মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত কড়াপুর মিঞা বাড়ি মসজিদ
বরিশালে মুঘল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বাংলাদেশের প্রাচীন আহমাদ আলী মিঞার মসজিদ। এর প্রচলিত নাম ‘কড়াপুর মিঞা বাড়ি মসজিদ’।
নগরীর কড়াপুর ইউনিয়নের রায়পাশা গ্রামে অবস্থিত সুপ্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনিন্দ্য সুন্দর নিদর্শন এ মসজিদ। অপরূপ কারুকার্যখচিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি রুচি ও স্থাপত্য শিল্পের সৌন্দর্যবর্ধনে সুউচ্চ মানসিকতার পরিচয় বহন করছে।
নগরীর হাতেম আলী কলেজের চৌমাথা থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মসজিদটি শহর থেকে পশ্চিমদিকে বরিশাল-কড়াপুর সড়ক সংলগ্ন মিঞাবাড়িতে কালের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।
নির্মাণের ইতিহাস সম্পর্কে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হায়াত মাহমুদ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে প্রিন্স অব ওয়েলস দ্বীপে ১৬ বছরের জন্য নির্বাসিত হন এবং তার উম্মদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর দেশে ফিরে তিনি দুটি দীঘি এবং দোতলা এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের স্থাপত্যরীতিতে পুরান ঢাকায় অবস্থিত শায়েস্তা খানের নির্মিত কার্তালাব খান মসজিদের অনুকরণ দৃশ্যমান।
স্থানীয় মিঞা বাড়ির বংশের সূত্র মতে- মিঞারা মুলত খাঁন বংশের লোক ছিলেন। ব্রিটিশ শাসক তাদের আরও একটি পদবি দিয়েছিল- ‘মিঞা’। সেই থেকে তারা মিঞা বংশ হিসেবেই পরিচিত।
তবে মসজিদটির সঠিক নির্মাণকাল নিয়ে যথেষ্ট জটিলতা দেখা যায়। কথিত আছে, বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত হয় প্রাচীন ইতিহাসের একটি অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন এ কড়াপুর মিঞা বাড়ি মসজিদ। আবার কেউ কেউ বলে, প্রায় ৪০০ বছর আগে নির্মাণ করা হয় এ প্রাচীন মসজিদ। এদিকে উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এটি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত।
দোতলা এ মসজিদের নিচে রয়েছে ছয়টি দরজাবিশিষ্ট আবাসন ব্যবস্থা। সেখানে মাদরাসার ছাত্রদের জন্য পরিচ্ছন্ন আবাসন ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দোতলাকে কেন্দ্র করেই মূল মসজিদের সৌন্দর্য্য বেড়েছে। দোতলায় মসজিদজুড়ে রয়েছে চমৎকার নকশার কাজ। মূল মসজিদের রয়েছে তিনটি দরজা। মসজিদের চারপাশে পিলারের উপর নির্মিত হয়েছে আটটি বড় মিনার। বড় মিনারগুলোর মাঝে রয়েছে ছোট ছোট ১২টি মিনার। আবার ছোট মিনারগুলোর মাঝে স্থান সুন্দর কারুকার্যময় নকশায় অলঙ্কৃত।
এ ছাড়া মসজিদের মাঝখানে রয়েছে বড় তিনটি গম্বুজ। মাঝের গম্বুজটি সবচেয়ে বড়। যার ভেতরের অংশেও রয়েছে সুন্দর নকশা। মিঞাবাড়ি মসজিদের পূর্ব পাশে কয়েক একর নিয়ে বিশাল একটি দীঘিও রয়েছে, যা মসজিদের সৌন্দর্য্যকে আরও নয়নাভিরাম করে তুলেছে।
মসজিদের দোতলায় ওঠার জন্য রয়েছে আলীশান সিঁড়ি। সিঁড়ির ঠিক নিচেই রয়েছে দুটি কবর; যার একটি মসজিদের নির্মাতা হায়াত মাহমুদের এবং অন্যটি জারিফ মাহমুদের। সিঁড়ির গোড়ায় রাখা হয়েছে হেলান দিয়ে বসার সুব্যবস্থাও।
স্থানীয়রা জানায়, মিঞা বাড়ি মসজিদ ঘুরে গেছেন আমেরিকার রাষ্ট্রদূত ও ভারতের রাষ্ট্রদূত।
ছুটির কোনো বিকেলে কিংবা কাজের অবসরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ঐতিহ্যের ধারক, দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি।
মিঞা বংশের উত্তরাধিকারী মিজানুর রহমান বাবুল মিঞা জানান, এ মসজিদে সরকারি কোনো সহযোগিতা নেওয়া হয় না। সম্পূর্ণ নিজেদের অর্থায়নেই মসজিদ ও মাদ্রাসা পরিচালনা করা হয়। এ আহমাদ আলী মিঞার মসজিদ ও মাদ্রাসাসহ সব স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বাংলাদেশ ওয়াকফ প্রশাসনের তালিকা ভুক্ত রয়েছে।
এসএন