটি বছর ধরে নানা বিষয়ে ছাত্র, ছাত্রীদের ক্যারিয়ার গড়ে দিচ্ছেন। ক্লাবটির নাম হলো-‘স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব-এসডিসি’। ক্লাবের সভাপতি আজিজুল হাকিব পাভেল। বলেছেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের নানা বিষয়ে দক্ষতাগুলোর উন্নয়নের জন্য, তাদের দক্ষতাগুলোতে শান দিতে ও ভবিষ্যতের ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করতে আমরা কাজ করি। আস্তে, আস্তে সারা বাংলাদেশেও ছড়িয়ে যাচ্ছি।’ কী ধরণের কাজ করেন? সভাপতি জানালেন, ‘তাদের কম্পিউটার চালানো শেখানো, টাইপ স্পিড বাড়ানো, ক্যারিয়ারের উপযোগী নানা ধরণের কাজ শেখানো, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে ক্যারিয়ার নির্ভর সেমিনারগুলোর আয়োজন, পেশাজীবিদের নিয়েও কনফারেন্স করা, তাদের মাধ্যমে ক্যারিয়ারগুলোর পরামর্শ বা কাউন্সিলিং করানো, চাকরি পাওয়ায় কর্মশালাগুলোর আয়োজন করি আমরা নিয়মিতভাবে।’ ক্যারিয়ার নিয়ে কাজ করেন বলে ও টানা চার বছর ধরে কাজের সূত্রে এখন এসডিসি বা স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের আছে তিনশর বেশি সদস্য। তারা সবাই যেন মাস্টার্স পাশ করে ভালো চাকরি ও পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন, ভালোভাবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন-সেজন্য কাজের শেষ নেই। চার বছরের গল্পে জানা গেল, এসডিসি আজ পর্যন্ত অনেকগুলো দেশীয় ও কটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে এসেছে ক্যাম্পাসে। ফলে তাদের কাছে চাকরির পরামর্শ পেয়েছেন তারা, সেগুলোতে চাকরি পেতে হলে কী, কী করতে হবে সেগুলোও জানা ও শেখা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতেই অনেক ছাত্র, ছাত্রী শিক্ষানবিশ বা ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে পারবেন। বেতনও পাবেন। সেগুলোতেই তাদের অনেকের চাকরি হয়ে যাবে বলে আশা করছেন সিডিসির সভাপতি আজিজুল হাকিম পাভেল। আরো বলেছেন, ‘এখন দেশ পেরিয়ে আন্তর্জাতিক চাকরিতেও অংশগ্রহণ করতে পারার মতো দক্ষতাগুলো ছাত্র, ছাত্রীদের মধ্যে প্রদান করা আমাদের লক্ষ্য।’
তাদের ক্লাবের সদস্যরা বলেছেন, কেবল দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম ও নানা ধরণের ক্যারিয়ার প্রতিযোগিতাতেই আমরা যাই না, জাতীয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। ‘বিজকেস’ নামের একটি প্রতিযোগিতা শেষ করেছি এই মাসের ৯ মার্চ। সেখানে বাংলাদেশের ৫৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩শ ৭০টি দল অংশ নিয়ে পুরো দেশেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন তারা। সারা ক্যাম্পাসে উৎসবের আয়োজন করেছেন। এই প্রতিযোগিতার সেরা দল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের ‘গেম প্ল্যান’, রাজশাহী এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিলে জয় করেছে তিন লাখ টাকারও বেশি। এই টাকা তাদের জন্যও অনেক। তার আগে তারা সারা দেশের ছাত্র, ছাত্রীদের অংশগ্রহণে আয়োজন করেছিলেন ‘সফট স্কিল ফেস্ট-২০১৯’। সেই আয়োজনও সাড়া ফেলেছে পুরো দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রী ও শিক্ষকদের মাঝে।
এত কাজ করতে কোনো ক্লান্তি নেই ক্লাবের কমিটির কারো। বরং তাদের খুব ভালো লাগে বাংলাদেশের ছাত্র, ছাত্রীদের গড়ে দিতে আগামীর জন্য। স্কিল ডেভেলপমেন্ট ক্লাব অনন্য একটি নিয়মিত কাজ করে চলেছে। সেটি হলো ‘ভ্যাট কুইজ কম্পিটিশন’। এই আয়োজনে সরকারী সাহায্য লাভ করেন তারা। এটিও বড় আয়োজন, ছেলেমেয়েরা পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেদের উন্নতিগুলো করতে পারছেন। নানা ধরণের জ্ঞান লাভ হচ্ছে ভবিষ্যত পেশাজীবনের জন্য। তার বাদেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও আয়োজনগুলো-ক্যারিয়ার বিষয়ে, সেগুলোতে ছাত্র, ছাত্রীদের নিয়ে গিয়ে; তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়েরই হোন না কেন, তাকে যোগাযোগ ও অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে সাহায্য করে চলেছেন তারা।
এই গল্পগুলো করতে, করতে এসডিসির সভাপতি আজিজুল হাকিব পাভেল বললেন, ‘আমরা জানি ভালো চাকরি পেতে হলে পড়ালেখার পাশাপাশি নানা ধরণের দক্ষতা ও যোগ্যতা লাভ করতে হয় ছাত্র, ছাত্রীদের। এগুলো বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় তাদের জন্য থাকে না। এই কাজগুলোতে সাহায্য করি আমরা। এর বাদেও তারা যখন চাকরির জন্য নিয়োগ কতাদের সামনে হাজির হবেন, তখন তাদের কীভাবে নিজেদের উপস্থাপন করতে হবে, সেগুলোও শেখাই, জানাই। চাকরির বাজারে ভালো করতে তাদের জন্য আমাদের নানা ধরণের ইভেন্ট আছে, সেগুলোর আয়োজন করা হয় নিয়মিত। সবকিছুই লক্ষ্য, পেশাদার হয়ে গড়ে উঠতে পারেন। ব্যবসা ও চাকরির বাজারে তারা যেন ভালো করতে পারেন।’
তাদের শ্লোগান হলো-‘টাইম টু মুভ’। কাজ চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ছাত্রীদের ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য হবে এমন দক্ষতাগুলোর অর্জন ও বিকাশ ঘটানো। শিক্ষকরা সব সময়ে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের অনেক সাহায্য করে চলেছেন জানাতে ভুললেন না এসডিসি’র বন্ধুরা।
ওএস।